একপাশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যপাশে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দুটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। আর দুটি বিদ্যালয়ের মাঝখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কারণ, এই রাস্তা দিয়ে টুঙ্গিপাড়া, ডুমুরিয়া, তারাইল, কোটালীপাড়া আসা-যাওয়া করে প্রতিদিন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। উৎপাদিত কৃষিপণ্য, মৎস্যসম্পদ এ পথ দিয়েই পরিবহন করা হয়। কিন্তু ৬ মাস আগে থেকে রাস্তার পিচ উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় যেন ভোগান্তির শেষ নেই চলাচলকারীদের।
এমন অবস্থা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বালাডাঙ্গা এস এম মুসা মাধ্যমিক ও বালাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তাটির ১০০ মিটারজুড়ে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর রাস্তাটি সংস্কারের জন্য চিঠি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় খানাখন্দ আর পানি উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চালক, পথচারীসহ কয়েক হাজার মানুষ। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি শুরুর বেশ আগেই রাস্তাটির একপাশে ভাঙতে শুরু করে। ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় শত শত যানবাহন চলাচল করায় রাস্তার পিচ উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। আর অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ১০০ মিটার রাস্তার বেশির ভাগই খানাখন্দে ভরে গেছে। ফলে ওই রাস্তাটুকু চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কাদা-পানিতে শিক্ষার্থীদের জামাকাপড়, বই-খাতা নষ্টসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে আহত হয়। আর যাত্রী নিয়ে চলাচলের সময় অনেক গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবুও ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে যানবাহন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চালক, পথচারীসহ ২০টি গ্রামের মানুষ।
বালাডাঙ্গা এস এম মুসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝুমুর ইসলাম ও রিয়াদ বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে আসার একমাত্র রাস্তা এটি। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙতে ভাঙতে বেশির ভাগ জায়গা খানায় ভরে গেছে। বৃষ্টির সময় আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী খানায় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। অনেকের বই-খাতা পানিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে। তাই আমরা এইটুকু রাস্তার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে চাই।
বালাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রকৃতি জয়ধর, রিয়া, আবদুল্লাহ বলেন, বৃষ্টি হলে আমাদের স্কুলে আসার পথটিতে হাঁটুজল থাকে। অনেক সময় পোশাক, বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনেকে ক্লাস না করেই বাড়িতে চলে যায়। আবার কয়েক দিন আগে আমাদের এক সহপাঠী সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। তাই আমাদের এই রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করতে হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গৌরী মজুমদার বলেন, ‘প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। প্রায় সময়ই গাড়ি দুর্ঘটনা হয় এ রাস্তায়। কিন্তু বিকল্প কোনো পথ না থাকায় ভোগাস্তি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। দুর্ভোগের কথা জানিয়ে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য উপজেলা এলজিইডি অফিসে চিঠি দিলেও কোনো কাজ হয়নি।
দাড়িয়ারকুল গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়ায় মাছ বিক্রি করতে প্রতিদিনই আমাদের এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। তবে রাস্তার সমস্যার কারণে অনেক সময় মাছসহ গাড়ি পড়ে যায়। বৃষ্টিতে রাস্তাটি চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপরও শত ভোগান্তি নিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। তাই সরকারের কাছে দ্রুত এ রাস্তা মেরামত করার দাবি জানাই।
টুঙ্গিপাড়া এলজিইডির প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, চিঠি পাওয়ার পর রাস্তাটি আমরা পরিদর্শন করে মাপ নিয়েছি। রাস্তাটির ১০০ মিটার অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। আশা করছি, বৃষ্টি কমলেই শিক্ষার্থী ও জনগণের ভোগান্তি দূর করতে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন