সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলমান বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি আগামী শনিবার পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছে সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে শনিবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে দাবি পূরণ না হলে আগামী রোববার নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের নেতারা। ফলে গণপরিবহনের যাত্রী ও চালকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এদিকে ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলো ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করার গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গতকাল রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে আন্দোলন স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্বকারী ও আলগী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. পলাশ মিয়া বলেন, ‘সবার সঙ্গে কথা বলে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। সমাধান না হলে আবারও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।’
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে ভাঙ্গা ঈদগাহ জামে মসজিদ চত্বরে সর্বদলীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা। এ সময় উপজেলা বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিসের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সহিংসতাকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা বলেন, ‘যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় না, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।’
গতকাল মঙ্গলবার পূর্বঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির শেষ দিন ছিল। সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে দুই ঘণ্টা অবরোধ করলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সহিংসতাকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা জানান, ভাঙ্গাবাসীর দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর আদালতে একটি রিটের শুনানি হবে। সে পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে।
সহিংসতার পর ২৪ ঘণ্টায়ও কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শামসুল বলেন, মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
হাইকোর্টের রুল জারি
ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলো ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করার গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, আদালত রুল দিয়েছেন। সংবিধানের ১২৫ (ক) অনুচ্ছেদ কেন সাংবিধানিক পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, নির্বাচনি আইনের ৭ নম্বর ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং সংশ্লিষ্ট গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে নাÑ সে বিষয়ে আদালত রুল জারি করেছেন। তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, ভাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দাদের পক্ষে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলাল গেজেট বাতিল চেয়ে ইসিতে আইনি নোটিশ পাঠান। নির্ধারিত সময়ে সাড়া না পেয়ে পরে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলো ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়।