‘বিগত সরকারের সময়ে নখদন্তহীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উপহার দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেই রকম নখদন্ত ও মেরুদ-হীন মানবাধিকার কমিশন চাই না। এতে সবপক্ষের কথা ও অধিকার প্রতিফলিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
দেবপ্রিয় বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে মানবাধিকার কমিশন গঠনে ড. ফখরুউদ্দিন সরকারের সময় আইনের খসড়া তৈরি হয়। ওই আইনের ভিত্তিতে পরবর্তী সরকারের সময় কমিশন গঠিত হয়। নতুন সরকার আইনটি অনুমোদন দেন। ওই আইনের অধীনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নিয়োগ হয়।
তিনি বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধিক চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর কমিশন বাতিল করা হয়। এরপর প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নাই। অথচ সরকার এ সময়ে অন্যান্য কমিশন গঠন করেছেন। ওই সময়ে কমিশন গঠিত না হলেও সরকার মানবাধিকার বিষয়ে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন। সেই আইনের খসড়া নিয়ে এই আলোচনা।
দেবপ্রিয় বলেন, বিগত সময়ে কমিশনের ইতিহাস বিবেচনায় নিলে প্রশ্ন থেকে যায়Ñ দেশের মানবাধিকারের কি কোনো উন্নতি হয়েছে? অন্যদিকে নতুন খসড়া আইনে নতুনত্ব কী আছে, যার ফলে পিছিয়ে পড়া মানুষের মানবাধিকারের বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে? আমার উপলব্ধি হলো, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আমাদের বিগত সময়ে নখদন্তহীন মানবাধিকার কমিশন উপহার দেওয়া হয়েছে যে, কোনো কামড় দিতে পারে না। যার কোনো দক্ষতা নেই কিংবা কার্যক্ষমতা নেই। এ রকম মানবাধিকার কমিশন আমাদের দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার প্রথম চাওয়া হলো, আমরা এরূপ নখদন্তহীন মানবাধিকার কমিশন চাই না। যারা কার্যকরভাবে মানবাধিকার রক্ষা করতে পারবে সেইরকম কমিশন চাই। আরেকটি হলো নখদন্তহীন মানবাধিকার কমিশনের মাথায় একজন মেরুদ-হীন ভালো মানুষকে বসিয়ে দেবেন না। সেই মানুষ কোনো দিন অন্য কোনো মানুষের জন্য মেরুদ- শক্ত করে কাজ করতে পারবে না। এ জন্য মেরুদ-হীন ভালো মানুষের প্রয়োজন নেই। আমাদের সৎ, নীতিবান ও সাহস করে সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে পারে, সেই মানুষ প্রয়োজন। সেই রকম মানুষ যাতে কমিশনে দেওয়া হয়Ñ বিগত সময়ে নখদন্তহীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উপহার দেওয়া হয়েছেÑ আমরা ওইরূপ নখদন্তহীন ও মেরুদ-হীন মানবাধিকার কমিশন চাই না।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া খসড়া আইন নিয়ে আলোচনায় বলেন, বিগত সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ইস্যু কাজ করে নাই। অন্যান্য ক্ষেত্রে সফল হয়। কেন হয় না, সেটা বিবেচনা করা উচিত। খসড়া আইনেও বিষয়টি উপেক্ষিত মনে হয়েছে। নতুন আইন দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্বৈত নাগরিক কমিশনে নিয়োগে বাধা নেই। এটা কেন করা হয়েছে জানি না। তবে থাকা উচিত ছিল। কোনো আমলাকে এখানে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, কিন্তু এখানে সেই সুযোগ রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন