পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কারাকের দর্শখেলের শাহ সেলিম থানার কাছে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে ওই যুবক নিহত হন। অভিযানে মোট ১৭ জনকে হত্যা করে সেনাবাহিনী। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম সামা টিভি গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পাকিস্তানি সেনারা যে ১৭ জনকে হত্যা করেছেন, তার মধ্যে একজন বাংলাদেশি রয়েছেন। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র, টাকা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। আফগান সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার মাধ্যমে সেখানে বিদেশিদের উপস্থিতির বিষয়টি সামনে এসেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এর আগেও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আরও দুই থেকে তিন বাংলাদেশি নিহত হন। তারা ধর্মীয় শিক্ষা নেওয়ার অজুহাত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও দাবি করেছে তারা।
পাকিস্তান তেহরিক ই তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত বাংলাদেশি যুবকের নাম ফয়সাল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর থানার কালিকাপুর ইউনিয়নে ছোট দুধখালী গ্রামে। ফয়সালের বয়স ২১ বছর বলে জানিয়েছে তার পরিবার। ফয়সালের বড় ভাই আরমান হোসেন অস্ত্রহাতে পোজ দেওয়া একটি ছবি দেখে নিশ্চিত করেন যে, ইনি তার ভাই। আরমান দ্য ডিসেন্টকে জানান, ফয়সাল হিজামা সেন্টারে চাকরির জন্য দুবাই যাচ্ছেন জানিয়ে ২০২৪ এর মার্চে দেশ ছাড়েন। গত কোরবানির ঈদের আগে তার সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয় পরিবারের। তারপর থেকে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফয়সালের বাবা একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং বড় ভাই আরমান দারাজের ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দা সূত্রে তারা জানতে পারেন দুর্গম ওই অঞ্চলে মোল্লা নাজির গ্রুপের সদস্যরা রয়েছেন। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইউনিট, স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি) এবং কাউন্টার টেররিজম বিভাগের (সিটিডি) সদস্যরা সেখানে যৌথ অভিযান চালান।
পাকিস্তানভিত্তিক সাংবাদিক জাওয়াদ ইউসুফজাই টিটিপির সদস্যদের নিহত হওয়ার ঘটনাস্থলের কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি জানান, পাকিস্তানের কারাক অঞ্চলে নিহতদের মধ্যে একজনের লাশ থেকে বাংলাদেশি আইডি কার্ড, টাকা এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় টিটিপির ৫৪ জন সদস্যের সাথে আহমেদ জোবায়ের নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছিলেন।
দ্য ডিসেন্টের গত মে মাসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে অন্তত ৪ বাংলাদেশি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনার পর পাকিস্তানের টিটিপির সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে অন্তত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন