ঋতু পরিবর্তন সাধারণ এবং স্বাভাবিক বিষয়। তবে আমাদের জন্য হঠাৎ এই পরিবর্তন অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ঋতু পরিবর্তন মানে হঠাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাস। তাই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। শরৎকালে হঠাৎ বৃষ্টি, হঠাৎ রোদ। এ সময় মৌসুমি পরিবর্তন, বৃষ্টিজনিত স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এবং ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে শিশুসহ বড়দের নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এ সময় সঠিক যতœ না নিলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
সর্দি, কাশি ও ভাইরাল জ্বর
শরৎকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সর্দি কাশি ও জ¦র হওয়ার প্রকোপ বাড়ে। এটি সাধারণত ভাইরাস ঘটিত রোগ যা হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। শরৎকালে ভাইরাল জ¦রের পাশাপাশি মশাবাহিত ডেঙ্গু জ¦রও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ সময় রোগীকে প্রচুর পানি ও তরল খাবার যেমন শরবত, ডাবের পানি, স্যুপ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- লেবু, পেয়ারা, আমলকী, কমলালেবু ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড়ে, জলাশয়ে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
পেটের পীড়া: শরৎকালে বৃষ্টির কারণে দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে পেটের পীড়া যেমন ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা, পেট ফাঁপা ও গ্যাস, ফুড পয়জনিং মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পেটের পীড়া সমস্যা প্রতিরোধে চিকেন স্যুপ, সবজি স্যুপ, টকদই, কলা, আপেল গ্রহণ করলে পেটের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি, সহজপাচ্য খাবার যেমন- নরম ভাত, ডাল, সবজি খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ভাতের মাড়, চিনি ছাড়া ফলের রস, তরল খাবার, খাওয়াতে হবে যাতে সহজে হজম হয় এবং শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। এ সময় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, বাইরের প্রসেস ফুড, জাঙ্ক ফুড, ঝালযুক্ত খাবার গ্রহণ করা এড়িয়ে চলবেন।
অ্যালার্জি: শরৎ এ অ্যালার্জির উপদ্রব বেড়ে যায়। লালচে ত্বক, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, চুলকানি এ সময় দেখা দেয়। এজন্য যেসব খাবারে আপনার অ্যালার্জি বাড়ে সেগুলো চিহ্নিত করে যেমন- মিষ্টিকুমড়া, গরুর মাংস, ডিম, চিংড়ি মাছ, ডাল ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেবেন। পাশাপাশি যেসব বিষয় অ্যালার্জির উপদ্রব হয় যেমন- পরাগ রেণু, বিছানা ছাদর ময়লা, কার্পেট, ধূমপান, সুগন্ধিযুক্ত ক্লিনার, বডিওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না। অ্যালার্জি প্রতিরোধ করতে আরও নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার ও এনজাইম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন পেঁপে, আনারস খেতে পারেন।
হাঁপানি ও ব্রঙ্ক্রাইটিস: শরৎকালে হাঁপানি ও বঙ্ক্রাইটিসের মতো সমস্যা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এ সময় অ্যালার্জির অ্যাজমা, শ^াসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ সময় মৌসুমি ফলমূল ও শাক-সবজি গ্রহণ করতে বেশি করে গ্রহণ করতে হবে যেমন, গাজর, পেঁপে, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখুন, বিশুদ্ধ বায়ুর সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করুন। ঘরের ভেতরে যেন আলো, বাতাস প্রবেশ করে এমন ঘরে থাকার চেষ্টা করুন। ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে।
বাত রোগ: বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে এ সময়। যাতের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা আছে তারা নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করবেন। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করবেন। যেমন, কলা, বাদাম, ছোলা, ব্রাউন চালের ভাত ইত্যাদি গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
মৌসুমি বিষণœতা: শরৎকালে দিনের আলো কমে যাওয়ার কারণে অনেকের মধ্যে বিষণœতা দেখা দিতে পারে। এজন্য ভিটামিন ডিসমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, মাশরুম, দুগ্ধজাত খাবার, সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড় নিয়মিত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৫-২০ মিনিট গায়ে রোদ লাগাবেন। যারা বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভুগছেন তারা প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে খাবেন।
টিপস
- এ সময় কাঁচাখাবার, অর্ধসিদ্ধ খাবার থেকে বিরত থাকুন।
- ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখুন। স্যাঁতসেঁতে জায়গা শুকনা রাখার চেষ্টা করুন।
- সকল প্রকার বাইরের খাবার যেমন- ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত খাবার, জাঙ্কফুড গ্রহণ করবেন না।
- ধূমপান গ্রহণ করবেন না।
- সবসময় হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাইরে বের হলে মাস্ক, রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
- হাতের নখ পরিষ্কার রাখুন।
- বিশুদ্ধ পানি গ্রহণ করুন।
- সবসময় হাইড্রেট থাকার চেষ্টা করুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
লিনা আকতার
পুষ্টিবিদ
রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল
অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন