দেশের রক ধারার জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেলের কথা এলেই আলোচনায় আসে তাদের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘দুঃখ বিলাস’। গানটি লেখা হয়েছিল ব্যান্ডের ভোকাল জর্জ লিংকন ডি’কস্তার শৈশবে প্রেম প্রত্যাখ্যানের আক্ষেপ নিয়ে। তাই পাওয়া-না-পাওয়ার হিসাব মেলাতে আর্টসেল ভক্তদের মনে এখনো বাসা বেঁধে আছে নানাবিধ প্রশ্ন। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাক্ষাৎকারে সেসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন তার স্ত্রী মিমোষা লিমু হাওলাদার। কথা বলেছেন আরফান হোসাইন রাফি
লিংকন দার সঙ্গে আপনার জীবনের শুরুটা জানতে চাই
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শোতে গিয়েছিলাম আমার বান্ধবীর সঙ্গে। আমার বান্ধবী তখন আর্টসেলের মিডিয়া ম্যানেজার বাঁধনের বন্ধু ছিল, সেই সূত্রে আমরা আর্টসেল টিমের সঙ্গেই সেখানে গিয়েছিলাম। ওই দিনই প্রথম আমি আর্টসেলের গান সরাসরি শুনি। আগেও হয়তো তাদের কিছু গান শুনেছি, কিন্তু জানতাম না সেটা কোন ব্যান্ডের গান। বলতে পারেন, সেদিনই প্রথম আর্টসেল নামটা আমার জানা। ওই দিনের পর লিংকন জানতে পারে আমি খ্রিষ্টান। তারপর সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু আমি রাজি হইনি; বরং রাগ করেছিলাম। তবু ঈশ্বর যার সঙ্গে জুটি করেন, তা কোনো না কোনোভাবে হয়েই যায়। লিংকন এতটাই যত্নবান ও আন্তরিক ছিল যে অবশেষে আমি বিয়েতে রাজি হই। বাবা-মায়ের অমতেই আমরা কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলি।
স্বামী হিসেবে লিংকন দাকে নিয়ে আপনি কতটা গর্বিত?
একজন স্বামীর যেমন হওয়া উচিত, লিংকন ঠিক তেমনই সাপোর্টিভ। এ জন্য আমি সব সময় বলি, আমি সত্যিই ভাগ্যবতী। কারণ, আমার স্বামী আমাকে যেভাবে স্বাধীনতা দেন, যেভাবে বিশ্বাস করেন- এ রকম উদাহরণ সচরাচর খুব কমই দেখা যায়।
গানের বাইরে লিংকন দা কেমন?
খুবই সহজ-সরল একজন মানুষ। এ জন্য মাঝে মাঝে আমার কাছে বকাও খায়। ও খুব বেশি সরল এবং আবেগপ্রবণ। তবে এটা শুধু ওর মধ্যেই নয়, আমার মধ্যেও আছে।
লিংকন দার কণ্ঠে আপনার পছন্দের গান কোনটি?
‘এই বৃষ্টিভেজা রাতে’ গানটি আমি বিয়ের আগেই শুনতাম। তখন আমি ওকে চিনতাম না। তখন এ গানটা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়। পরবর্তীতে যখন আমি আর্টসেলের গান শুনতে শুরু করি, তখন থেকে তাদের অনেক গানই আমার প্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্যে বিশেষভাবে পছন্দের হলো ‘দুঃখ বিলাস’ ও ‘অনিকেত প্রান্তর’।
‘দুঃখ বিলাস’ গান নিয়ে কখনো কোনো গোপন দুঃখবোধ হয়েছে?
কখনোই এ রকম কিছু হয়নি। উল্টো, এ গানের নায়িকা জেনি দিদির সঙ্গে আমি দেখা করেছি, সেলফিও তুলেছি। আমি যখন প্রেগন্যান্ট ছিলাম, তিনি আমাকে উপহার নিয়ে দেখতে এসেছিলেন। কারণ, জেনি দিদি ওর (লিংকনের) একজন বন্ধু ছিলেন।
বর্তমানে তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
জেনি দিদি এখন বিদেশে থাকেন, আমার সঙ্গে কথা হয় না। তবে তিনি বাংলাদেশে এলে আমাদের দেখা হয়, আমাকে অনেক আদর করেন।
অতীত আপনাদের বৈবাহিক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলছে কি না?
আমরা কখনোই অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি না। তার জীবনেও অতীত ছিল, আমার জীবনেও এবং সবার জীবনেই থাকে। তাই আমরা বর্তমানটাকেই গুরুত্ব দিই, আর ভবিষ্যতেও তাই করব। ক্লাস নাইনের একটা ছেলের আবেগ নিয়ে এখন আক্ষেপ করার কিছুই নেই।
‘তোমরা কেউ কি দিতে পারো প্রেমিকার ভালোবাসা?’ বাস্তব জীবনে সংসার ও সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কতটা মনে করেন সেই আক্ষেপ ঘুচেছে?
গানের লাইন এখন কেবলই কয়েকটা লাইন। বর্তমান জীবন নিয়েই লিংকন সবচেয়ে বেশি খুশি।
পুরোনো প্রেম না হওয়ার পেছনে আপনার ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন কিছু আর্টসেল ভক্ত, এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আর্টসেল ভক্তের এমন ধারণা বেশ হাস্যকর! লিংকন গানটি লিখেছিলেন জেনি দিদি তার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়। আর ওই সময়ে ও পড়ত ক্লাস নাইনে, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর।
জীবনের শেষ অবধি লিংকন দাকে কীভাবে দেখতে চান?
লিংকন ইতোমধ্যেই একজন সফল মানুষ। আমি চাই, তার যে সম্মান রয়েছে এবং মানুষের ভালোবাসা, সেটা সারাজীবন থাকুক।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন