শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

সিরাজগঞ্জের সোনাকান্ত বিল সেজেছে অপরূপ রূপে 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

সিরাজগঞ্জের সোনাকান্ত বিল সেজেছে অপরূপ রূপে 

সিরাজগঞ্জের সোনাকান্ত বিলে লাল-সাদা-গোলাপি আভার পদ্মে মাতোয়ারা হয়ে আছে স্বচ্ছ জলরাশি। চোখ ধাঁধানো এই গোলাপি আভা মিশেছে দিগন্তে। মৃদুমন্দ বাতাস আর কোমল ঢেউয়ে দুলছে চারপাশ, যেন প্রকৃতির বিরামহীম নৃত্যের মোহনীয় ছন্দ।

প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এমন একটি বিল রয়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামে। দূর থেকে বিলটি দেখলে মনে হয় যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। পদ্ম ফুলের রাজ্য সিরাজগঞ্জের সোনাকান্ত বিলের দৃষ্টিনন্দন পদ্মের চোখ জুড়ানো দৃশ্য কাছে টানছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে বিলে আসছে দর্শনার্থীরা। পদ্ম ফুলের এই অপরূপ সৌন্দর্যের গল্প ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে।

বর্ষায় সোনাকান্ত বিল প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে বিস্তৃত হয়। এই জলাভূমি এখন শুধুই জলের রাজ্য নয়, ফুটে আছে রাশি রাশি গোলাপি আভা ছড়ানো পদ্মের এক বিশাল সাম্রাজ্য। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে আনন্দিত এলাকাবাসী। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বিল ভরে ওঠে নতুন করে ফোটা ছোট-বড় অসংখ্য পদ্ম ফুলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে এই বিলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের জেলাগুলোতেও। এই রূপ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে দর্শনার্থীরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সোনাকান্ত বিলে পদ্ম ফুলের এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসে। পদ্মবিলের অপরূপ এই সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে এখানে ঘুরতে আসে দর্শনার্থীরা। অনেকেই মোবাইল ফোনে ছবি তুলে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে ফ্রেমবন্দি করছে।

সোনাকান্ত বিলে ঘুরতে আসা মোহনা নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সোনাকান্ত বিলের পদ্ম ফুল দেখে শহর থেকে ছোট ভাই, বোন ও মাকে নিয়ে এসেছি এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে। বিলজুড়ে পদ্ম ফুল দেখে মনটা ভরে গেল। বিলে নৌকার ব্যবস্থা থাকলে এই সৌন্দর্য আরও কাছ থেকে উপভোগ করা যেত। নৌকা না থাকলেও বিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে খারাপ লাগছে না।

এই সৌন্দর্যের আড়ালে রয়েছে কিছু শৈশবের জীবিকার গল্প। সুমি, আল্পনা ও রহিমার মতো শিশুরা প্রতিদিন সোনাকান্ত বিলে পদ্ম গাছের কাঁটার আঘাত সহ্য করে ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে ২৫০-৩০০ টাকা, কোনো দিন ৪০০ টাকা আয় করছে।

ফুল বিক্রি করা শিশুরা জানায়, প্রতিদিন তারা এই বিল থেকে ফুল তোলে। বিলের মালিকেরা তাদের কিছু বলেন না। এই ফুল বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে ও বাজারে বিক্রি করে তারা।

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এটি একটি জলজ উদ্ভিদ। পাখির দ্বারা পদ্ম ফুলের বীজ বিলে পড়ে গাছ জন্মায় এবং সেখান থেকে পদ্মগাছের বিস্তৃতি হয়। সোনাকান্ত বিল এবার পদ্ম ফুলে ছেয়ে গেছে। অনেক দর্শানার্থী এই বিলে আসছে। বর্তমানে সোনাকান্ত বিল দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। 

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ ইয়াসিন আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পদ্ম ফুলের নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে তিন ধরনের পদ্ম ফুল ফুটতে দেখা যায়। লাল পদ্ম, শ্বেত পদ্ম ও নীল পদ্ম। নীল পদ্ম সাধারণত দেখা যায় না বললেই চলে। নীল পদ্মের কথা আমরা গল্প বা উপন্যাসে পেয়ে থাকি। একটা সময় আমাদের দেশে অনেক পদ্ম দেখা যেত। বর্তমান সময়ে বিল বা জলাশয় ভরাট করার কারণে পদ্ম ফুল অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। এই পদ্ম ফুল আমাদের জন্য অনেকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ধর্মীয়ভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি ঔষুধি গুণসহ নানাভাবে গুরুত্ব বহন করে। পদ্ম ফুলের বিস্তার ঘটাতে এই ফুলের গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. জেরিন আহমেদ বলেন, পাখির মাধ্যমে বীজ ছড়িয়ে প্রাকৃতিকভাবেই এই পদ্মের বিস্তার ঘটে। প্রকৃতির এই অপার দান একদিকে যেমন দর্শনার্থীদের মনকে প্রশান্তি দিচ্ছে, তেমনি হয়ে উঠেছে এলাকার শিশুদের আয়ের উৎস। বিলটি আজ কেবল জলাশয় নয়, এটি সৌন্দর্য, জীবন ও প্রকৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা। ভালোবাসার জন্য পৃথিবী তন্ন তন্ন করে নীল পদ্ম খুঁজে আনার কথা বলেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। দেশের খাল-বিলে অবশ্য তন্ন তন্ন করে পদ্ম খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি বছর বর্ষার শেষে ফুটতে শুরু করে সৌন্দর্য আর শুভ্রতার প্রতীক পদ্ম। আর এতে জলাভূমি ও বিল-ঝিলের সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!