মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম সোমা গোস্বামীর। বাবা শ্যামল গোস্বামী একজন চা শ্রমিক। সংসারে অভাব, কিন্তু স্বপ্নে কোনো ঘাটতি ছিল না মেয়েটির। তিন বোন ও এক ভাইয়ের বড় বোন সোমা আজ সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে তিনি এখন ফ্রান্সের রেইন শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ফুল ফ্রি স্কলারশিপে স্নাতকোত্তর করছেন।
সোমা চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য বৃত্তি ‘আসিয়ে ফাম দাভেনির স্কলারশিপ ২০২৫-২৭’ অর্জন করে ফ্রান্সে পড়াশোনার সুযোগ পান তিনি।
স্কুলজীবনেই তার শিক্ষাজীবন প্রায় থেমে যাচ্ছিল। শমশেরনগরের হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়াই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের সহায়তায় সেই বাধা পেরোন সোমা। এরপর অদম্য পরিশ্রমে গড়ে তোলেন নিজের শিক্ষাযাত্রা।
বাবা শ্যামল গোস্বামী জানান, ‘আমরা কখনো ভাবিনি আমার মেয়ে ফ্রান্সে পড়বে। সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও সোমা নিজের পরিশ্রমে সব করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সে গবেষণার কাজে সহযোগী ছিল, টিউশনি করে কিছু টাকা জমিয়েছিল, সেই টাকাতেই ইউরো কিনে ফ্রান্সে গেছে।’
স্থানীয়ভাবে এই অর্জন এখন গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষজন মনে করেন, চা শ্রমিক পরিবারের একটি মেয়ে ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে, এটাই সামাজিক পরিবর্তনের এক বড় দৃষ্টান্ত।
ফোনে সোমা বলেন, ‘আমার এই পথচলায় অনেকেই পাশে ছিলেন, শিক্ষক, সহপাঠী এবং গ্রামের মানুষ। তাদের সমর্থন ছাড়া আজ আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না।’
তার প্রাক্তন শিক্ষক হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বিপ্লব ভূষণ দাস বলেন, ‘সোমা প্রমাণ করেছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।’
সুজা মেমোরিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মানিক উদ্দীন বলেন, ‘সোমার অর্জন আমাদের সবার অর্জন। সে চা শ্রমিক সমাজের মেয়েদের জন্য এক প্রেরণা।’
চা বাগানের মাটিতে বেড়ে ওঠা সোমা এখন দূরদেশের আকাশে নতুন আলোর স্বপ্ন বুনছেন, যা শুধু তার নিজের নয়, তার পরিবারের, তার সমাজের, তার গ্রামের গর্বের প্রতীক।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন