শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ১২:২৮ এএম

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি থেকে জুলাই বিপ্লবের বিএনপি

মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ১২:২৮ এএম

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি থেকে জুলাই বিপ্লবের বিএনপি

’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ’৭৫-এর ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য লক্ষণীয়। দুইটি সময় ছিল দেশের দুর্বিষহ অবস্থা। ’৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ানক কালরাতে যখন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, তখন গোটা জাতি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গিয়েছিল। অনেকে যে যার মতো আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিল।

অন্ধকারে নিমজ্জিত মাতৃভূমি। অজানা গন্তব্যে ছুটে চলা নেতৃত্বশূন্য ও অসহায় মানুষগুলোকে সামনে মৃত্যুর আহাজারি। হ-য-ব-র-ল জাতির পথপ্রদর্শক যখন কেউ নেই। ঠিক তখন আলোকবর্তিকা হাতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে জীবন ও পরিবারকে উৎসর্গ করে প্রথমে ‘উই রিভল্ট’।

সেই ঘোর দুঃসময়ে ইথারে ভেসে আসল জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর। সেদিন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জিয়া জাতিকে মুক্তির পথ দেখালেন। তিনি বলেন, আমি মেজর জিয়া বলছি। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ ঘোষণা করছি।’ কান্ডারিহীন জনজাহাজ প্রোতাশয় ভিড়ালেন। ভোরের সোনালি রোদে চেতনার মুক্তা ঝরালেন।

একইভাবে ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ভোরে বেতার তরঙ্গে আবার ভেসে এলো পরিচিত সেই কণ্ঠ: ‘আমি জিয়া বলছি’। পুনরায় জাতীয় দুর্যোগের কান্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হলেন একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরোত্তম সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। এই ভূমি, মানুষ রক্ষায় তিনি পাকিস্তান সামরিক কর্মকর্তা জানজুয়ারসহ তার নিয়ন্ত্রণে থাকা সবাইকে গ্রেপ্তার করেন।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে ঘুরে আসতে হবে আবারও পেছনে।

শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে ১২ জানুয়ারি প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে সরিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রী হোন।

তার সাড়ে তিন বছরের ক্ষমতাকালে দেশে দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা, হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার, ভোট কারচুপি, চারদিকে সীমাহীন অরাজকতা শুরু হয়। দেশের অবস্থা টালমাটাল। ১৯৭৪ সালে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। শেখ মুজিবুর রহমান কারো সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে কারো মতামত না নিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে ১১ মিনিটের বক্তব্যে নিজেকে নিজে প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। দেশের মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে বাকি সব মিডিয়া বন্ধ করে দেন। সবকটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, দেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ) গঠন করে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করে দেশের সকল মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করে নেন। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়। অভাব অনটন, সরকারি দলের অত্যাচারে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। ’৭৫-এর আগস্টের ১৫ তারিখ এক সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। এতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। আগস্টের ১৫ তারিখে পট পরিবর্তন মুহূর্তে বাংলাদেশের রেডিও থেকে মেজর ডালিম ঘোষণা করেন, খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন। এরপর বাংলাদেশের রাজনীতিরও নতুন মোড় নেয়।

১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের ফলে ‘এক নেতা এক দেশ’ এই চিন্তা ধারার মৃত্যু ঘটে। তিন মাসের মাথায় ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তার অনুগতদের নিয়ে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে।

ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নিজে নিজেই মেজর জেনারেল ঘোষণা করে এবং সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন।

প্রায় একই সময়ে বঙ্গভবনে বসে খালেদ মোশাররফ প্রয়াত সাংবাদিক এনায়েত উল্লাহ খান থেকে টেলিফোনে জানতে পারেন, তার মা ও ভাই আওয়ামী লীগের মিছিলে যোগ দিয়েছেন। এতে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে বলতে থাকেন, আমার মা ও ভাই আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে। ওই সময় জনগণের দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ ছিল দেশদ্রোহীর দল।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে বেতার ও টেলিভিশনে ভাষণ দেন। তিনি দেশবাসীকে জানান, সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ক্যান্টনমেন্টে জওয়ানরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা দলে দলে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। রাজপথে ট্যাংক ও কামানসজ্জিত হয়ে বিদ্রোহী সিপাহিরা বিপ্লবের স্লোগান দিতে থাকে। তাদের কণ্ঠে স্লোগান ছিল, ‘সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ সিপাহি বিপ্লবের সমর্থনে সংহতি প্রকাশ করে সব জনতা রাজপথে নেমে আসে।

জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহিদের এবং দেশের সাধারণ জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তাকে বন্দি করায় দেশের সাধারণ জনগণ ও সিপাহিরা মিলে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রিয় ব্যক্তিকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মধ্যরাতে সিপাহি-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিয়াউর রহমানকে খালেদ মোশাররফের বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে আনে। সূচিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়। আর এই দিবসটির নাম হলো জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মুক্ত হয়ে জাতির উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন। ৭ নভেম্বর সেদিন ছিল শুক্রবার। খুব ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। রাজধানী মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। পথে পথে সিপাহি-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে ভেসে আসে ফুলের সুবাস। এই আনন্দের ঢেউ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সেনাবাহিনী আপনাদের পাশে আছে। আপনারা নিজ নিজ কাজে যোগদান করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’

জিয়াউর রহমান সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে সিপাহিদের ধ্বংসাত্মক পথ থেকে নিরস্ত্র করতে সক্ষম হলেন। সেনাবাহিনীতে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরে এলো। এরপর সেনা ও জনতা, সবার সংহতিতে জিয়াউর রহমানের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার ন্যস্ত করেন। সিপাহি-জনতা স্বকীয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চক্রান্তকারীদের খপ্পর থেকে দেশকে উদ্ধার করে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে দেয়। গুটিকয়েক বিদেশি দাস ছাড়া বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ এবং সশস্ত্রবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা নিয়ে জিয়াউর রহমান দেশকে উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তির পথে পরিচালিত করে। বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে মুক্ত করে। সিপাহি-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী, দেশীবিরোধী সব চক্রান্ত।

৭ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অবিস্মরণীয় বাঁকবদল। এই দিনের সিপাহি-জনতা বিপ্লব দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোকে পাল্টে দেয়। যার প্রতিফলন বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা ঘটে। সামরিক শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের অবতারণা বিশ্বের ইতিহাসে জিয়াউর রহমান রচনা করলেন। তার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষিব্যবস্থা, ধর্মীয় মতবাদের একটি উর্বর সময় ছিল। যে কারণে জন মানসপটে আজও জিয়াউর রহমান অমর হয়ে আছেন।

মার্কিন বিপ্লবী ফ্রেডেরিক অ্যালেন হাম্পটন সিনিয়র বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। তিনি বলতেন, তুমি একজন বিপ্লবীকে মেরে ফেলতে পার, কিন্তু বিপ্লবকে মেরে ফেলতে পারবে না।’

বিপ্লব চিরঞ্জীব, যা প্রমাণ করে গেলেন জিয়াউর রহমান। এ কারণেই, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ইতিহাস আজও মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত আছে।

এই দেশে যতবার বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এবং তার হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে।

১৯৭১-এর ঘোষণায় একটি স্বাধীন দেশ, ১৯৭৫ সালের গণ-অভ্যুত্থানে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ, ১৯৯০ সালের বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে  গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন পরে গণতন্ত্র উদ্ধার, ২০২৪ সালের তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ আ’লীগের সরকারপ্রধানসহ পলায়ন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!