আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দিতে বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধে এক পক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরিফ মীর (৩২)। গতকাল সোমবার ভোর ৬টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ইমরান হোসেন নামে আরেকজন। হত্যাকা-ের পরও আরও কয়েক দফা ককটেল হামলার শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এর আগে গত ৩ নভেম্বর প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় তুহিন নামের আরেক যুবক। এক সপ্তাহে পরপর দুই খুনে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোল্লাকান্দিতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপে বিরোধ চলছে। একপক্ষে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওহিদ মোল্লার অনুসারী শাহ কামাল, অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আওলাদ হোসেন মোল্লা। গতকাল গুলিতে নিহত আরিফ মীর আওলাদ হোসেনের অনুসারী।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর রাত পৌনে দশটার দিকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়। নিহত তুহিন বেহেরকান্দি গ্রামের সেলিম দেওয়ানের ছেলে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জের ধরে এ হত্যাকা- ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল আরিফ হত্যার ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্থানীয়রা জানান, ভোরে আরিফ মীর বাড়ির সামনে ছিলেন। হঠাৎ প্রতিপক্ষ শাহ কামাল-আতিক মল্লিক গ্রুপের লোকজন অতর্কিতে হামলা চালায়। একাধিক গুলি ছোড়া হলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আরিফ। গুরুতর আহত ইমরান হোসেনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, আরিফ মীর নিহত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। হত্যার পরও এলাকায় ৩-৪ দফা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে শঙ্কায় সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
হত্যাকা-ের ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মেতায়েন করা হয়েছে। সম্ভাব্য আসামিদের শনাক্তে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম মো. ফিরোজ কবির।
এদিকে স্বামী আরিফ মীরকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তার স্ত্রী পারুল বেগম। কান্নাজড়িত ক-ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা যাবে, আসবে, কিন্তু আমার সন্তানদের বাবা আর ফিরবে না।’
পারুল বেগম বলেন, ‘গত (রোববার) রাতে অচেনা লোক এসে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে গেল। এলাকার অবস্থা ভালো না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে নিয়ে চলে গেল। সকালে মসজিদের মাইকিং থেকে জানতে পারলাম আমার স্বামী আর নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে, জান্নাত (১৫), আয়েশা (৪), আমেনা (২)। আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? কার কাছে যাব? স্বামীকে যারা ডেকে নিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আরিফকে ডেকে নিয়ে যারা হত্যা করেছে তারা গ্রামেই রয়েছে জানিয়ে পারুল বেগম বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমার বাচ্চাদের বাঁচান।
নিহত আরিফের বড় ভাইয়ের স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের মতো লালন করেছি। তাকে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হলো! তার ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন