রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টাকেই জুলাই সনদ আদেশ জারি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন, জুলাই সনদের আদেশ জারি রাষ্ট্রপতি দিলেও জায়েজ হবে, কিন্তু নৈতিক হবে না। প্রধান উপদেষ্টাকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে জাতীয় কৃষক শক্তির আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গত এক বছরে সরকারের সঙ্গে জনগণের বিচ্ছেদ হয়েছে। সংবিধানের ১০৬-এ যা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে জন্য এই বিচ্ছেদ। এটার আইনি ভিত্তি থাকলেও নৈতিক ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে জনগণ একমত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো একমত ছিল না। বিএনপি-জামায়াত দুই দলের নিজেদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির ফলে আওয়ামী লীগ মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘গণভোটের চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ বলে দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। নিজের লোক দিয়ে সবকিছুর মূল্য বাড়িয়ে তারপর কৃষকদের ওপর দায় চাপানো হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এটা একটা অপরাজনীতি। এই অপরাজনীতি গত ১৫ বছরে চলেছে। এটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। এ জন্য যারা ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন, আমরা তাদের কাছে আহ্বান জানাব, আপনারা শালীন হোন, যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিন। পাটওয়ারী বলেন, একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি ভবিষ্যতে হতে যাচ্ছেন, উনি বলছেন গণভোটের চেয়ে আলুর দামটা বেশি প্রাসঙ্গিক। ওনার হয়তো অজ্ঞতা রয়েছে। উনি যদি বুঝতেন যে উনি যাকে এমপি নমিনেশন দিচ্ছেন, সেই লোকটাই কৃষকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আলুর দামটা বাড়াচ্ছেন।
এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, ‘জুলাই সনদ আদেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি সংকট ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের উচিত, জনগণের স্বার্থ মাথায় রেখে কাজ করা। সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’
এর আগে জাতীয় জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। গতকাল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এর আগে একই দিনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর আগে উপদেষ্টাম-লীর সভায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এই আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো এখন গণভোটে তোলা হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর জনগণের মতামত নেওয়া হবে এই গণভোটের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি বিকল্প সুপারিশ জমা দেয়। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদে সই করে। ওই দিন বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দলগুলোর প্রতিনিধিরা বহুল প্রত্যাশিত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন