- নতুন আইনে ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেতে এখন ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে
- নতুন আইনের বিরোধিতায় বাঙালিসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ। আপত্তি মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও
- ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যায় অভিবাসী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদের একের পর এক কড়া আইনে বেকায়দায় বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ। সম্প্রতি তার নেওয়া নানা পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে। ব্রিটেনে যারা আশ্রয় পাবেন, তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেতে এখন ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আগামীকাল সোমবার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ যে পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন, তার অংশ হিসেবে এমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আর এতে তার ওপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষ।
কমিউনিটি নেতা কামাল উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘যতটুকু জানি শাবানার পরিবার নাকি ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থী ছিল। অথচ তার এমন সিদ্ধান্তে আমাদের কমিউনিটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ২০ বছর পর স্থায়ী বসবাসের আবেদন এটা নিতান্তই বাজে সিদ্ধান্ত। পার্লামেন্টে তার এই সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলেও তাতে খুব একটা সুবিধা হচ্ছে বলে মনে হয় না।’
বার্মিংহামের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘নিজে অভিবাসী হয়েও শাবানা অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে আইন পাস করছেন। ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন আইনগুলো তার মাধ্যমে হচ্ছে। ন্যূনতম আশা যেটা, সেটিও তিনি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমরা যারা কোনোক্রমে এখানে আশা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি, সেটি তিনি শেষ করে দিচ্ছেন।’
কমিউনিটি নেতা ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী বলেন, ‘এসব আইনের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং সেটি বাস্তবায়নও করে ফেলবেন। কিন্তু এটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। লেবার সরকার বর্ডার কন্ট্রোল করতে না পেরে বৈধদের বলির চেষ্টা করছে।’
জানা যায়, স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেতে সময়সীমা তিনি পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ২০ বছরে উন্নীত করতে চান শাবানা মাহমুদ। সম্প্রতি তিনি সানডে টাইমসকে বলেন, ‘এই সংস্কারগুলো মূলত মানুষকে অবৈধভাবে এই দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করার জন্য। বোটে উঠে আসবেন না। এই বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ নীতি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন আমাদের দেশকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। সরকারের কাজ হলো দেশকে একত্র করা। যদি আমরা এটা সমাধান না করি, আমাদের দেশ আরও বেশি বিভক্ত হয়ে পড়বে।’
এদিকে লেবারের দুই ডজনেরও বেশি এমপি সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, প্রণোদনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারকে জোর করে বহিষ্কারের পরিকল্পনা অত্যন্ত কঠোর এবং পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ বা নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের কাছে সীমিত ‘নিরাপদ পথ’ কোনো বাস্তব বিকল্প হতে পারে না।
নতুন নীতির বিরোধিতা করে যুক্তরাজ্যের রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান এনভার সলোমন বলেন, ‘এসব কঠোর পদক্ষেপ মানুষকে যুক্তরাজ্যে আসার চেষ্টা থেকে বিরত রাখবে না। যারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং সমাজে অবদান রাখে, তাদের জন্য নিরাপদ ও স্থায়ী জীবন গড়ার সুযোগ থাকতে হবে।’ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এরই মধ্যে উদ্বেগ জানিয়ে বলছে, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে ঝুঁকিতে পড়বে হাজারো শরণার্থীর ভবিষ্যৎ।
লেবার এমপি স্টেলা ক্রিসি বলেন, ‘আশ্রয়ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে নিরাপদ ও বৈধ পথের বিস্তৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি সরকারকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং নীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম বলেন, ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে কোনো রকমে পালিয়ে আসা মানুষদের সুরক্ষা না দিয়ে ডানপন্থিদের সন্তুষ্টির জন্য সরকার সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
প্রস্তাবিত পরিবর্তনের অধীনে, স্ট্যান্ডার্ড ওয়েইটের সময়কাল হবে ১০ বছরÑ বিভিন্ন মানদ-ের সঙ্গে যা সেই সময়কালকে দীর্ঘায়িত বা সংক্ষিপ্ত করবে। ১২ মাসের কম সময়ের জন্য বেনিফিট দাবি করা বৈধ অভিবাসীদের ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী স্বাস্থ্য ও সামাজিক কেয়ার ভিসায় আসা ব্যক্তিদের ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে, যা বর্তমানে পাঁচ বছর। ১২ মাসের বেশি সময় ধরে বেনিফিটের ওপর নির্ভরশীল অভিবাসীদের বসতি স্থাপনের জন্য ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে চার গুণ বেশি এবং ইউরোপে দীর্ঘতম। হোম অফিসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যায় অভিবাসী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ। এ কারণে, আগামী পাঁচ বছরে সেটেলমেন্টও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন লোক সেটেলমেন্টের জন্য আবেদন করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন