ঢাকা শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫

অনাহারে অপুষ্টিতে বিধ্বস্ত গাজা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অনাহারে ১ দিনে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারটি শিশুও রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০১ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গত মঙ্গলবার অনাহারে ১৫ জনের মৃত্যুর ঘোষণাটি এমন একসময় আসে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কমপক্ষে আরও ৮১ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ গাজার পরিস্থিতিকে ‘সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু ও ধ্বংসের এক ভয়াবহ প্রদর্শনী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন অনাহারজনিত কারণে মারা গেছে। এর মধ্যে চারটি শিশু। আর মোট ১০১ জনের মধ্যে ৮০ জন শিশু রয়েছে। বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা গত কয়েক সপ্তাহে ঘটেছে।

সবশেষ মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে ছয় সপ্তাহের শিশু ইউসুফ আল-সাফাদি একজন। সে উত্তর গাজা শহরের একটি হাসপাতালে মারা গেছে। ১৩ বছর বয়সি আব্দুলহামিদ আল-গালবান দক্ষিণ খান ইউনিসের অন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে মারা গেছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় প্রতিদিনই নিহত বাড়ছে। সেখানে অপুষ্টিতে মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এবার গাজার স্বাস্থ্যবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানাল, অপুষ্টির শিকার হয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩৩ জন। এর মধ্যে ১২ জনই শিশু। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, এমন একসময় এই মৃত্যুর তথ্য সামনে এলো, যখন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, গাজায় বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।

এদিকে জাতিসংঘ বলছে, গত ২৭ মের পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ত্রাণ নিতে গিয়ে গাজায় মারা গেছে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এর আগে ইসরায়েলকে এখনই যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ ২৮টি দেশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। তবে আল জাজিরাসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ২৫ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার পাশাপাশি তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছেন গাজার বাসিন্দারা। অনাহার-অর্ধাহারে দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে উপত্যকাটির অসহায় শিশুদের। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের সময় উপত্যকাটিতে অপুষ্টিতে ভুগে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮০ জনই শিশু।

গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাওয়া ১০১ জনের মধ্যে আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। তাদের মধ্যে ১২ জন শিশু। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ মানুষ ক্ষুধায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া। এর মধ্যে ৭০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। গাজায় বর্তমানে একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।

খুব সীমিত পরিমাণে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের ত্রাণ। সেখানেও চলছে লুটপাট। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিচালিত বিতর্কিত ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রগুলোতে খাবার সংগ্রহ করতে দিয়ে নির্বিচার গুলির মুখে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ৭ মে থেকে ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে হত্যা করা হয়েছে ১ হাজারের বেশি মানুষকে।শুধু গাজার বাসিন্দারা নয়, অনাহারে ভুগছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউর কর্মী ও চিকিৎসকেরাও। সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনাহার ও অবসাদের কারণে তাঁদের অনেক কর্মী ও চিকিৎসক কাজ করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন। কর্মীদের কাছ থেকে এমন ঘটনার কয়েক ডজন বার্তা পেয়েছেন তিনি। গাজায় বিতর্কিত ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি সংস্থা। জিএইচএফের সমালোচনা করে লাজ্জারিনি বলেন, সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রগুলো হলো মৃত্যুর ফাঁদ।