ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

থাই-কম্বোডিয়া গোলাবর্ষণ ট্রাম্পের ফোনেও থামেনি সংঘাত

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:৪৩ এএম

চল্লিশ বছর বয়সি থাই যুবক কোমসান প্রাচ্য। কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে গত বৃহস্পতিবার গোলাবর্ষণ শুরুর পর তার বাচ্চাদের স্কুল থেকে ফোন আসে। পরে স্ত্রী, ১৪ বছর বয়সি মেয়ে, ৯ বছর বয়সি ছেলে এবং তাদের ছেলের বন্ধুকে আনতে ছুটে যান স্কুলে।

ফেরার পথে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে যাত্রাবিরতি দেন। তখন গাড়ি থেকে নেমে পেট্রোল পাম্পে থাকা দোকানে খাবার কিনতে যায় কোমসানের পরিবার। ঠিক তখনই একটি কামানের গোলা আঘাত হানলে, পাম্পটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় গোটা পরিবারের। প্রিয়জন হারানোর বেদনা নিয়ে এভাবেই সংঘাতের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন থাই যুবক। মোবাইলে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের ছবিই এখন তার একমাত্র অবলম্বন। ভয়াবহ এই সংঘাতে কোমসানের পরিবারের মতো আরও অনেক বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতির জোর দাবি পরিবারহারা এই যুবকের। কোমসান প্রাচ্য বলেন, ‘আমি চাই দুই দেশই এই ভয়াবহতার কথা ভাবুক। যুদ্ধ কারো জন্য ভালো নয়। তাই উভয়েরই একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলা উচিত এবং এটি বন্ধ করা উচিত। যুদ্ধ ক্ষতি ছাড়া মঙ্গল কিছু বয়ে আনতে পারে না।’ এমন পরিস্থিতির মধ্যে দুই দেশের উত্তেজনা কমানোর বার্তা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উভয় দেশের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় রাজি হয়েছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড।

যুদ্ধবিরতিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়ে ব্যাংকক-নমপেন আলাদা বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের জন্য তাকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানায়। যদিও এরপরও রাতভর সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় কম্বোডিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতির আশ্বাসের ওপর জোর দিয়েছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই।

এ অবস্থায় সীমান্তের উভয় পাশের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি হওয়ায় একে কেউ কেউ সুখবর হিসেবে দেখলেও, ট্রাম্পের ফোনের পর গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় এখনো আতঙ্কে আছে অনেকে। তাই স্থায়ী সমাধান চান থাই-কম্বোডিয়ান নাগরিকরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসতে রাজি হলেও চতুর্থ দিনের মতো থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে।

ট্রাম্প ফোন দেওয়ার পরও গোলাগুলির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছে ব্যাংকক-নমপেন। বিরোধপূর্ণ সীমান্তে উত্তেজনা চলমান থাকায় শঙ্কিত বাসিন্দারা।

স্থায়ী শান্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান থাই-কম্বোডিয়ান নাগরিকদের। চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই দেশের সেনা সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকসহ নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে রোববার চতুর্থ দিনের মতো পাল্টাপাল্টি গোলা হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠা সত্ত্বেও সংঘর্ষ চলছেই।

এএফপির সংবাদকর্মী ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে। কম্বোডিয়ার সামরাং শহরে থাকা এএফপির সাংবাদিকেরা ভোর থেকে নিয়মিত গোলার আওয়াজ শুনেছেন। সংঘর্ষস্থল থেকে শহরটির অবস্থান প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও বলেছেন, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে দুটি বিরোধপূর্ণ মন্দিরের কাছে সংঘর্ষ শুরু হয়। গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন।

এর আগে গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন। ট্রাম্পের এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘাত থামাতে তার দেশ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আগ্রহী।

হুন মানেত আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলবেন এবং থাই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, ব্যাংকক যেন কোনো চুক্তি ভঙ্গ না করে। গতকাল শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে দেশ দুটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

এদিন স্কটল্যান্ড সফরে ছিলেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে এই মাত্র কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম।’ পরে আরেকটি পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘এই মাত্র থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। এটি খুবই ভালো একটি আলাপচারিতা ছিল।

কম্বোডিয়ার মতো থাইল্যান্ডও দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায়।’ সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধ শত বছরের বেশি পুরোনো।

গত মে মাসে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে দুই দেশ। শনিবার পর্যন্ত চলমান সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।