গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাহী কমিটির মেয়াদ চার বছরের। ২০২১ সালে বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নিয়েছিল। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ অক্টোবর। ফলে অক্টোবরের মধ্যেই বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট বোর্ডকে একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হয়।
নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অবশ্যই গঠনতন্ত্রে নির্ধারিত অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হতে হবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি হতে হবে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া। কিন্তু বিসিবির বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দুই মাসের মতো সময় বাকি থাকলেও নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। অগ্রগতি নেই গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষেত্রেও।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গত জুনে বলেছেন, অক্টোবরেই হবে বিসিবি নির্বাচন। বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রক্রিয়াধীন আছে। বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলও একই কথা বলেছেন, যথাসময়ে হবে বিসিবি নির্বাচন। কিন্তু দেশের ক্রিকেট মহলের কাছে বিসিবি নির্বাচন ও গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়।
বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনের ব্যাপারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছেও কোনো তথ্য নেই। ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবি নির্বাচন হবে। তবে বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনের ব্যাপারে আমার কাছে কোনো আপডেট তথ্য নেই। এটা আগে যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় এখনো আছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের ব্যাপারে আমরা চূড়ান্ত অনুমোদন দেব।’
আসন্ন বিসিবি নির্বাচন ও গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর ক্লাব ক্রিকেটের সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বিসিবি নির্বাচন সময়মতোই হবে। গঠনতন্ত্র তো আছে। এই গঠনতন্ত্রে নির্বাচন হতে পারে, তাতে অসুবিধা নেই। তবে ছোটখাটো কিছু সংস্কার আনা যেতে পারে। বিশেষ করে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর ব্যাপারে। যেসব জেলা থেকে পরিচালক উঠে আসবেন, সেসব জেলায় যেন নিয়মিত লিগ আয়োজন করা হয়। গঠনতন্ত্র সংশোধন না হলেও তাদের কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া যেতে পারে, যাতে ক্রিকেটের উন্নতি হয়। আমরা সঠিক সময়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন করেই যে নির্বাচন করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচনটা দিলেই ভালো হয়।
গঠনতন্ত্রে সংস্কার প্রয়োজন আছে বলেই ক্রীড়া উপদেষ্টাও এ নিয়ে কথা বলেছেন। এত দিন ধরে যে বা যারা নিজেদের মতো করে গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে, সেখানে পরিবর্তন আনা দরকার ক্রিকেটের উন্নতির জন্য। আমি আশা করি, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন যথা সময়েই হবে। তবে এখনো নির্বাচন ঘিরে কোনো আভাস ক্রিকেট বোর্ড থেকে পাইনি।’
গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর বিসিবির অনেক পরিচালক আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় দেশের ক্রিকেটে অচলাবস্থার তৈরি হয়। সরকারের কোটায় পরিচালক মনোনীত হয়ে নাজমুল হাসান পাপনের জায়গায় বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিসিবির গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটি গঠন করেন তিনি।
এই কমিটির দায়িত্ব পান সরকারের কোটায় বিসিবি পরিচালক হওয়া নাজমুল আবেদীন ফাহিম। কিন্তু বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনের কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ঢাকার ক্রিকেট ক্লাবগুলো জোটবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ করে বসে। ঢাকার ক্লাব সংগঠকদের তোপের মুখে গত ২৫ জানুয়ারি বিসিবির ১৭তম বোর্ড সভার পর এ কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরপর ফারুকের জায়গায় বিসিবির সভাপতি হয়ে আসেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিসিবির গঠনতন্ত্র নিয়ে সংশোধনের কথা বলা হলেও আসলে তাতে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
গঠনতন্ত্র সংস্কারে কোনো মনোযোগ নেই বিসিবি কর্তাদের। এ ছাড়া বিসিবির নির্বাচন নিয়েও অনেক বোর্ড পরিচালকের কাছে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের কথা বলা হলেও সেভাবে বিসিবির কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে না।