ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়রথে আছে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচেও জিতেছে তারা। দুই শতাধিক স্কোর গড়েও জয়ের মুখ দেখেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের বিপক্ষে ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়ানরা।
দুই শতাধিক স্কোর গড়লেও ক্যারিবীয় কোনো ব্যাটসম্যান ৫০ বা ৪০ তো নয়ই, ৩৫ রানও করতে পারেননি কেউ। রাদারফোর্ডের ৩১ রানই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। তার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পেরিয়ে গেল ২০০। এমন কিছু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম দেখা গেল। তবে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেট, ছোট মাঠ আর অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়ার সামনে যথেষ্ট হলো না তা। টানা দ্বিতীয় দিনে দুই শতাধিক রান তাড়া করে তারা পৌঁছে গেল ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করার দুয়ারে। সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের ফলাফল দেখে যতটা মনে হয়, ততটা জমে ওঠেনি লড়াই।
অস্ট্রেলিয়ার জয় আসলে নিশ্চিত হয়ে যায় বেশ আগেই। আগের দিন টিম ডেভিডের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে ২১৫ রান তাড়ায় অনায়াসে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এদিন ডেভিডকে বিশ্রাম দেওয়া হলেও জিততে সমস্যা হয়নি তাদের। তার বদলে সুযোগ পাওয়া অলরাউন্ডার অ্যারন হার্ডি দারুণ বোলিংয়ের পর অবদান রাখেন ব্যাটিংয়ে। সেন্ট কিটসে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ২০৫ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম কোনো দল ২০০ স্পর্শ করল, যেখানে কোনো ব্যাটসম্যান ৩৫ রানও করতে পারেনি। রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া জয় পায় চার বল বাকি রেখে। ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস যদি ‘দশে মিলে করি কাজ’-এর উদাহরণ হয়, অস্ট্রেলিয়াও সেখানে খুব পিছিয়ে ছিল না। দুটি ফিফটি থাকলেও তাদেরও ছিল না খুব বড় ইনিংস।
৩০ বলে ৫১ রান করেন জশ ইংলিস, সিরিজে তৃতীয় ফিফটিতে ৩৫ বলে ৫৫ করে অপরাজিত থাকেন ক্যামেরন গ্রিন। দুর্দান্ত দুটি ক্যাচ নেওয়ার পর ওপেনিংয়ে ৬ ছক্কায় ১৮ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ৪৭তম ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি এটি। কাইরন পোলার্ডকে ছাড়িয়ে তিনি এককভাবে এখন আছেন তালিকার দুইয়ে। সবার ওপরে ক্রিস গেইল (৬০ বার)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাট করে দুইশর বেশি রান তাড়ায় হারল এই নিয়ে সপ্তমবার।
অনাকাক্সিক্ষত রেকর্ডটি তারা গড়েছিল আগের দিনই, এবার তা বাড়ল আরেকটু। দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে পাঁচবার। ওয়ার্নার পার্কে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আভাস দিয়েছিল উড়ন্ত শুরুর। তবে আগের ম্যাচের মতো বড় হয়নি শুরুর জুটি। প্রথম দুই ওভারে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মেরে আউট হয়ে যান ব্র্যান্ডন কিং (১০ বলে ১৮)।
কিংকে ফেরানোর পর আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান শেই হোপকেও (১০) ফেরান সিরিজে প্রথম খেলতে নামা জেভিয়ার বার্টলেট। রোস্টন চেইসকে ‘গোল্ডেন ডাক’ উপহার দেন সিরিজে প্রথম নামা আরেক ক্রিকেটার অ্যারন হার্ডি। দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও আগ্রাসনের পথ ধরেই ছুটতে থাকে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, গড়ে ওঠেনি কোনো অর্ধশত রানের জুটি। তবে রানের গতি কমেনি। ১৫ বলে ৩১ করেন রাদারফোর্ড, ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ২৮ রভম্যান পাওয়েল। ২ ছক্কায় ৬ বলে ১৬ করে আউট হয়ে যান শিমরন হেটমায়ার, রোমারিও শেফার্ড করেন ১৮ বলে ২৮, জেসন হোল্ডার ১৬ বলে ২৬।
এমনকি ৯ নম্বরে নামা ম্যাথু ফোর্ড ২ ছক্কায় করেন ৭ বলে ১৫, ১০ নম্বরে নেমে আকিল হোসেন ১০ বলে ১৬। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২০০ ছাড়িয়ে যায়। তবে বড় ইনিংস বা বড় জুটি না হওয়াতেই আরও বড় হয়নি দলের স্কোর। রান তাড়ার শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই জেডিয়ায় ব্লেডসের শিকার হন অধিনায়ক মিচেল মার্শ (০)। তবে তিনে নেমেই প্রবল পাল্টা আক্রমণ চালান জশ ইংলিস।
ব্লেডসের ওভারে ৩টি চার মারেন তিনি, রোমারিও শেফার্ডকে টানা ৪টি, ম্যাথু ফোর্ডকে মারেন ছক্কা ও চার। ষষ্ঠ ওভারে তার ফিফটি হয়ে যায় ২৮ বলে। ম্যাক্সওয়েল তখনো স্রেফ দর্শক, তার রান ৪ বলে ২! পাওয়ার প্লের শেষ বলে জেসন হোল্ডারকে ছক্কা মেরে ম্যাক্সওয়েল জেগে ওঠেন। ইংলিস বিদায় নেন ফিফটি পেরিয়েই। জুটি থামে ৩৫ বলে ৬৬ রানে।