রাশিয়া রেকর্ডসংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই যুদ্ধের একটি প্রধান কৌশল হিসেবে রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই হামলার তীব্রতা এবং সংখ্যা আরও বেড়েছে, যা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং বেসামরিক জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। রাশিয়া ইউক্রেনে গত এক মাসে ৬ হাজারেরও বেশি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যা ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যেকোনো মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ। ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট এই খবর প্রকাশ করেছে। এই হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে, সোচির তেল শোধনাগারে হামলাটি ছিল ইউক্রেনের একাধিক ড্রোন অভিযানের অংশ যেগুলোর লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রিয়াজান, পেনজা ও ভোরোনেজ। ভোরোনেজের গভর্নর জানান, সেখানে এক ড্রোন হামলায় চারজন আহত হয়েছেন। রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় পর্যটন শহর সোচির কাছে একটি বিশাল তেল ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের জন্য ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলাকে দায়ী করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকা-ের কারণে সোচি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। খবর বিবিসি। ক্রাসনোদার অঞ্চলের গভর্নর ভেনিয়ামিন কন্দ্রাতিয়েভ টেলিগ্রামে জানান, ইউক্রেনের ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ একটি জ্বালানি ট্যাংকে আঘাত হানে। এরপর প্রায় ১২৭ জন দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। এদিকে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাইকোলাইভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাড়িঘর ও বেসামরিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে অন্তত ৭ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানায়, আহতদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে, সোচির তেল শোধনাগারে হামলাটি ছিল ইউক্রেনের একাধিক ড্রোন অভিযানের অংশÑ যেগুলোর লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রিয়াজান, পেনজা ও ভোরোনেজ। ভোরোনেজের গভর্নর জানান, সেখানে এক ড্রোন হামলায় চারজন আহত হয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার রাতভর রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ইউক্রেনের ছোড়া ৯৩টি ড্রোনের মধ্যে ৬০টি কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে প্রতিহত করে। অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রাতভর ৮৩টি ড্রোন এবং ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছেÑ যার মধ্যে ৬১টি ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেন বলছে, মোট ১৬টি ড্রোন ও ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের ৮টি স্থাপনা লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে। এই ঘটনা এমন একসময়ে ঘটল, যখন ইউক্রেনে সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বৃহস্পতিবার কিয়েভে এক রুশ হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হন।
ইউক্রেন জানিয়েছে, ওই হামলায় ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ৮টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর রাজধানী কিয়েভের ওপর অন্যতম ভয়ংকর হামলা এটি। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার কর্মকা-ের নিন্দা জানিয়ে নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বাগযুদ্ধের মধ্যেই চীনের সঙ্গে সাগরে যৌথভাবে কামান ও অ্যান্টি-সাবমেরিন মহড়া চালাচ্ছে রাশিয়ার নৌবাহিনী। রোববার (৩ আগস্ট) রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রুশ সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন একসময়ে, যখন গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি ‘উপযুক্ত অঞ্চলে’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। মূলত রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘ডেড হ্যান্ড’ কৌশল ফিরিয়ে আনার মন্তব্যের জবাবে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। তবে রয়টার্স বলছে, এই মহড়া ট্রাম্পের পদক্ষেপের অনেক আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের বরাতে সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, রাশিয়া ও চীনের জাহাজগুলো একটি যৌথ বহরে চলাচল করছে, যাতে রয়েছে একটি বড় রাশিয়ান সাবমেরিন বিধ্বংসী জাহাজ ও দুটি চীনা ডেস্ট্রয়ার। মহড়ায় দুই দেশের ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন অংশ নিচ্ছে, পাশাপাশি একটি চীনা সাবমেরিন উদ্ধারকারী জাহাজও অংশগ্রহণ করছে। ‘ম্যারিটাইম ইন্টারঅ্যাকশন-২০২৫’ নামে এই মহড়া চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। ইন্টারফ্যাক্স আরও জানায়, রাশিয়া ও চীনের সৈন্যরা কামান নিক্ষেপ, সাবমেরিন ও আকাশ প্রতিরক্ষা এবং সমুদ্রে যৌথ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ইউক্রেন রাশিয়ার সেনাঘাঁটি এবং একটি গ্যাস পাইপলাইনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ওই হামলায় তিনজন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছে। শনিবার কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। ইউক্রেনের এসবিইউ নিরাপত্তা পরিষেবা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে বহুদূরে নিক্ষেপযোগ্য ড্রোন দিয়ে চালানো এই হামলা রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর প্রিমোরস্কো-আখতারস্কের একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে। রাশিয়ার দক্ষিণ পেনজা অঞ্চলে ইলেকট্রোপ্রিবর নামে একটি কোম্পানিতেও হামলা চালানো হয়েছে, যা ‘রাশিয়ান সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের জন্য কাজ করে’ বলে জানিয়েছে এসবিইউ। হামলার শিকারে থাকা সংস্থা, রাশিয়ার সামরিক ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, বিমান চলাচলের সরঞ্জাম, সাঁজোয়া যান এবং জাহাজ তৈরি করে। পেনজা অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ মেলনিচেঙ্কো টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেছেন, এই হামলায় এক নারী নিহত এবং আরো দুইজন আহত হয়েছেন।