মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন আতঙ্কের নাম আরাকান আর্মি। দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সামরিক জান্তা বাহিনীর নিপীড়নে জর্জরিত রোহিঙ্গারা নতুন এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেখানে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞাসহ অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, এমনকি শিরদের মতো নৃশংস কার্যক্রমের অভিযোগ আনা হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জান্তা সরকারের বছরের পর বছর ধরে চলা নির্যাতন, নিপীড়ন এখন নতুন মোড় নিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে রাজ্যটির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জান্তা সরকারের কাছ থেকে দখল করা এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, লুটপাট, আটক, মারধর, জোরপূর্বক এবং বেআইনিভাবে নিজেদের বাহিনীতে নিয়োগসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে আরাকান আর্মি। সংস্থাটির এশিয়ার পরিচালক এলিয়েন পিয়ারসন বলেন, রাজ্যটিতে জান্তা এত দিন যেভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করেছে, আরাকান আর্মিও ঠিক একই কাজ করছে। এসব এখনই বন্ধ হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাখাইনের রোহিঙ্গাদের জীবন আরাকান আর্মি এবং জান্তা সরকারের নির্যাতনের মধ্যে আটকে গেছে। আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০২৩ সালের শেষ থেকে রাখাইন ও চীন রাজ্য থেকে চার লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যার মধ্যে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, বাড়িঘর, জমি, গবাদি পশু, মাছের ঘের, এমনকি কবরস্থানও দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। যার কারণে চরমে পৌঁছেছে খাদ্যসংকট। ২০২৩ সাল থেকে জান্তা সরকার এসব জায়গায় সহায়তাও ঢুকতে দিচ্ছে না। কিছু কিছু রোহিঙ্গা বাইরে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন। অনেকে দিনমজুরি করলেও তার বিনিময়ে পাচ্ছেন খুবই সামান্য পরিমাণ মজুরি। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী চুরি, ছিনতাইসহ নানা কর্মকা-ে যুক্ত। এমনকি রোহিঙ্গাদের অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে বড় ভূমিকা রাখছে তারা। সে জন্য এক একজন রোহিঙ্গার কাছ থেকে আট লাখ থেকে সোয়া দশ লাখ কিয়াত নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৪৬ হাজার থেকে ৭২ হাজার টাকার সমান। পিয়ারসন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও স্বাধীনতায় দাতা সংস্থা এবং সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। রাখাইন রাজ্যের সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় অবশ্যই আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।’ বিদ্রোহী-অধিকৃত রুবি খনির কেন্দ্র মোগোক শহরে শনিবার মিয়ানমার জান্তার বিমান হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে, একজন বাসিন্দা ও একটি সশস্ত্র বিরোধী দলের মুখপাত্র এ তথ্য জানান। ইয়াঙ্গুন থেকে এএফপি জানায়, হামলা সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য জান্তার মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ জনবহুল এলাকায় চালানো এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে সাতজন নিহত হয় ও পরে ঘটনায় আহত হওয়া আরো ছয়জন মারা যায়।