বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:০৭ এএম

কোন পথে গাজার ভবিষ্যৎ?

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১২:০৭ এএম

কোন পথে গাজার ভবিষ্যৎ?

বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দাবি করে আসছে যে, তারা গাজায় অনাহার দূর করতে কাজ করছে। জাতিসংঘ ইসরায়েলের কাছে অনুরোধ করেছে, তারা যেন আরও বেশি ত্রাণবাহী লরি এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেয়। আরব এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আকাশপথে ত্রাণ ফেলছে। গত ৫ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা বিতরণে আরও বড় ভূমিকা নেবে, যদিও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গাজার বাসিন্দারা বলছেন যে, সেখানকার অবস্থা খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। গাজায় পর্যাপ্ত খাবার প্রবেশ করছে না, এমনকি ত্রাণ বিতরণের জন্য কোনো আইনশৃঙ্খলাও নেই। বিমান থেকে খাবার পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে। সীমান্ত অতিক্রম করার পরপরই গাড়িবহর লুটপাট করা হচ্ছে। খাবার খুঁজে পেতে প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে যেতে হয়। কিন্তু এসব ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালাচ্ছে এবং শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া কালোবাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়।

এটা গাজার ভবিষ্যতের একটি আভাসও বলা যায়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও বছরের পর বছর ধরে অন্যদের করুণার ওপর অবরুদ্ধ এই উপত্যকাকে নির্ভরশীল থাকতে হবে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, গাজার ২০ লাখ মানুষের প্রতি মাসে ৬২ হাজার টন খাদ্যের প্রয়োজন। কিন্তু গাজায় এখন যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। গত ২ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত এই অঞ্চলে সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করে ইসরায়েল। এ সময় গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ বা জরুরি খাদ্যও প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ত্রাণ সহায়তা কিছুটা বাড়লেও তা পর্যাপ্ত বলা যাবে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ভ্যালেরি গুয়ারনিয়েরি বলেন, আমরা প্রতিদিন গাজায় ৮০ থেকে ১০০টি ট্রাক প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছি। তবে গত ৪ আগস্ট ইসরায়েল মাত্র ৪১টি লরি গাজা সীমান্তের একটি স্টেজিং এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেয়।

গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ আর এগুলো বিতরণ করা একটি দুঃস্বপ্নের মতো। গত ১৯ মে থেকে জাতিসংঘ গাজার সীমান্ত থেকে ২ হাজার ৬০৪টি লরিবোঝাই ত্রাণ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০০টি তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। বাকিগুলো পথিমধ্যেই ক্ষুধায় কাতর বেসামরিক নাগরিক বা সশস্ত্র ব্যক্তিরা আটকে দিয়েছে।

ইসরায়েলের নীতির পরিণতি সবচেয়ে বেশি ভোগ করতে হচ্ছে শিশুদের। কখনো কখনো শিশুরা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই এই পরিণতি ভোগ করছে। সেখানকার প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের গর্ভধারণের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া অনেক শিশুই কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ২২২টি মৃত শিশুর জন্ম হয়েছে, যা যুদ্ধের আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।

জাতিসংঘ-সমর্থিত ক্ষুধা নিরীক্ষণকারী সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) গত মাসে বলেছে যে, এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে তীব্র অপুষ্টির জন্য ২০ হাজার শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এমনকি তারা সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়েছে।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের শিশু বিশেষজ্ঞ মার্কো কেরাক বলেন, যখন খাবার গ্রহণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০-৮০ শতাংশে নেমে আসে, তখন শরীর বড় আঘাত পায়। মার্কো কেরাক দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায় শিশুদের চিকিৎসা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গাজার বেশির ভাগ শিশু প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই সামান্য খাবার পাচ্ছে। জুলাই মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুইলেন-বারে সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাবের কথা জানিয়েছে, এটি একটি বিরল অটোইমিউন রোগ, যার সঙ্গে ক্ষুধার সম্পর্ক থাকতে পারে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে শিশুরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

আজকের এই অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে গাজার প্রতিটি শিশু আজীবন দুর্বল স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে থাকবে। দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকা জনসংখ্যার ওপর গবেষণা থেকে এর ধারাবাহিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, চীনে ১৯৬০-এর দশকের দুর্ভিক্ষ এবং সম্প্রতি ইথিওপিয়ার মতো জায়গাগুলোতে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। যেসব শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের হার বেশি দেখা দিতে পারে। তাদের মানসিক বিকাশও ঝুঁঁকিতে রয়েছে।

গাজায় সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে সব ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব না হলেও পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ হয়ে না যায়, সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এটি টিকিয়ে রাখতে হবে। কারণ ইসরায়েলের যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজাবাসীদের সহায়তার ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম কাজ হবে শুধু ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা। স্যাটেলাইট চিত্রের ওপর ভিত্তি করে এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের এক মূল্যায়নে অনুমান করা হয়েছে যে, গাজাজুড়ে ৫৩ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর ম্যানহাটন থেকে অপসারণ করা ধ্বংসস্তূপের চেয়ে এই হার ৩০ গুণ বেশি। গাজা পুরোপুরি পরিষ্কার করতে কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!