ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভূমিকম্পে ১১ হাজার ৬০০ গর্ভবতী আহত নারীর জীবন সংশয়ে

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

পুরুষ উদ্ধারকারীরা আহত পুরুষ ও শিশুদের দ্রুত বের করে তাদের চিকিৎসা দিচ্ছিল। কিন্তু তিনি ও অন্যান্য আহত নারী ও কিশোরীদের, যাদের মধ্যে অনেকে রক্তাক্ত ছিল, তাদের এক পাশে ঠেলে দেওয়া হয়। আফগানিস্তানে কুনার প্রদেশের আন্দারলুকাক গ্রামের ১৯ বছর বয়সি আয়েশা জানান।  আয়েশা বলেন, ‘তারা আমাদের এক কোণে জড়ো করে আমাদের কথা ভুলে গেল।’ কেউ তাদের সাহায্যের প্রস্তাবও দেয়নি, তাদের কী প্রয়োজন, তা-ও জিজ্ঞেস করেনি, এমনকি কাছেও আসেনি।

কয়েক দফা ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি। ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় পর উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় পৌঁছায়। কিন্তু ভূমিকম্পে হতাহত নারীদের উদ্ধার করেনি তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে ভূমিকম্পে নয়, তালেবান আইনের কারণেই নিহত কয়েকশ আফগান নারী। আর জাতিসংঘ জানিয়েছে ভূমিকম্পে ১১ হাজার ৬০০ গর্ভবতী আহত নারীর জীবন সংসয়ে।

এমনকি যখন উদ্ধারের কাজ চলছিল তখনো বহু মেয়ে শিশু, যুবতী ও মহিলা ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে থাকলেও তাদের বের করা হয়নি। আবার যারা নিজে থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, তাদের অনেকেই রক্তাক্ত হলেও চিকিৎসাসেবা পাননি। শুধু মৃত মহিলাদের পোশাক ধরে টেনে বের করেন উদ্ধারকারীরা।

তালেবান সরকারের কঠোর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, পরিবারের সদস্য নন এমন কোনো পুরুষ ও নারীর মধ্যে শারীরিক স্পর্শ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, অনাত্মীয় কোনো নারীকে স্পর্শ করতে পারবে না কোনো পুরুষ। তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করেছে প্রায় ১১ হাজার ৬০০ গর্ভবতী নারীও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।  এদিকে আফগান নারী ত্রাণকর্মীদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নিতে তালেবান কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। আফগানিস্তানে ডব্লিওএইচওর উপ-প্রতিনিধি বলেন ড. মুক্তা শর্মা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ভূমিকম্পের পর, এখন একটি বড় সমস্যা হলো বিধ্বস্ত এলাকায় নারী কর্মীর ক্রমবর্ধমান অভাব। গুরুতর ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সহায়তা দেওয়ার জন্যই এমন আহ্বান জানানো হয়েছে। যাতে তারা পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারে এবং নারীদের সাহায্য করতে পারে যারা যতœ পাওয়ার জন্য লড়াই করছে।

ড. মুক্তা শর্মা বলেন, ওই এলাকায় প্রায় ৯০ শতাংশ চিকিৎসাকর্মী পুরুষ। বাকি ১০ শতাংশ ধাত্রী ও নার্স, যারা গুরুতর আঘাতের চিকিৎসা করতে পারেন না। এর ফলে নারীদের চিকিৎসা দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। কারণ নারীরা পুরুষ কর্মীদের সাথে মেলামেশায় অস্বস্তি বোধ করছেন বা ভয় পাচ্ছেন এবং একা ভ্রমণ করে সেবা নিতেও দ্বিধাবোধ করছেন। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ১ সেপ্টেম্বর ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ২হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। আহত হয় ৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ। এমন এক সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, যেখানে ২০২১ সালে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারের পর এবং তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই কঠোর সাহায্য হ্রাস ও মানবিক সঙ্কট চলছিল।তালেবান বলছে তারা নারীদের অধিকারকে তাদের ইসলামি আইনের ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্মান করে এবং পূর্বেও বলেছে যে তারা নিশ্চিত করবে নারীরা সাহায্য পেতে পারে।

তাদের প্রশাসন ২০২২ সালে আফগান নারী এনজিও কর্মীদের ঘরের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করে। মানবিক কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তবে অনেকেই বলেছেন এসব ছিল খ-িত এবং যথেষ্ট ছিল না, বিশেষ করে এমন জরুরি পরিস্থিতিতে যেখানে নারী কর্মীদের ভ্রমণ করা প্রয়োজন।

শর্মা বলেন, এর অর্থ হলো সাহায্য সংস্থাগুলো এবং নারী কর্মীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা ঝুঁকি নিতে সক্ষম নন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো বিশাল, মাহরাম (পুরুষ অভিভাবক প্রয়োজন) ইস্যুটি অব্যাহত রয়েছে এবং কার্যত কর্তৃপক্ষের দ্বারা কোনো আনুষ্ঠানিক ছাড় দেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান,তার দল গত সপ্তাহে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছে। এই কারণেই আমরা মনে করেছি কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে। এখনই সেই সময় যখন আরও বেশি নারী স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন।