বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

গাজা সম্মেলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ, স্বাক্ষর করেছে ৪ দেশ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

গাজা সম্মেলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ, স্বাক্ষর করেছে ৪ দেশ

মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।  নতুন এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার এক দিনেরও কম সময় পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ ঘোষণা দিয়েছেন যে, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির পর ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করবে। তার এই ঘোষণা নতুন সম্মত যুদ্ধবিরতি কাঠামোর প্রকাশ্য লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হলে, ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার জন্য তাদের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার পর ইসরায়েলের বড় চ্যালেঞ্জ হবে গাজায় হামাসের সব সন্ত্রাসী সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা- সরাসরি আইডিএফের মাধ্যমে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে এ কাজটি সম্পন্ন করা হবে।’কাটজ-এর মতে, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাসকে অস্ত্র থেকে নিরপেক্ষ করার নীতি বাস্তবায়নই এই চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য। এ পোস্টে তিনি আইডিএফ বাহিনীকে নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। এই ঘোষণা এমন এক সময় এল যখন- কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সংগঠিত হয়েছে। এ যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য গাজায় দুই বছর ধরে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও রক্তপাত বন্ধ করা।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, কাটজের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে যে, ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী শান্তির পদক্ষেপ হিসেবে নয়, বরং সামরিক আক্রমণ পুনরায় শুরু করার আগে একটি অস্থায়ী বিরতি হিসেবে দেখছে। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, কাটজের এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। কারণ, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় নতুন অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া এবং পুনরায় বৃহৎ আকারের হামলার ঘোষণা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। ইসরায়েলের টানা আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৬৭ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

এ ছাড়াও প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গাজায় এখন তীব্র খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যা মামলার শুনানি অব্যাহত রেখেছে, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা, অনাহার সৃষ্টি এবং গাজার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস করার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, কাটজের এই বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল স্থায়ী শান্তি নয়, বরং সামরিক আধিপত্য বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উঠছে।

এদিকে হোয়াইট হাউস সোমবার মিসরের শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনের ফলাফল হিসেবে প্রণীত পূর্ণাঙ্গ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন চার দেশের শীর্ষ নেতা। ঘোষণাপত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রাম্প ডিক্লারেশন ফর এন্ডিউরিং পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’ বা ‘টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প ঘোষণা’। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করা হয়েছে এটি।এতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। হোয়াইট  হাউস কর্তৃক প্রকাশিত সম্পূর্ণ অংশটি নীচে দেওয়া হল। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে—আমরা স্বাক্ষরকারীরা ট্রাম্প শান্তি চুক্তির সকল পক্ষের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এই চুক্তি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গভীর দুর্ভোগ ও ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে আশা, নিরাপত্তা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সংজ্ঞায়িত একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাই এবং তার পাশে আছি। আমরা একসঙ্গে এই চুক্তি এমনভাবে বাস্তবায়ন করব, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় অঞ্চলের সকল মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিত হয়।

ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি স্থায়ী শান্তি তখনই সম্ভব হবে, যখন ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত রেখে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সমৃদ্ধির পথে আগাতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি, অর্থবহ অগ্রগতি শুধুমাত্র সহযোগিতা ও ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। জাতি ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাতে বলা হয়েছে, আমরা এই অঞ্চলের গভীর ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব স্বীকার করি—যেখানে খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মসহ বিভিন্ন বিশ্বাসের শিকড় গভীরভাবে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা এই পবিত্র সম্পর্কগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাব এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষাকে সর্বাগ্রে রাখব। এ ছাড়া বলা হয়েছে, আমরা সব ধরনের উগ্রবাদ ও চরমপন্থা নির্মূলের প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ। কোনো সমাজই বিকশিত হতে পারে না, যদি সহিংসতা ও বর্ণবাদকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়, অথবা উগ্র মতাদর্শ নাগরিক জীবনের ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।

আমরা উগ্রবাদের জন্ম দেয় এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলার অঙ্গীকার করছি এবং শিক্ষা, সুযোগ সৃষ্টি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমরা ঘোষণা করছি যে, ভবিষ্যতের যেকোনো বিরোধ আমরা বলপ্রয়োগ বা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। আমরা স্বীকার করি, মধ্যপ্রাচ্য আর দীর্ঘ যুদ্ধ, স্থগিত আলোচনা বা অসম্পূর্ণ শান্তিচুক্তির পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে পারে না। গত দুই বছরের ট্র্যাজেডিগুলো আমাদের জন্য একটি কঠোর শিক্ষা— ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অতীতের ব্যর্থতার চেয়ে আরো ভালো ভবিষ্যতের দাবিদার।আমরা সহনশীলতা, মর্যাদা ও প্রতিটি মানুষের জন্য সমান সুযোগ কামনা করি, যাতে এই অঞ্চলটি এমন এক জায়গায় পরিণত হয়, যেখানে জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যৌথ নিয়তির নীতির ভিত্তিতে এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও যৌথ সমৃদ্ধির একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!