বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আফরোজা লুনা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০২:২৩ এএম

তিস্তাপাড়ে প্রতারণার ঢেউ

আফরোজা লুনা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০২:২৩ এএম

তিস্তাপাড়ে প্রতারণার ঢেউ

  • সরকারি সহায়তার নামে দালালদের হাতে লাখো টাকা
  • অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাকের নেতা পরিচয়ে ৫ লাখ টাকা আদায়
  • টাকা ফেরত চাইলে নারী-পুরুষ ও জেলেদের লাঞ্ছনা ও হুমকি
  • জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তদন্ত ও শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন

তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত গাইবান্ধা জেলার চারটি উপজেলা, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি, এখন দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে বিপর্যস্ত। নদীপারের হাজারো জেলে সরকারের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সেই সহায়তা পৌঁছানোর আগেই তা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। ঘর, টিন, টিউবওয়েল, চালের কার্ড কিংবা মানবিক সহায়তার নাম করে চলছে প্রতারণার ব্যবসা। এরই মধ্যে এই চার উপজেলায় দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন বহু জেলে পরিবার।

জানা গেছে, সরকারি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নদীপাড়ের জেলেদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় কিছু দালাল ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। অনেক জেলে নিজের ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রি করে কিংবা ধার করে এসব দালালের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন, আশায় ছিলেনÑ একটি টিনের ঘর, একটি টিউবওয়েল বা মানবিক সহায়তার চাল পাবেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর দালালদের দেখা মেলেনি।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ফলিয়া পুলবন্দি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এই প্রতারণার অন্যতম অভিযুক্ত ব্যক্তি। তিনি নিজে পেশায় জেলে নন, কিন্তু জেলেদের নেতা পরিচয়ে ওই এলাকার শতাধিক জেলের কাছ থেকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রতারিত জেলে রহিমা বেগম, শাপলা বেগম, লিলি বেগমসহ অনেকে জানান, ‘আমরা ভেবেছিলাম সরকার থেকে ঘর আর চাল পাব। রাজ্জাক ভাই বলেছিল, একটু টাকা দিতে হবে কাগজপত্রের জন্য। আমরা বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। এখন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো গালাগালি করে তাড়িয়ে দেয়।’

আরেক জেলে আমির খান বলেন, ‘চাল দেওয়ার কথা বলে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। এখন বলছে, নাম তালিকায় নেই, চাল পাব না। টাকা চাইতে গেলে ভয় দেখায়।’

অভিযোগ রয়েছে, টাকা ফেরত চাইতে গেলে নারী-পুরুষ উভয় জেলেকেই অপমান, হুমকি এমনকি শারীরিক লাঞ্ছনার মুখে পড়তে হয়। কাউকে কাউকে আবার পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত রাজ্জাক। ফলে প্রতারিত জেলেরা এখন নিঃস্ব ও হতাশ।

এক নারী জেলে আসমা খাতুন কণ্ঠরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঘর পাইনি, চাল পাইনি। উল্টো এখন সমাজে হাসির পাত্র হয়েছি। টাকা চাইলে বলে, ‘তোমাদের পুলিশে দিমু।’

এদিকে, ইলিশ প্রজননের ভরা মৌসুমে (অক্টোবর) নদীতীরবর্তী এলাকায় চলছে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান। কিন্তু মৎস্য বিভাগের তৎপরতা মাঠপর্যায়ে দেখা যাচ্ছে না। নদীঘেঁষা হাট-বাজারে ঝুলছে প্রচার পোস্টার, কিন্তু কর্মকর্তাদের দেখা মেলে না।

ফলে জেলেরা নির্বিঘেœ মা ইলিশ শিকার করছে, আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘দাদনের টাকা’য় বাধ্য হয়ে অনেকেই রাতের অন্ধকারে মাছ ধরছে। এসব ইলিশ পরদিনই চরাঞ্চলের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে।

জেলেরা বলছেন, ‘নদীতে পুলিশ বা মৎস্য কর্মকর্তাদের দেখা যায় না। উল্টো যারা মাছ ধরে, তাদের কাছ থেকে দালালরা টাকা নেয়। না দিলে নানান ভয়ভীতি দেখায়।’

গাইবান্ধা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রাশেদ বলেন, ‘জেলায় বর্তমানে ৭৬৪২ জন নিবন্ধিত ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর ৬৫০০ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। দালালদের সঙ্গে মৎস্য বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা টাকার বিনিময়ে প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে মাঠপর্যায়ে জেলেরা বলছেন, সরকার থেকে সহায়তা পৌঁছানোর আগেই তা দালালদের মাধ্যমে বণ্টিত হয়। ফলে প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হন, আর অপ্রকৃত ব্যক্তিরা টাকার জোরে চাল ও কার্ড পেয়ে যান।

সুন্দরগঞ্জের বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কামারজানি, মোল্লারচর, অ্যাড়ে-াবাড়ি, ফজলুপুর, বালাসীঘাট, সৈয়দপুর ঘাট, ফুলছড়ি ঘাট, বাজে চিথুলিয়া, সাঘাটার হলদিয়া, সাঘাটা বাজারসহ নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিনই জেলেদের মা ইলিশ ধরতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানায়, এসব দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা মৎস্য কর্মকর্তাদের তেমন উপস্থিতি নেই। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দালালরা সরকারি অভিযানকে ঠেকিয়ে রাখে নিজেদের স্বার্থে।

প্রকৃত জেলেরা বলছেন, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান চালালেও তদারকির অভাবে সেই উদ্যোগ মাঠে সফল হচ্ছে না। তা ছাড়া সহায়তা কর্মসূচির দুর্নীতি তাদের জীবনকে আরও বিপর্যস্ত করছে।

‘মাছ ধরতে গেলে ধরা পড়ে জেল, আর ঘর পেতে চাইলে দিতে হয় টাকা। আমরা যাব কোথায়?’ বললেন সাঘাটা উপজেলার জেলে কায়ছার আলী। জেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তর বলছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত দালাল ও ভুয়া জেলে তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!