বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি

জেলখানায় নয়, যেন কসাইখানা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

জেলখানায় নয়, যেন কসাইখানা

চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছে মায়ের মুখ। পরম স্নেহে সন্তানকে আঁকড়ে ধরে আছেন পিতা। ভাইকে আলিঙ্গন করে কান্না ধরে রাখতে পারছে না ভাই। বাসের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে স্বজনের হাত স্পর্শ করছেন কেউ কেউ। এ দৃশ্যগুলো গাজার খান ইউনিসের। বন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়ে এভাবেই আবেগে ভেসে গেছেন হতভাগ্য ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘদিন কারাগারের অন্ধকূপে ধুঁকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের একজন কামাল আবু শানাব (৫১)। তিনি বলেন, ‘এ এক বর্ণনাতীত কষ্টের যাত্রা ছিল। অনাহার, অন্যায় আচরণ, নির্যাতন, গালাগালÑ ইসরায়েলে বন্দি একজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা সম্ভব, তার সবই আমাদের সঙ্গে ঘটেছে।’

বেইতুনিয়ায় বাস থেকে নামতেই বন্দিদের কাঁধে তুলে নিয়ে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠেন ফিলিস্তিনিরা। বন্দিদের পরিয়ে দেওয়া হয় ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী ‘কেফিয়েহ স্কার্ফ’। বেশির ভাগ বন্দির মুখেই উচ্ছ্বাসের হাসি, কেউ বুকে জড়িয়ে নেন প্রিয় মানুষকে। অনেকেই আবার যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে চুপচাপ বসে পড়েন ক্লান্ত শরীরে। অনেকেই বন্দিদের ঘিরে আনন্দে ফাঁকা গুলি ছোড়েন আকাশে।

খান ইউনিসে ইসরায়েলি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া বেশকিছু ফিলিস্তিনির কাছ থেকে মুক্তির অনুভূতি শুনেছে আলজাজিরা। আবদুল্লাহ আবু রাফি নামের এক ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়ে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, এ এক ‘দুর্দান্ত অনুভূতি’। মঙ্গলবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়, রাফি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আমরা ওফার কারাগার নামে একটি কসাইখানায় ছিলাম। অনেক যুবক এখনো সেখানে আছে। ইসরায়েলি কারাগারের পরিস্থিতি খুবই কঠিন। কোনো নরম বিছানা নেই। তারা সর্বদা গদি সরিয়ে নেয়।

খাবারের পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থা সেখানে অত্যন্ত কঠিন।’ আরেকজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি ইয়াসিন আবুও ইসরায়েলি কারাগারের পরিস্থিতি ‘খুব, খুব খারাপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘খাদ্য, নিপীড়ন এবং মারধরের দিক থেকে, সবকিছুই খারাপ ছিল। খাবার বা পানীয় ছিল না। আমি চার দিন ধরে খাইনি।’ সোমবার মুক্তি পাওয়া সাইদ শুবাইর বলেছেন যে, তিনি তার অনুভূতি কীভাবে বর্ণনা করবেন তা জানেন না। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘অনুভূতি অবর্ণনীয়। সূর্য দেখা এক অবর্ণনীয় অনুভূতি। আমার হাত হাতকড়া থেকে মুক্ত। স্বাধীনতা অমূল্য।’ আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে যাবজ্জীবন ও দীর্ঘ কারাদ- ভোগকারী এবং ১৭১৮ জন বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। গাজায় যুদ্ধের সময় ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের।

গাজা উপত্যকার শহর দেইর আল-বালাহ’র বাসিন্দাদের জন্য এখন একটাই স্বস্তি। এখানে আর কোনো ড্রোন উড়তে দেখা যাচ্ছে না। বোমা বিস্ফোরণও হয়নি। পাওয়া যায়নি নতুন করে হত্যার খবর। মঙ্গলবার শহরটি থেকে এমন তথ্য জানিয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি। তিনি লিখেছেন, এমন স্বস্তি থাকলেও বাসিন্দাদের ভাবনা এখন পরবর্তী করণীয় নিয়ে। বেশির ভাগ মানুষ বসতঘর হারিয়েছেন। বলতে গেলে তাদের নিজের বলতে যা ছিল সেগুলোর কিছুই আর নেই। অর্থ নেই, শিক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বসে গেছে। 

তাহলে যুদ্ধবিরতির পর কী হবে? এটাই এখন ফিলিস্তিনিদের মূল প্রশ্ন। যুদ্ধবিরতির পর বোমার শব্দ না শুনে তাদের ঘুম ভাঙলেও, দিনের শুরুতেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হচ্ছে। এখানে স্বাভাবিক জীবনযাপনের কোনো পরিবেশ অবশিষ্ট নেই। সবচেয়ে মৌলিক চাহিদাগুলোÑ পানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুদ্ধের সময় দখলদার ইসরায়েলকে সহায়তা করায় গাজায় প্রকাশ্যে ৮ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সংবাদমাধ্যম সাফাক মঙ্গলবার  জানিয়েছে, একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে এই ৮ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। বার্তাসংস্থা ইয়েনেত জানিয়েছে, হামাস এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে।এরআগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, হামাসকে অস্থায়ী সময়ের জন্য গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরই একসঙ্গে আটজনকে গুলি করে দ- কার্যকরের খবর শোনা গেলো। সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখ ঢাকা হামাসের যোদ্ধারা আটজনকে নিয়ে এসেছে। যাদের হাত বাঁধা এবং চোখে কাপড় লাগানো। হামাস জানিয়েছে, এই ব্যক্তিরা গত দুই বছরের যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- করেছে। এছাড়া দোঘমুস গোষ্ঠীর সঙ্গেও ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়েছে হামাসের যোদ্ধারা। এই গোষ্ঠী গাজার অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র দল। ইসরায়েলি বার্তাসংস্থা ইয়েনেত জানিয়েছে, দোঘমুস গোষ্ঠীর ৫২ সদস্যকে হত্যা করেছে হামাসের যোদ্ধারা। অপরদিকে একই সময় হামাসের ১২ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। যারমধ্যে হামাসের সিনিয়র নেতা বাসিম নাঈমের ছেলেও আছেন।

গাজা উপত্যকার ৮০ শতাংশেরও বেশি এবং গাজা সিটির ৯২ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। গাজা পুনর্গঠনে কী কী দরকার তার চাহিদা মূল্যায়ন করছে সংস্থাটি। জেনেভায় ইউএনডিপির এক মুখপাত্র গাজার ধ্বংসস্তূপকে ‘বিধ্বংসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সংস্থাটি অনুমান করছে, সেখানে কমপক্ষে ৫৫ মিলিয়ন বা সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ইউএনডিপি বলছে, তারা কিছু অপসারণ শুরু করেছে, কিন্তু অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক তাদের কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কার্যক্রমের সময় অনেক মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো শনাক্ত ও সমাহিত করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তারা।

মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকার পরও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার উত্তর গাজা উপত্যকায় এই গুলির ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনীর দিকে এগিয়ে আসা ‘সন্দেহভাজনদের’ কাছ থেকে সৃষ্ট হুমকি দূর করতে গুলি চালানো হয়।ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আরও দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনীর প্রাথমিক প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত একটি সীমারেখা অভিযুক্তরা অতিক্রম করেছিল, যা চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল। গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার উপত্যকাজুড়ে দুটি পৃথক ঘটনায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গুলিতে মোট ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজা থেকে হামাসের হাতে থাকা চারজন নিহত বন্দির দেহের কফিন গ্রহণ করেছে ইসরায়েল। সোমবার মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়। পরে ইসরায়েলি সেনারা গাজা অঞ্চলে রেড ক্রসের মাধ্যমে এই চার কফিন গ্রহণ করেন। হামাসকে বাকি ২৪ জন নিহত বন্দির দেহ হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে তেল আবিব। হস্তান্তর করা চারজনের মধ্যে ছিলেন গাই ইলুজ, ইয়োসি শারাবি, বিপিন জোশি ও ড্যানিয়েল পেরেজ।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!