দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে ফের যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনিয়ে এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে সংঘাতকে বৃহত্তর আকারে বিস্তৃত করতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৬০০ মাইল দীর্ঘ দুর্গম পাহাড়ি সীমান্তজুড়ে নিয়মিত লড়াই চলছে, যা কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করছে। আফগানিস্তানের কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা প্রধানদের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গেছে, যদিও ইসলামাবাদ এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। খামা প্রেসের খবরে বলা হয়েছে, আফগান কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ, গোয়েন্দা প্রধান আসিম মালিক এবং দুই সিনিয়র সামরিক জেনারেলের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
আফগানিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভিযানে ২০০ জনেরও বেশি তালেবান ও তাদের মিত্র যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এই অভিযানে ২৩ জন পাক সেনাও নিহত হয়েছেন। খবর সামাটিভির। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শত্রুপক্ষের এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া। তবে পাকিস্তানি বাহিনী ‘সময়োপযোগী ও দৃঢ় পদক্ষেপ’ নিয়ে হামলাটি প্রতিহত করেছে এবং তাদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। অন্যদিকে তালেবান সরকার দাবি করেছে শনিবার রাতে আফগান বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি এই অঞ্চলে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে উসকানিমূলক হামলার পর বর্তমানে ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে ‘কোনো সম্পর্ক নেই’। সোমবার (জিও নিউজের অনুষ্ঠান ‘শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ খাজা আসিফ বলেন, আজকের দিনে আমাদের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই। হামলার উসকানি দেওয়ার জন্য আফগানিস্তানকে দায়ি করেছেন তিনি। পাকিস্তানের দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দের বাহরামচা জেলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তানি সেনার হাতে ৭ তরুণ নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। তাঁরা ঠিকা শ্রমিক হিসেবে সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করছিলেন। তবে গত দুই দিনের মধ্যে ঠিক কোন সময় এই ৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে নিহত সামরিক-বেসামরিক নাগরিকদের মরদেহ বিনিময় নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিচয়ও জানা গেছে। তালেবান বাহিনীর সদস্যও সংঘাতে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে একধরনের অনানুষ্ঠানিক অস্ত্রবিরতির বিষয়ে মোটামুটি দুই দেশ একমত হয়েছে। আপাতত পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরস্পরকে আক্রমণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন