চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা। আর অন্যদিকে ‘রেয়ার আর্থ’ (দুর্লভ খনিজ) নিয়ে দ্বন্দ্ব। এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুর্লভ খনিজ খাতে চুক্তি করল যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গত সোমবার হোয়াইট হাউসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে ওই চুক্তিতে সই করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তি অনুযায়ী, চীনের ওপর দীর্ঘদিনের খনিজ নির্ভরতা কমিয়ে পশ্চিম বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সমানভাবে দেড় বিলিয়ন ডলার করে মোট তিন বিলিয়ন ডলার অস্ট্রেলিয়ার খনিজ খাতে বিনিয়োগ করবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, চুক্তির আওতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অস্ট্রেলিয়ার খনিজ পদার্থ খনন, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিযোগ্য করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে খনিজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মূল্যসীমা নির্ধারণেও (প্রাইস ফ্লোর) অংশ নেবে। এতে পশ্চিমা দেশগুলো দুর্লভ খনিজ প্রাপ্যতায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ অর্জনের পাশাপাশি উৎপাদনকারী দেশগুলো ন্যায্য দাম পাবে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যে শতভাগ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রেয়ার আর্থ ও সংশ্লিষ্ট উপাদান রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করায় বেইজিংয়ের ওপর এই শতভাগ শুল্ক চাপিয়েছে ওয়াশিংটন। চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যালিয়াম ও ম্যাগনেট জাতীয় রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে আরও কঠোর হয়েছে। এমনকি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান চীন থেকে এসব খনিজ কিনে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে শি জিনপিং সরকার। ফলে বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে একপ্রকার খনিজভিত্তিক ‘শীতল যুদ্ধ’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে প্রভাব বিস্তারকারী অন্যতম প্রয়োজনীয় খনিজ কাঁচামালের ক্ষেত্রে কেবল ট্রাম্প প্রশাসনই নয়, বেসরকারি বিনিয়োগও আরও বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এরই মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সাতটি খনিজ প্রকল্পে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে উৎপাদিত খনিজ ব্যবহার হবে মূলত মার্কিন প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, যোগাযোগ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি খাতে। ট্রাম্প-আলবানিজ চুক্তির আওতায় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে একটি গ্যালিয়াম পরিশোধনাগার নির্মাণেও বিনিয়োগ করবে। গ্যালিয়াম একটি আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও মাইক্রোচিপ নির্মাণে অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্রে গ্যালিয়াম রপ্তানি প্রায় বন্ধ করে দেওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই এর বিকল্প খুঁজছিল ওয়াশিংটন।
বিশ্বের রেয়ার আর্থ খনিজ খাতে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীন বিশ্বব্যাপী এই খনিজগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ পরিশোধন এবং ৯৮ শতাংশ ম্যাগনেট (চুম্বক) উৎপাদনের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। শুধু তাই নয়, চীন বর্তমানে খনিজ রপ্তানিতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবেও এগুলো ব্যবহার করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে রেয়ার আর্থ চুক্তিকে শুধু একটি অর্থনৈতিক সমঝোতা নয় বরং বৃহত্তর ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের অংশ হিসেবেও দেখছেন বিশ্লেষকরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন