ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সুদানে সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি গ্রুপ আরএসএফের যে সংঘাত, তাতে ভিনদেশি শক্তির মদদ আছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। গণমাধ্যমটি দাবি করছে, দারফুর থেকে উদ্ধার করা অনেক অস্ত্রই এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দুবাইতে স্বর্ণ পাচার করে সংগঠন চালায় আরএসএফ এমন অভিযোগও করছে সিএনএন। আফ্রিকা মহাদেশ তথা সুদানের সঙ্গে নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক স্বার্থ থাকায় উঠে আসছে মিশর ও সৌদি আরবের নামও।
সুদানের দারফুর অঞ্চলের আল ফাশেরে সম্প্রতি মিলিশিয়া বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স আরএসএফ আর সেনাবাহিনী যে সহিংসতা দেখাল, তা সহজে ভুলবে না বিশ্ববাসী। আরএসএফ এত নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করছে যে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকেও দেখা গেছে রক্তধারা। ধর্ষিত হয়েছেন দেড় শতাধিক নারী। আল ফাশের দখলের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টার গণহত্যার তীব্রতাকে রুয়ান্ডার গণহত্যার প্রথম ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে তুলনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সংঘাতে সুদানজুড়ে মারা গেছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। কিন্তু টনক নড়েনি বিশ্বের। সাম্প্রতিক সহিংসতায় শীত ঘুম ভেঙেছে বিশ্বের। মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজিও হয়েছে আরএসএফ। মোটা দাগে দেখলে সংঘাতটি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মনে হলেও মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের দাবি সাম্প্রতিক সংঘাত এত তীব্র আকার ধারণ করেছে বিদেশি শক্তির মদদে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী দেশ সুদান নিয়ন্ত্রণ করে গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পরিবহন পথ লোহিত সাগরের ৫শ মাইল উপকূল। সোনার খনি ছাড়াও আছে প্রচুর কৃষিজমি। এ ছাড়া দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া নীল নদের ৪০০ মাইল দীর্ঘ শাখা আঞ্চলিক পানি বণ্টনের রাজনীতিতে এগিয়ে রাখে সুদানকে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সুদানের এই অভ্যন্তরীণ সংঘাতে মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যের ভিত্তিতে সিএনএন জানিয়েছে, আরএসএফ যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে তার বড় একটি অংশের জোগানদাতা সংযুক্ত আরব আমিরাত। অভিযোগ আছে, আমিরাতভিত্তিক বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সংযোগ আছে আরএসএফ বিদ্রোহীদের। এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে ওয়াশিংটন।
এরা একদিকে যেমন আরএসএফ-কে অস্ত্র সরবরাহ করত। অন্যদিকে খনি থেকে উত্তোলিত সোনা দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে নিজেদের চালাত আরএসএফ। এদিকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সুদানে স্থিতিশীলতা চায় মিশর। চলমান অস্থিরতার কারণে নীল নদকেন্দ্রিক বাণিজ্যব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হলে বিপাকে পড়বে দেশটি। যদিও সিএনএন বলছে, সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে নিজ দেশে চাপ পড়বেন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ। কারণ আরএসএফের পেছনে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আরব আমিরাতের অর্থ ছাড়া বিকল্প নেই প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহর। যদিও ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় সুদানের সেনাপ্রধান ও ডি-ফ্যাক্টো নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে সমর্থন দেয় সৌদি আরব ও মিশর। যেখানে জড়িত ছিল দুই দেশেরই অর্থনৈতিক স্বার্থ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন