সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের আলোচকরা শান্তি পরিকল্পনার ‘হালনাগাদ ও পরিমার্জিত কাঠামো’ তৈরি করেছেন এবং সামনের দিনগুলোতে ওই পরিকল্পনা নিয়ে আরও ‘নিবিড়’ কাজ অব্যাহত থাকবে। তাদের যৌথ বিবৃতিতে জেনিভায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ‘খুবই ফলপ্রসূ’ হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় শান্তি পরিকল্পনাটি আরও নিখুঁত করে তোলার ক্ষেত্রে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন এ শান্তি পরিকল্পনাকে রাশিয়া সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু কিয়েভের নেতারা ও ইউরোপ একে রাশিয়ার প্রতি ‘বেশি পক্ষপাতদুষ্ট’ মনে করছে, বলছে বিবিসি। রুবিও বলেছেন, পরিকল্পনাটিতে ‘আরও কিছু কাজ বাকি আছে’; অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দল যে তাদের কথা শুনছে তার ‘সংকেত মিলেছে’। রোববার পরের দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রুবিও বলেছেন, তাদের আলোচক দল জেনিভায় ‘খুবই ভালো দিন’ কাটিয়েছে। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল ২৮ দফার পরিকল্পনার ‘অসম্পূর্ণ অংশ’ কমিয়ে আনা, তাতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রার’ অগ্রগতি হয়েছে, বলছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ শীর্ষ কূটনীতিক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, পরিকল্পনা তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একমত হবেন, এরপরই তা রাশিয়াকে দেওয়া হবে। রুশ আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রÑএমনটাই দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে এটাও বলেন, ওয়াশিংটনের এই সর্বোচ্চ চেষ্টার বিপরীতে ইউক্রেনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের খাতা শূন্য। এই প্রসঙ্গে আবারও তিনি ইউক্রেনকে ‘অকৃতজ্ঞ’ আখ্যা দিয়েছেন। রোববার ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যমের পোস্টের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। রোববার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের শীর্ষ নেতারা ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। এই আলোচনাকে সামনে রেখে ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগের বিপরীতে ইউক্রেনের কৃতজ্ঞতা একেবারে শূন্য।’ মার্কিন-সমর্থিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়াকে ইউক্রেনীয় ভূখ- ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে ‘বড় সমস্যা।’ রোববার রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তি করতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ট্রাম্পের ২৮ দফা নিয়ে আলোচনায় বসেন নেতারা। ওই আলোচনাকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। কিন্তু সোমবার সুইডিশ সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, পুতিন যা চুরি (ইউক্রেনের অঞ্চল) করেছেন, তার আইনি স্বীকৃতি চাইছেন, যা সবচেয়ে বড় সমস্যা। গত সপ্তাহে যখন এই ২৮ দফা পরিকল্পনাটি প্রকাশিত হয়, তখন ইউরোপীয় নেতারা এর সমালোচনা করে বলেন, এটি রাশিয়ার পক্ষে গিয়েছে। এদিকে, বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে, রোববার খারকিভে ড্রোন হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। পার্লামেন্টে জেলেনস্কি আরও বলেন, ট্রাম্পের শান্তি আলোচনার প্রধান সমস্যা হলো ভøাদিমির পুতিনের ইউক্রেন থেকে ‘চুরি করা’ ভূখ-ের আইনি স্বীকৃতির দাবি। ‘এটি আঞ্চলিক অখ-তা এবং সার্বভৌমত্বের নীতি লঙ্ঘন করবে।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আইন প্রণেতাদের জোর দিয়ে বলেন যে, জোর করে সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না। বক্তৃতা শেষ করার আগে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখুন। রাশিয়া এখনো মানুষ হত্যা করছে।’
ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটনের খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য রোববার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠক করেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে ২৮ দফা প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। তীব্র আপত্তি জানিয়ে শান্তি প্রস্তাবের একটি খসড়াও তৈরি করেছিল ইউরোপীয় মিত্ররা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মার্কিন প্রস্তাবটিতে সংশোধন করা হয়েছে। সোমবারও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবে ইউক্রেনকে ভূখ- ছাড়তে, সামরিক সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে ও ন্যাটোতে যোগদানের আকাক্সক্ষা ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। যা ইউক্রেনের জন্য পরাজয় স্বীকারের সমতুল্য হিসেবে ধরা হচ্ছিল। ট্রাম্প এ প্রস্তাবের বিষয়ে জেলেনস্কিকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছেন। তবে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে তার নমনীয় মনোভাব দেখা গেছে। জেনেভায় দুই পক্ষ আলোচনায় বসে একটি সংশোধিত শান্তি কাঠামোর খসড়া তৈরি করেছে। যদিও এ নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। সংশোধিত পরিকল্পনায় কীভাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষা করা হবে বা রাশিয়ার চলমান হুমকি মোকাবিলা করা হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। দুই পক্ষ বৃহস্পতিবারের আগে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাবেন। যদিও মার্কিন কূটনীতিক মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ট্রাম্প নির্ধারিত সময়সীমা চূড়ান্ত না-ও হতে পারে। সূত্রের মতে, জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফর করতে পারেন, যেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিকল্পনার সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। প্রথম প্রস্তাবটি মার্কিন প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের জন্যও আশ্চর্যজনক ছিল। দুই সূত্র জানিয়েছে, এটি অক্টোবরে মিয়ামি বৈঠকে তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্পের জামাই জ্যারেড কুশনারসহ অন্য কর্মকর্তারা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্তের লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হওয়া আলোচনায় অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। খুব শিগগিরই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন তিনি। জেনেভার স্থানীয় সময় ইউক্রেনীয় এবং ইউরোপের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
জার্মানির সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ তৎপর দেশটির সরকার। সম্প্রতি জার্মান চ্যান্সলর ফ্রেডরিক মার্জ দেশটির সামরিক শাখাকে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দেশটির আইনসভায় একটি খসড়া বিল পাস করেছে । জোট সরকারের বিশ্বাস, সম্ভাব্য রুশ হুমকি মোকাবিলা ও যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো আকস্মিক পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বেশ কার্যকর হবে সিদ্ধান্তটি।

