ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

পিঁপড়া ও বনের রাজা

ফারুক হোসেন সজীব
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০২:২৬ এএম

এক অরণ্যে একটি পিঁপড়া ছিল। সেই পিঁপড়াটির নাম ছিল বেশ অদ্ভুত- হুট্টি-মুট্টি। হুট্টি মুট্টি দেখতে ছোট হলেও সে ছিল ভীষণ চালাক-চতুর। সে পুরো অরণ্য দাপিয়ে বেড়াত। সে সব সময় এমন কিছু করতে চাইত, যেন অরণ্যের সবাই তাকে মেনে চলে। আসলে হুট্টি-মুট্টির স্বপ্ন ছিল সে একদিন এই অরণ্যে গাছের রাজা হবে। যদিও সে জানত, শুধু নিজের বড় নাম রাখলেই রাজা হওয়া যায় না! আর পিঁপড়া কখনো গাছের রাজা হতে পারে না। তবু সে প্রতিজ্ঞা করল, যে করেই হোক সে এই অরণ্যে গাছেদের রাজা হবেই! এভাবেই তার দিন কাটছিল। একদিন হুট্টি-মুট্টির চোখে পড়ল এক বিশাল গাছ। গাছটির শাখা প্রশাখা এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, প্রতিটি শাখার উপর অসংখ্য পাখি বাসা বেঁধেছিল। গাছটিকে বেশ জ্ঞানী মনে হচ্ছিল।

কারণ পিঁপড়া জানে যার অধিক জ্ঞান থাকে সে মাটির দিকে নুয়ে পড়ে। হুট্টি-মুট্টিও তো মাটির দিকে নুয়ে হাঁটে। তাই তাকেও জ্ঞানী বলা চলে বৈকি! হুট্টি-মুট্টি দ্রুত গাছের নিচে এল। সে গাছটির দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা! আপনি তো সত্যিই খুব বড় এবং শক্তিশালী। আমি যদি আপনাকে রাজা হিসেবে মেনে নেই। তবে আপনি নিশ্চয় আমাকে সাহায্য করবেন! তাই না? গাছটি হুট্টি-মুট্টির কথা শুনে বলল, আমি সত্যিই অনেক বড়। কিন্তু রাজা হওয়ার জন্য শুধু বড় হওয়াই যথেষ্ট নয়। আরও অনেক গুণাবলি দরকার। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে রাজা হওয়ার যে গুণাবলি আছে সে বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারি।

হুট্টি-মুট্টি শুনে খুবই খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ! আমি সব শিখতে চাই। আমি গাছের রাজা হতে চাই। আমাকে সব কিছু শিখিয়ে দিন। গাছটি তার শাখায় একটি ছোট্ট পাতার ওপর হুট্টি-মুট্টিকে বসিয়ে বলল, সর্বপ্রথম তোমাকে জানতে হবে কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে হয়। রাজা হওয়া মানে শুধু ক্ষমতা প্রদর্শন করা নয়। মানুষকে ভালোবাসতে এবং সাহায্য করতে হয়। সবার দুঃখ মোচন করতে হয়। গাছটি হুট্টি-মুট্টিকে আরও অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিল। হুট্টি-মুট্টি গাছের সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। পরের দিন থেকেই হুট্টি-মুট্টি গাছপালা, ফুল এবং অন্যান্য প্রাণীদের সাহায্য করতে লাগল।

ফুলের মধু নিয়ে মৌমাছিদের জন্য উৎসর্গ করল। নদীর পাশে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করল। হুট্টি-মুট্টি তার কাজগুলো এত ভালো ভাবে করল যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই অরণ্যের সব প্রাণীরা তার প্রশংসা করতে লাগল। একদিন গাছটি তাকে ডেকে বলল, তুমি সত্যিই অসাধারণ কাজ করেছ। তুমি এখন প্রকৃত রাজা হওয়ার যোগ্য হয়েছ। কারণ তুমি বুঝতে পেরেছ যে, রাজা হওয়া শুধু শক্তির ব্যাপার নয়। ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমেই রাজা হওয়া যায়। হুট্টি-মুট্টি বলল, আমি রাজা হলে আমার কি কোন সিংহাসন থাকবে? গাছটি হেসে বলল, অবশ্যই থাকবে। হুট্টি-মুট্টি বলল, সিংহাসন দিয়ে আমি কী করব? গাছটি বলল, কেন তুমি বসে বসে সবাইকে হুকুম দেবে? হুট্টি-মুট্টি বলল, কিন্তু আমি সিংহাসন চাই না! আর আমি বসেও থাকতে চাই না। তুমি নিশ্চয় জান।

পিঁপড়ারা কখনো অলস বসে থেকে শুধু শুধু হুকুম দেয় না। গাছটি শুনে খুশি হয়ে বলল, তাহলে তুমি কী করতে চাও? হুট্টি-মুট্টি বলল, আমি কঠোর পরিশ্রম করতে চাই! আর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবার উপকার করতে চাই! ছোট, বড় সবাইকে ভালোবাসতে চাই! তাদের সাহায্য করতে চাই। গাছটি বলল, এটাই আসল রাজার বৈশিষ্ট্য। আজ থেকে তুমি এই অরণ্যের গাছেদের রাজা হতে পেরেছ। তাই আমি আমার শরীরের সমস্ত শাখা-প্রশাখা তোমাকে দিয়ে দিলাম। তুমি আজ থেকে এই অরণ্যের যত গাছ পালা আছে সবার শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করতে পারবে। খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে।

কোন গাছ তোমাকে বাঁধা দেবে না। শুনে হুট্টি-মুট্টি বলল, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। এখন তাহলে আমাকে বিদায় দাও! আমি আর সময় নষ্ট করতে চাই না। সবার উপকার করতে চাই। গাছটি হুট্টি-মুট্টিকে বিদায় জানাল। হুট্টি-মুট্টি অরণ্যের অন্যসব প্রাণীদের উপকার করার জন্য বেরিয়ে পড়ল। গাছটি হুট্টি-মুট্টি চলে যাওয়া দেখে মনে মনে বলল, একজন প্রকৃত রাজার এটাই তো বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত! সে শুধু সবার উপকার করে যাবে! সবাইকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসবে। প্রয়োজনে সবার জন্য নিজের জীবনও উৎসর্গ করে দেবে! গাছটি হুট্টি মুট্টির জন্য আশীর্বাদ করল!