বলিউডের এক অধ্যায়ের নাম ধর্মেন্দ্র। তিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেতা নন, হিন্দি সিনেমার জগতে তাকে ডাকা হয় ‘হি-ম্যান’ নামে। ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময়ে হ্যান্ডসাম লুক, রোমান্টিক অভিব্যক্তির সঙ্গে অ্যাকশন সিনে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন এই বলি অভিনেতা। সেই কারণেই তিনি দেশের একজন ‘আইকন’ হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন দশকের পর দশক ধরে। ৯০ বছর পূর্ণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি ছিল, এর মাঝেই চিরবিদায় নিলেন বলিউডের এই কিংবদন্তি অভিনেতা। গতকাল এই অভিনেতা প্রয়াত হয়েছেন। চলুন তার অভিনীত সেরা কয়েকটি সিনেমা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
শোলে (১৯৭৫) : ধর্মেন্দ্রর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা ‘শোলে’। জয়-ভিরুর বন্ধুত্ব, গব্বর সিংয়ের আতঙ্ক আর ‘বসন্তী ইন কো কুছ মত বোলনা’ সংলাপের মাধ্যমে এই সিনেমা ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ভিরু চরিত্রে ধর্মেন্দ্রর সরলতা, হাস্যরস আর বীরত্ব আজও দর্শকদের কাছে সমান জনপ্রিয়।
চুপকে চুপকে (১৯৭৫) : এই সিনেমা প্রমাণ করে ধর্মেন্দ্র শুধু অ্যাকশন নয়, নিখাদ কমেডিতেও সমান পারদর্শী। এক অধ্যাপক হিসেবে নিজের পরিচয় গোপন করে প্রেমিকার পরিবারের মধ্যে হালকা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেন তিনি। হৃষিকেশ মুখার্জির এই ক্লাসিক কমেডি আজও হালকা মেজাজে হাসির খোরাক জোগায়।
সত্যকাম (১৯৬৯) : ধর্মেন্দ্রর জীবনের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স বলা হয় এই সিনেমাকে। এখানে তিনি আদর্শবাদী এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি নিজের নীতির সঙ্গে আপস করেন না। সিনেমাটি ধর্মেন্দ্রকে একজন ‘সিরিয়াস অ্যাক্টর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
আনন্দ অর আনন্দ (১৯৮৪) : এখানে ধর্মেন্দ্র অভিনয় করেন নিজের ছেলে সানি দেওলের সঙ্গে। বাবা-ছেলের সম্পর্ক, দায়িত্ববোধ ও জীবনের দ্বন্দ্ব এই সিনেমাতে অনবদ্যভাবে ফুটে ওঠে। দুই প্রজন্মের এই যুগল দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
ফাগুন (১৯৭৩) : এই রোমান্টিক সিনেমাতে ধর্মেন্দ্র ও ওয়াহিদা রহমানের রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করে। এক গ্রামীণ প্রেম কাহিনিতে ধর্মেন্দ্র দেখান কতটা সংবেদনশীল ও গভীর হতে পারে প্রেমের অনুভূতি।
হকিকত (১৯৬৪) : ভারত-চীন যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই দেশাত্মবোধক সিনেমাতে ধর্মেন্দ্রর অভিনয় ছিল নিঃস্বার্থ সৈনিকের প্রতীক। এটি তার প্রথমদিকের একটি মাইলফলক সিনেমা, যা তাকে দেশের নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা দেয়।
দো বাদান (১৯৬৬) : এই সিনেমায় ধর্মেন্দ্র ছিলেন একজন হৃদয়ভাঙা প্রেমিক, যার নিঃস্বার্থ প্রেম দর্শকদের চোখে জল এনে দেয়। ‘ভুলা না দে সে’ গানের সঙ্গে তার সংযত অভিনয় আজও অমর।
জীবন মৃত্যু (১৯৭০) : অভিনয়ের তীব্রতা আর প্রতিশোধের আবেগে ধর্মেন্দ্র এখানে একেবারে নতুন রূপে হাজির হন। সিনেমাটি তাকে অ্যাকশন-হিরো হিসেবে বলিউডে পাকাপোক্ত অবস্থান এনে দেয়।
দ্য বার্নিং ট্রেন (১৯৮০) : একই সঙ্গে অ্যাকশন, থ্রিলার ও দেশপ্রেমের এক অনন্য সংমিশ্রণ এই সিনেমা। ধর্মেন্দ্রর সাহসী চরিত্র এবং চমকপ্রদ রেল দৃশ্য দর্শকদের জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
রাজা জানি (১৯৭২) : ধর্মেন্দ্রর এক ভিন্নধর্মী রোমান্টিক চরিত্র। এখানে তিনি দেখিয়েছেন রোমান্স ও হিউমারের নিখুঁত ভারসাম্য। সিনেমাটির গান ও সংলাপ আজও ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।
ছোটবেলায় সিনেমার প্রতি গভীর টানই তাকে মুম্বাইয়ে নিয়ে আসে। ১৯৬০ সালে ‘দিল বিহ তেরা হাম বিহ তেরে’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে তার আসল সাফল্যের শুরু হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি, যখন তিনি একের পর এক হিট সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন।
ধর্মেন্দ্র বলিউডের ইতিহাসে এক কিংবদন্তি অধ্যায়। তার সিনেমাগুলো শুধু বিনোদন নয়, সময়ের সাক্ষীও। ‘শোলে’র ভিরু যেমন হাসায়, ‘সত্যকাম’র সত্যব্রত চরিত্র তেমনই ভাবায়। তিনি প্রমাণ করেছেন নায়ক মানে শুধু রূপ নয়, মানসিক দৃঢ়তা, মানবিকতা ও অভিনয়ের গভীরতা।

