তিন সন্তানের জননী এলির বয়স যখন ২৭ বছর তখন তাকে টিক পোকা কামড়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ফুসকুড়ি বাদে তেমন কোনো সমস্যা দেখা না দিলেও কিছুদিন পর শরীরে দেখা দেয় নানান সমস্যা। তিন মাস ধরে ফ্লুর মতো লক্ষণ এবং সারা শরীরে ভয়াবহ ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল। তার শরীরে বোরেলিয়া বার্গডরফেরি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়। তিনি আক্রান্ত হন ‘লাইম ডিজিজে’। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, চিকিৎসকরা ধরতেই পারছিলেন না এলির রোগটা কি। যখন বুঝতে পারলের ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে এলি বিছানাশয্যা। হুইলচেয়ার তার একমাত্র ভরসা। এলি নিজে থেকেই কোনো কিছুই করতে পারেন না। তার দেখাশোনার জন্য আছেন একজন কেয়ারগিভার। সন্তানরা ততদিনে বড় হয়ে গেছেন। যে যার মতো থাকেন। এলি এই হুইলচেয়ারে বন্দি জীবন থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন এভাবে হয়তো আর তিন থেকে চার মাস তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন। সময়টা ছিল ২০১১ সালের জুন মাস। স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য চলে যান ক্যালিফোর্নিয়ার এক গ্রামে। কিন্তু সেই গ্রামে তার মৃত্যু নয়, বরং জীবন নতুন করে শুরু হয় এলির। একদিন সকালে এলি তার কেয়ারগিভারের সঙ্গে বাইরে বেড়াতে বের হোন। হঠাৎ করেই কোথা থেকে একটি মৌমাছি এসে এলির কপালে হুল ফুটালো। এরপর ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি তাকে ঘিরে ধরে। কামড়াতে শুরু করে পুরো শরীরে। এলির পালানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু কেয়ারগিভার তাকে সরাতে না পেরে নিজেই পালিয়ে বাঁচে মৌমাছির হাত থেকে। এলি শুধু মুখ ঢেকে বসে ছিল। আর এটিই ভাগ্য বলে ধরে নিয়েছিল। মরার জন্যই তো এখানে এসেছিলেন তিনি। এভাবেই হয়তো তার মৃত্যু আছে তাই ভেবে নিজেকে সান্ত¡না দিতে থাকলেন। এবার বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এলি। কিছুক্ষণ পরই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর এলির কেয়ারগিভার ফিরে আসেন। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে খুঁজে পান। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এলি হয়তো মারা গেছেন। তবুও হাসপাতালে নেওয়া হয় এলিকে। হাসপাতালে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার শরীরে শুরু হয় তীব্র ব্যথা ও জ্বর। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, ‘এরিশ হ্যারেক্স হাইমার’ প্রতিক্রিয়া। দেহের ভেতরে থাকা বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া মরার সময় তাদের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা টক্সিনের কারণে এটা হয়।
এই ঘটনার তিন দিন পর এলি লক্ষ্য করলেন তার ব্যথা কমে গেছে; যে ঘোরের মধ্যে ছিলেন, সেটা কেটে গেছে। শরীরের ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে। স্মৃতিশক্তি ফিরছে, হাঁটতে পারছেন। সুস্থ হয়ে এলি নিজেই শুরু করেন গবেষণা। খুঁজে পান ১৯৯৭ সালের একটি ছোট গবেষণা, যেখানে দেখা যায় মৌমাছির বিষে থাকে মেলিটিন নামে এক বিশেষ ধরনের পেপটাইড, যা ব্যাকটেরিয়ার কোষের ঝিল্লি গলিয়ে দেয়। মেলিটিন সরাসরি বোরেলিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে। এলি এরপর নিজের বাসায় শুরু করেন অ্যাপিথেরাপি বা নিয়মিত মৌমাছির হুল প্রয়োগ। প্রতিদিন ১০টি হুল, সপ্তাহে ৩ দিন। হাজার হাজার হুলের পর তিন বছর ধরে এলি হয়ে উঠলেন সম্পূর্ণ সুস্থ।

