বিশাল এক বন। সে বনে বাস করত এক ভালুক ও এক খরগোশ। তারা ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভালুকটি বাগান করতে ভালোবাসত। সে ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাষ করত।
খরগোশটি রোজ ভালুকের বাসায় আসত। ভালুক তাকে গাজর, মুলা, শশা, পুঁইশাক, পালংশাক ইত্যাদি খেতে দিত। এত মজার মজার খাবার খেতে পেয়ে খরগোশ তো অনেক খুশি। সে ভালুকের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ বোধ করল।
কিন্তু ভালুকটি ছিল খুব অলস, সে বাগান করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে চাইত না। এমনকি শিকারের সন্ধানে ও বেরুতে চাইত না। খরগোশটি ভালুকের হয়ে শিকারের সন্ধানে বের হতো। সে ভালুককে পোকার ঢিপি, মৌমাছির চাক, বিভিন্ন প্রকার মাছ ও প্রাণীর সন্ধান এনে দিত। ভালুকটি সেই অনুযায়ী শিকারে বের হতো। এভাবে দুই বন্ধুর সম্পর্ক বেশ জমে উঠেছিল। ভালুকটি আবার মধু খেতে খুব পছন্দ করত। তাই মৌমাছি কোথাও বাসা বাঁধলেই খরগোশটি ভালুককে তা জানিয়ে দিত।
ভালুক মৌমাছির চাকে হামলা চালিয়ে মজা করে মধু খেত। এভাবে বারবার ভালুকের আক্রমণের শিকার হয়ে মৌমাছিদের বাসা বদলাতে হতো। তাই তারা বিরক্ত হয়ে উঠল। বনের পাশে ছিল একটি গভীর নদী। সেই নদীর মাঝখানে ছিল একটা চর।
চরের মাঝখানে ছিল একটা বড় ছাতিম গাছ। মৌমাছিরা বুদ্ধি করে সেই গাছে বাসা বাঁধল। কিন্তু তাতে কি হবে! যথারীতি খরগোশের মাধ্যমে ভালুক সেই মৌচাকের খবর পেয়ে গেল। মধুর প্রতি ছিল তার প্রচ- লোভ। তাই সে পরের দিন ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে ওই নদীর দিকে রওনা দিল। ভালুক খুব ভালো সাঁতারু। সে সাঁতার কেটে বিশাল নদীর মাঝখানে চরে গিয়ে পৌঁছাল। অনেকক্ষণ সাঁতার কেটে ভালুকটা অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়েছিল। তাই নদীর পাড়ে বসে সে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিল। বিশ্রাম নেওয়া হলে আর বিলম্ব না করে সে ছাতিম গাছটার কাছে হাজির হলো। তারপর ছাতিম গাছে থাকা মৌচাকে আক্রমণ করে মৌমাছিদের তাড়িয়ে দিয়ে প্রাণভরে মধু খেল।
কিন্তু সমস্যা হলো ফেরার সময়। সে যখন সাঁতার কেটে ওই পাড়ে ফিরছিল, তখন পেছন থেকে একটা হিংস্র কুমির তাকে কামড়ে ধরে গভীর জলে ডুব দিল। শেষমেশ কুমিরের শিকার হয়ে ভালুকটাকে মরতে হলো। এই গল্পের শিক্ষা হলো কখনো বেশি লোভ করতে নেই । লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
আপনার মতামত লিখুন :