আমরা সবাই ছোটবেলায় পিঁপড়াদের নিয়ে মজা করেছি। বারান্দায় সারি বেঁধে চলা পিঁপড়াদের পথ আটকে দিয়েছি, খাবারের টুকরো ছুড়ে দিয়েছি তাদের দিকে। এখন যারা ছোট, তোমরাও কি পিঁপড়াদের সঙ্গে মজা কর? হয়তো অনেকেই কর। কখনো ভেবেছ কি, যদি হঠাৎ করে তুমি নিজেই পিঁপড়ার আকারে ছোট হয়ে যাও তাহলে কেমন হবে? ঠিক এই কল্পনাটাই বাস্তবে রূপ দিয়েছে অ্যানিমেশন সিনেমা ‘অহঃ ইঁষষু’। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম লুকাস। সে একজন সাধারণ বাচ্চা। পাড়ার অন্য বাচ্চারা সবসময় তাকে বুলিং করত। এজন্য লুকাস সবসময় অসহায় বোধ করত। আর সেই হতাশা গিয়ে সে ঝাড়ত পিঁপড়াদের ওপর। কখনো সে রাগ করে পিঁপড়ার গর্তে পানি ঢালত। কখনো পা দিয়ে ওদের বাসা গুঁড়িয়ে দিত। লুকাসের কাছে এটা হয়তো একটা খেলা ছিল। অন্যদিকে পিঁপড়াদের কাছে সেটা ছিল জীবন-মরণের লড়াই। এই অবস্থায় সামনে আসে জুক নামের এক জাদুকর পিঁপড়া। সে সিদ্ধান্ত নেয় লুকাসকে শিক্ষা দিতে হবে। তাই সে জাদু করে লুকাসকে পিঁপড়ার আকারে ছোট করে ফেলে। নতুন সে জগতে গিয়ে লুকাস প্রথমে ভয় পায়। চারপাশে বিশাল বিশাল গাছপালা, বড় বড় ভয়ংকর পোকামাকড় দেখে ভয় পাওয়ারই কথা।
সেখানে লুকাসের পরিচয় হয় হোভা নামের এক দয়ালু পিঁপড়ার সঙ্গে। হোভাই তাকে শেখাতে থাকে, কীভাবে একসঙ্গে থেকে লড়াই করতে হয়, কীভাবে দলগতভাবে কাজ করতে হয়। লুকাস ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, পিঁপড়েরা মোটেই দুর্বল কোনো প্রাণী নয়। একটি পিঁপড়া একা হয়তো তুচ্ছ, কিন্তু একসঙ্গে তারা যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিতে পারে। পিঁপড়াদের জীবন থেকে লুকাস শিখে নেয় সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং সাহসের পাঠ। সে সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা নেয় তা হলো, দুর্বলকে কষ্ট দেওয়া মানে নিজের দুর্বলতাকে লুকানো, অন্যকে সাহায্য করাতেই আসল শক্তি।
অহঃ ইঁষষু সিনেমাটি বানানো হয়েছিল জন নিকলের লেখা একই নামের শিশুতোষ বই থেকে। চমৎকার এই সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৬ সালে। এটি পরিচালনা করেন জন এ ডেভিস। তখনকার সময়ের শিশুদের কাছে সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। কারণ এতে একদিকে যেমন- রঙিন অ্যাডভেঞ্চার ছিল, তেমনি বুলিংয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সহজভাবে বোঝানো হয়েছিল। সিনেমাটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর বার্তা। লুকাসের মতো আমরাও অনেক সময় না জেনে অন্যকে কষ্ট দিই।
কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকা কতটা জরুরি।

