দেশের ব্যাংক কোম্পানিগুলোর হিসাব নিরীক্ষার জন্য নিরীক্ষক বা অডিটরের ফি কত হবে এত দিন তা নির্ধারিত ছিল না। ফলে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য ব্যাংকগুলোর দরকষাকষি হতো। পরে সমঝোতার ভিত্তিতে নিরীক্ষকদের ফি নির্ধারিত হয়। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি উত্তরণে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) ফি নির্ধারণী বৈঠক করেছে।
ঢাকার আগাওগাঁওয়ে গতকাল বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হলেও চূড়ান্ত ফি নির্ধারণ হয়নি। তবে নীতিনির্ধারণ ও সংশোধনী বিয়য়গুলো বৈঠকে উত্থাপিত হয়েছে। ফি নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে এফআরসির চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূইয়া বলেন, ফি নির্ধারণবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এটি পরে চূড়ান্ত হবে। ব্যাংকে ফি নির্ধারিত হলে অডিটর নিয়োগে যে অনিয়ম রয়েছে, তার অবসান ঘটবে। তার সুফল হিসেবে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর আর্থিক হিসাব বিবরণী নিরীক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক কোম্পানি বহির্নিরীক্ষণ বিধিমালা, ২০২৪’ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। গত বছরের ৯ জুলাই বিধিমালাটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। বিধিমালায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে যে ধরনের অডিট প্রয়োজন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর বহির্নিরীক্ষক হিসাবে চাটার্ড অ্যাকাউন্টস ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে এসব ফার্মের ফি নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। সে হিসাবে অডিটরদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এফআরসি ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষকদের ফি নির্ধারণে গত ১৮ জুন একটি কমিটি গঠন করে। এফআরসি চেয়ারম্যানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, আইসিএবি ও এফআরসির প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে অডিটরদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফি কত হওয়া উচিত, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে সর্বশেষ আর্থিক হিসাব বছরে নিরীক্ষা ফি কত ছিল, তারও কমিটির জিজ্ঞাসা ছিল।
অবশ্য অডিটরদের সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ ফি নির্ধারণের বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিটি ব্যাংককে তার মোট সম্পদের পরিমাণ, মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ এবং মোট ডিপোজিটের ভিত্তিতে করার জন্য বলা হয়। সে হিসাবে ব্যাংকগুলো অডিটরদের ফির বিষয়ে কমিটিকে অবহিত করেছে। ব্যাংকগুলোর সেই মতামতের ভিত্তিতে এবং সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে অডিটরদের ফি নির্ধারণ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে এফআরসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অডিটরদের ফি নির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে দরকষাকষি করে ফি নির্ধারণ করে আসছে ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানির আর্থিক অনিয়ম বা ঝুঁকি বেশি ছিল, সেসব কোম্পানি বেশি ফি দিয়ে অডিটর নিয়োগ দিয়ে আসছিল। কিন্তু ফি নির্ধারণ হলে তখন অডিটর তাদের মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বাধীন থাকবে এবং পেশাদারিত্বের মান বজায় রাখবে। এতে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলার পাশাপাশি আর্থিক খাতেও শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, ধীরে ধীরে অন্য খাতেও অডিটরদের ফি নির্ধারণ করা হবে বলে এফআরসি সূত্রে জানা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :