ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

গ্রাহকের আস্থা বাড়িয়েছে ‘ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৮:৫২ এএম
গ্রাহক

সিটি ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আশানুর রহমান। এর আগে তিনি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। মো. আশানুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাঙ্কাসুরেন্স-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি এবং গাইডলাইন প্রিপারেশন কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে সিটি ব্যাংক দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) থেকে ব্যাঙ্কাসুরেন্স ব্যবসার লাইসেন্স পেয়েছে। বাংলাদেশে ‘ব্যাঙ্কাসুরেন্সের’ সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিজনেস এডিটর রহিম শেখ। 

প্রশ্ন : ‘ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স’-এর সম্ভাবনা আপনি কেমন দেখছেন? 

উত্তর : বাংলাদেশে ব্যাঙ্কাসুরেন্সের প্রবল সম্ভাবনা আছে। দেশে মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ বিমা সুরক্ষার আওতায় আছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই হার ২৫ শতাংশ, আমেরিকায় ৫০ শতাংশ। কাছাকাছি মাথাপিছু আয়ের দেশ হয়েও ভারতের একজন নাগরিকের মাথপিছু বিমা ব্যয় যেখানে বছরে ৯২ ডলার, আমরা ব্যয় করি মাত্র ১২ ডলার। ফলে ব্যাঙ্কাসুরেন্স বিমা ব্যবসার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বিজনেস স্ট্র্যাটেজি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অনেক দেশই এই স্ট্র্যাটেজির সুফল ভোগ করছে। যেমনÑ মালেশিয়ার মোট বিমা ব্যবসার ৪০ শতাংশ ব্যাঙ্কাসুরেন্সের অবদান। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম জিডিপির মাত্র শুন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই হার ৪ দশমিক ০২ শতাংশ। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম একটি দেশের জিডিপির গড়ে ৭ শতাংশ।

এ অবস্থায় আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ইন্স্যুরেন্সের প্রসার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর শাখা আছে ১১ হাজারের বেশি। এর ৪৯ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় এবং ৫১ শতাংশ শহরে অবস্থিত। এর বাইরে ১২ হাজারের বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আমাদের দেশে একদিকে ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যা অধিক, অন্যদিকে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ব্যাংক বেশি বিশ্বস্ত জায়গা। ফলে ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে ইন্স্যুরেন্স বা বিমা পলিসি বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংক তাদের ব্র্যাঞ্চ নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও বিক্রয় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে খুব সহজেই বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছে ইন্স্যুরেন্স বিক্রি করতে পারবে। আমি মনে করি, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও গ্রাহক সবার জন্যই ‘ব্যাঙ্কাসুরেন্স’ ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। 
 
প্রশ্ন : সাধারণ মানুষ কেন ব্যাংক থেকে বিমা করবে?

উত্তর : খুব ভালো পয়েন্ট। ব্যাংকের কাছ থেকে বিমা কিনলে গ্রাহকেরা লাভবান হবেন নানাভাবে। প্রথমত, এটা এখন ওয়ান স্টপ সার্ভিস। গ্রাহককে একটি ইন্স্যুরেন্স পণ্য কেনার জন্য তাকে এখন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস বা এজেন্টের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। এখন কোনো গ্রাহক বাসায় বসেই কিন্তু ব্যাংক থেকে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমেই ইন্স্যুরেন্স পণ্য কিনতে পারবেন। অর্থাৎ, ব্যাংক থেকে অন্য পাঁচটি আর্থিক পণ্যের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স পণ্যটিও কিনতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, সার্ভিসের সহজলভ্যতা। একজন গ্রাহক যখন যেখানে যেভাবে চাইছেন, সেভাবেই তা পাচ্ছেন।

এটা গ্রাহকের জন্য খুবই সুবিধাজনক। আগে বাসায় বাসায় গিয়ে ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা হতো আর প্রিমিয়াম জমা হচ্ছে কি না, তা গ্রাহক অনেক সময় জানতেন না। আবার অনেক সময় প্রিমিয়াম দিয়েছেন, কিন্তু তা জমা হয়নি। আর এখন প্রিমিয়াম জমা দিতে আসতে হচ্ছে না। প্রিমিয়ামের বিষয়ে একটি নির্দেশনা ব্যাংকে দিয়ে দিলে অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেবিট হয়ে যাবে। আগে যে খরচ হতো, সেই খরচও লাগবে না। ব্যাঙ্কাস্যুরেন্সের মাধ্যমে সাশ্রয়ী উপায়ে পলিসি দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছে বিমাপণ্য ব্যাংক থেকে সরাসরি বিক্রি করা যাবে। ব্যাঙ্কাস্যুরেন্সের মাধ্যমে জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর প্রত্যক্ষ খরচ ১২-১৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং এজেন্সি অফিস ভাড়ার মতো পরোক্ষ খরচ প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে। স্থায়ী নির্দেশাবলি বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ঊঋঞ) অর্থাৎ, অটো ডেবিট গ্রহণ করলে প্রতি লেনদেনে ৩২ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম সংগ্রহের খরচ কমে যাবে।

এসব খরচ কমলে লাইফ ফান্ড বেড়ে যাবে, ফলে বাস্তবিক উদ্বৃত্ত বাড়বে, যার ৯০ শতাংশ বিমাগ্রহীতা এবং ১০ শতাংশ পান বিমাকারীর শেয়ারহোল্ডাররা। এমনকি বর্ধিত কর রাজস্ব থেকে সরকারও লাভবান হবে। অন্যদিকে বিমার প্রিমিয়াম চার্জ কমার কারণে প্রচুর মানুষ বিমা কিনতে উৎসাহী হবে। দাবির নিষ্পত্তি যখন নিয়মিত হবে এবং স্বচ্ছতা আসবে, তখন মানুষ উৎসাহ বোধ করবেন। আর প্রিমিয়ামের পরিমাণ কমলে গ্রাহকই লাভবান হবেন। কারণ গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লে প্রিমিয়াম আয় বাড়বেন। সব দিক মিলিয়ে গ্রাহকের ব্যয় কমবে। প্রতিযোগিতামূলক দামে এখন পণ্য কিনতে পারবেন।

মো. আশানুর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সিটি ব্যাংক পিএলসি