ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

বিমা খাতের নতুন দিগন্ত ‘ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স’ - ১২ বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে ১৪ বিমা কোম্পানির চুক্তি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৯:০৩ এএম
বিমা

একসময় বিমা প্রতিনিধিদের (এজেন্ট) কাজ থাকবে নাÑ এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করতেন বিমা কোম্পানির মালিকপক্ষের একাংশ। কিন্তু বিমা প্রতিনিধিদের কাজ না থাকা বা কমে যাওয়ার বিষয়টিই যেন এখনকার বাস্তবতা, যার নাম ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স। দেশে গত বছরের মার্চে এই সেবা চালু হয়েছে। ব্যাংকগুলো ইন্সু্যুরেন্স (বিমা) সেবাটি দিচ্ছে বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স। এতে বিমা প্রতিনিধিদের কাজ যে ব্যাপক হারে কমে যাবে, তা নিঃসন্দেহ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাসেবা দেওয়ার যৌক্তিকতা এবং এর বাজারচাহিদা রয়েছে।

এ পর্যন্ত ১২ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিভিন্ন জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা কোম্পানির সঙ্গে ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স সেবা চালু করেছে। এগুলো হচ্ছেÑ সিটি ব্যাংক পিএলসি গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি মেটলাইফ ও গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক মেটলাইফের সঙ্গে; ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি মেটলাইফ ও গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি গার্ডিয়ান লাইফ ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সঙ্গে এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক গার্ডিয়ান লাইফ, প্রগতি লাইফ ও গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে; যমুনা ব্যাংক পিএলসি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে; পূবালী ব্যাংক পিএলসি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে; প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি এলআইসি বাংলাদেশের সঙ্গে; মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি এলআইসি, সন্ধানী লাইফ, আকিজ তাকাফুল লাইফ ও প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া ইউসিবি ব্যাংক পিএলসি জীবন বীমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নীতিমালা অনুসরণ করে চুক্তিগুলো সই হয়। এর মধ্যে প্রায় সব ব্যাংক বিমাসেবা বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে। ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স নামের এই বিমা পণ্য বিক্রির বিপরীতে ব্যাংক নির্ধারিত হারে বিমা কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন পাবে। সেবাটি তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাঙ্কাস্যুরেন্স নামে আলাদা শাখা খোলা হয়েছে। আইডিআরএ নিজেও বিমাসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আলাদা ইউনিট চালু করেছে। বিমা কোম্পানিগুলো কমিশন ভাগাভাগি করে ব্যাংকের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের প্রসার ঘটাতে পারবে। এতে উভয় পক্ষেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে। আইডিআরএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকাস্যুরেন্সের ক্ষেত্রেও বিমা দাবি বা অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী। ব্যাংক কিন্তু দাবি পরিশোধের নিশ্চয়তা দেবে না। ব্যাংক থেকে পলিসি কিনতে গেলে ব্যাংকে হিসাব থাকতে হবে। বিমা কোম্পানির মাধ্যমে একই পলিসি কিনতে গেলে ব্যাংক হিসাব শুরুতে না থাকলেও চলে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক।

সম্ভাবনার দিগন্ত

বাংলাদেশে প্রায় ১৪ কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারী রয়েছেন। যদি এর অল্প অংশকেও বিমার আওতায় আনা যায়, তাহলে বিমা খাতের আকার বহুগুণ বাড়বে। গ্রাহকেরা ব্যাংকের প্রতি তুলনামূলকভাবে বেশি আস্থাশীল। তাই ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা কেনার প্রবণতা তৈরি হলে বিমাশিল্পের আস্থাজনিত সংকট কাটবে। গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগণও ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করছে। ব্যাঙ্কাসুরেন্সের মাধ্যমে তাদের কাছে বিমা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিমা প্রিমিয়াম জমা দেওয়া এবং দাবি নিষ্পত্তি সহজ হয়ে যাবে। ব্যাংক কমিশন পাবে, বিমা কোম্পানি নতুন গ্রাহক পাবে। এটি দুই খাতের জন্যই ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরি করবে।