ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

১ সেপ্টেম্বর থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ছে ৮০ শতাংশ, ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:১১ এএম
ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ

আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং চার্জ ২০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (বিআইসিডিএ)। এমন অবস্থায় খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই চার্জ বাস্তবায়িত হলে রপ্তানি খাতে খরচ বাড়বে, কমবে রপ্তানি আয়। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তীব্র হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘রপ্তানি ডিপোতে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং চার্জ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও এর নেতিবাচক প্রভাব’ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএফএফএ) সাধারণ সদস্যরা।

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, আইসিডিগুলোর বর্তমান সেবার চার্জ বন্দর থেকেও দ্বিগুণ। অথচ ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই অবারও অস্বাভাবিকভাবে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে ২০ থেকে ৮০ শতাংশ। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি, পরিবহন ও কাঁচামালের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে মার্কিন শুল্ক চাপে কঠিন সময় পার করছে দেশের রপ্তানি খাত। এই অবস্থায় আইসিডিগুলোর চার্জ বাড়ানোয় রপ্তানি খাতে আরও সংকট তৈরি হবে।  নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, বন্দরে ২০ ফুট রপ্তানি কনটেইনারের চার্জ ৬ হাজার ১৮৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪০ ফুট কনটেইনারের চার্জ ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ২০০ টাকা ও ৪৫ ফুট হাই-কিউব কনটেইনার চার্জ ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খালি কনটেইনার, লিফট-অন অথবা লিফট-অফ, ডকুমেন্টেশন, গ্রাউন্ড রেন্টসহ প্রায় সব সেবাতেই অতিরিক্ত মাশুল আরোপ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আবরারুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও সার্বিক বাজারসংকটের এই অবস্থায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ানো হচ্ছে।  এতে দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের  উদ্বেগ সৃষ্টি করবে।

আবরারুল আলম বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের  অবস্থান দুর্বল হবে। ক্রেতারা বিকল্প বাজারে চলে যেতে পারে; এটি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এই বাড়তি খরচ সামাল দিতে পারবে না। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি সীমিত বা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এ অবস্থায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন।

জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে খালি কনটেইনারের ক্ষেত্রেও চার্জ বাড়ছে। একটি ২০ ফুট কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেট ১১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হবে এবং ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হবে। তাদের লিফট-অন/লিফট-অফ চার্জ বিদ্যমান ৫১২ টাকা থেকে ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৭৫০ টাকা এবং ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৭০০ টাকা হবে। ডকুমেন্টেশন চার্জ ২০ ফুট ও ৪০ ফুট উভয় কনটেইনারের জন্য বিদ্যমান ২৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সদস্যরা বলেন, হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবরারুল আলম বলেন, বর্তমানে যে চার্জ আছে, সেটি দিয়েও সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করা যায়। গত বছরের ৫ আগস্টের আগেও ডিপোতে কনটেইনার লোড করতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগত। এখন সেই সময়ই লাগছে। তাহলে এখন কেন বলা হচ্ছেÑ জনবলের সংকট, দক্ষ শ্রমিকের অভাব। এজন্য আমরা মনে করি, চার্জ  বাড়ানোর পরিবর্তে পরিষেবা উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও ডিপো পরিচালনার দক্ষতা বাড়ানো উচিত।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) কাছে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার ব্যবসায়ীরা। সেগুলো হচ্ছেÑ কার্গো আনলোডের সময় কমানো, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, দক্ষ শ্রমিক নিশ্চিত করা এবং আধুনিক ইকুইপমেন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ না বাড়িয়ে সেবার মানোন্নয়ন করা। কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ না বাড়িয়েই এসব কাজ করা সম্ভব বলে জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৯৩ শতাংশ রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানোর আগে কনটেইনারে ওঠানো-নামানো ডকুমেন্ট প্রসেসসহ আনুষঙ্গিক সব কার্যক্রম চলে চট্টগ্রামের ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে। এর বাইরে বর্তমানে ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের পর ডেলিভারি দেওয়া হয় এসব ডিপো থেকে। এ জন্য পণ্য ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান থেকে ওঠানামা, পরিবহন, ডেলিভারি, যন্ত্রপাতি ব্যবহারসহ ১৬ থেকে ১৭ ধরনের সেবার বিপরীতে মাশুল নেয় ডিপোগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আনোয়ার হোসেন, আদনান ইকবাল, হাসনাত আবদুল্লাহ, মুনিম মাহফুজ, শামসুল হক প্রমুখ।