ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দেশে সেবা খাতে হয়রানি ও লোকজনকে ঘোরানো হয়: অর্থ উপদেষ্টা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:৩০ পিএম

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ ও নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে ট্যাক্স রিপ্রেজেনটেটিভ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (টিআরএমএস) সফটওয়্যার চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করদাতার প্রতিনিধিত্ব প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে টিআরএমএস প্ল্যাটফর্মটি কর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গতকাল এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিস্টেমটি উদ্বোধন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। টিআরএমএসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। একটি আধুনিক, স্বচ্ছ ও করদাতাবান্ধব রাজস্ব প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে টিআরএমএস একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করছে এনবিআর।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে সেবা খাতে অনেক হয়রানি করা হয়। এতে লোকজনকে ঘোরানো হয়। তবে মানুষ চায় সেবা। ভালো সেবার ক্ষেত্রে কেউ সেবার মূল্য দিতে কৃপণতা করে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। কারণ, পরে যে সরকার আসবে, বুঝতে সময় লাগবে। আর সদিচ্ছার ব্যাপার আছে। এগুলোর মধ্যে যদি কিছুটা বাংলাদেশে আশার আলো দেখাতে পারি।’ অনুষ্ঠানে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি এনবিআর চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলাম, সুফল কি আমরা দেখে যেতে পারব? কারণ, আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসের পর চলে যেতে হবে, এর আগে কিছুটা দেখে যেতে পারব কি না। প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই আমাকে বলেন, কিছু কিছু কন্ট্রিবিউট করে যাই আমরা।’

তিনি বলেন, ‘কন্ট্রিবিউট মানে বাইরে অনেক বিরাট, এই সেই অনেকেই চোখেও দেখে না। করলেও দেখে যে কিছুই হচ্ছে না। আজও দেখলাম কোনো একটা পত্রিকায়, নাম বলব না, সবখানে লিখেছে হতাশা, উনি আশার কিছুই দেখছেন না মনে হয়। আমি জানি না উনি দেখছেন কি না।’

টিআরএমএস পুরো প্রক্রিয়া দেশে হওয়ায় সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব কাজে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার অভ্যাসটা বেশি হয়ে গেছে। বাইরে থেকে যারা আসে, তারা আবার তাদের দেশের সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।

এ ধরনের কার্যক্রম সবার জন্য মঙ্গলজনক জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বা কোম্পানি পর্যায়ে ছাড়াও যারা কর সংগ্রহ করবে, তাদের জন্য সুবিধা। সংগ্রহ করতে গেলে কত রকমের কাগজপত্রে লিখতে হয়। পরে কিন্তু অনেক থ্যাংকসলেস হয়।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যে সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করা হলো, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলস্টোন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, টিআরএমএস সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে, হোক তা ব্যক্তি, কোম্পানি বা কর্মকর্তা পর্যায়ে।

আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সরকারকে অন্ধকারে রাখবেন না। ভালো করে সেবা দিয়ে সম্মানী নিলে সমস্যা নেই, কিন্তু সেবাগ্রহীতাদের ঘোরাবেন না। এতে হয়রানি হয়। ভালো সেবা পেলে কেউ দাম দিতে কার্পণ্য করে না। এমনিতে সেবা নিতে অনেক ঘুরতে হয়। এ ধরনের সফটওয়্যার আদায়কারী ও করদাতাÑ সবার জন্য সুবিধাজনক।’

এনবিআর জানিয়েছে, আয়কর আইনে অনুমোদিত কর প্রতিনিধিরা যেসব করদাতার রিটার্ন দাখিল করার জন্য করদাতা কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত, তাদের সবার আয়কর রিটার্ন টিআরএমএস সফটওয়্যারটিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন।

যেকোনো করদাতা কর প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য তার নিজ নামে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল ফোনে পাওয়া ওটিপি কর প্রতিনিধিকে দেওয়ার মাধ্যমে অনলাইনে তার রিটার্ন দাখিলের জন্য ক্ষমতা দিতে পারবেন।

একজন আয়কর প্রতিনিধি যতজন করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করবেন, তার সব রিটার্ন সংশ্লিষ্ট কর প্রতিনিধির নামের বিপরীতে টিআরএমএস সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। কর প্রতিনিধিরা রিটার্নের তথ্য যেকোনো সময় সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

টিআরএমএসের মূল বৈশিষ্ট্য

আয়কর আইন অনুযায়ী অনুমোদিত সব কর প্রতিনিধিদের ডিজিটাল নিবন্ধন। করদাতা কর্তৃক তার কর প্রতিনিধিকে অনলাইন সিস্টেমে ক্ষমতা অর্পণ। প্রত্যেক কর প্রতিনিধির দাখিল করা সব আয়কর রিটার্নের তথ্য আলাদাভাবে টিআরএমএস সিস্টেমে সংরক্ষণ। কর প্রতিনিধি করদাতাদের পক্ষে ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। এটি করদাতা এবং কর প্রতিনিধি উভয়ের জন্যই ব্যবহারকারী-বান্ধব সহজ ইন্টারফেস।

ঘরে বসেই কর-সংক্রান্ত সবকিছু সমাধান

এই প্ল্যাটফর্ম কর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কর-সংক্রান্ত সবকিছু সমাধান করা যাবে। অনুমোদিত ব্যক্তিদের টিআরএমএস সফটওয়্যারে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে তারা করদাতাদের পক্ষে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে পারেন। করদাতারা তাদের মোবাইল ফোনে বায়োমেট্রিক সিস্টেমে নিবন্ধিত ওটিপি শেয়ার করে যেকোনো এনবিআর-স্বীকৃত ট্যাক্স আইনজীবী বা আইটিপিকে তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য অনুমোদন দিতে পারবেন।

ট্যাক্স রিপ্রেজেনটেটিভ বা ট্যাক্স আইনজীবীরা সিস্টেম থেকে ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। তাদের ডিজিটালি নিবন্ধিত হতে হবে এবং করদাতাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

সরকারের রাজস্ব কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত প্রক্রিয়া অনুযায়ী, প্রতিটি ট্যাক্স রিপ্রেজেনটেটিভ টিআরএমএসে প্রতিটি ট্যাক্স রিটার্ন আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়্যারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রোকনুজ্জামান এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের (আইসিএসবি) প্রেসিডেন্ট এম নাসিমূল হাই এফসিএস বক্তব্য দেন।