ঢাকা সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বেপজার ইপিজেডগুলোয় শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ইপিজেডগুলোয় থাকা তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতায় আর্থিক সুবিধা দেওয়া শুরু হয়েছে।

এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে বেপজা। প্রকল্পটিতে আইএলওর সঙ্গে কারিগরি সহায়তা করছে জার্মান উন্নয়ন সংস্থার (জিআইজেড)। যার অর্থায়ন করবে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

গতকাল ধানমন্ডির বেপজা কমপ্লেক্সে ওই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের দুজন নিহত শ্রমিকের পরিবার ও কুমিল্লা ইপিজেডের কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় শারীরিক অক্ষমতাজনিত কারণে একজন শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর মাধ্যমে তারা পেনশনের মতো মাসিক ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা পেতে থাকবেন। কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সর্বশেষ মাসিক বেতনের ৪০-৬০ শতাংশ এবং আহতের ক্ষেত্রে শারীরিক অক্ষমতার ওপর বিবেচনা করে পেনশন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বেপজা, আইএলও এবং জিআইজেডের মধ্যে একটি লেটার অব ইনটেন্ট সই হয়। পরবর্তী সময়ে এসব সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি এনডোর্সমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি শ্রমিকদের কাছে থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন আবেদন যাচাই করে প্রাথমিকভাবে উল্লিখিত তিনজনকে পেনশন সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বেপজা শুধু বিনিয়োগ বৃদ্ধিই নয়, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষায়ও কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যে কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি, তা কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুরক্ষা আরও নিশ্চিত করবে। আমরা ইপিজেড শ্রমিকদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি, যার অংশ হিসেবে এটা একটা বড় উদ্যোগের সূচনা করছে। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি।’
তিনি বলেন, আমরা শুধু আহত-নিহত শ্রমিকদের পেনশন সুবিধা নয়। ইপিজেডে কোনো ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে, দ্রুত বেতন দেওয়ার একটা উদ্যোগ নিয়েছি। সে জন্য ফান্ড করা হবে, যেন আপনাদের কষ্টের টাকা আটকে না থাকে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর (নিযুক্ত) ম্যাক্স টুনন, জার্মান উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ড. মাইকেল ক্লোড, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মুনির হোসেন খান, বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) আশরাফুল কবীর প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেপজার অধীনে আটটি ইপিজেড এবং চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী ও যশোরে নতুন দুটি ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।

২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত বেপজাধীন জোনগুলো ৪৫৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে যেখানে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ কর্মরত। মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ১২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বেপজার ৯টি জোনের আয়তন দেশের মোট আয়তনের মাত্র ০.০০১ শতাংশ হলেও গত অর্থবছরে এই ক্ষুদ্র আয়তন থেকেই বেপজা দেশের মোট রপ্তানির ১৭ দশমিক শূন্য ৩ ভাগ অবদান রেখেছে।