বাংলাদেশের রাজনীতি আজ হয়ে উঠেছে দুই ধরনের। একদিকে রয়েছে নীতি-আদর্শ-দেশপ্রেম-আত্মত্যাগের ধারার রাজনীতি। অন্যদিকে রয়েছে লুটপাট, যেনতেন উপায়ে গদিতে বসা ও গদি থেকে লুটপাট করার ক্ষমতা ও সুবিধার রাজনীতি। মনে রাখতে হবে, ‘রাজনীতি হলো অর্থনীতিরই ঘনীভূত প্রকাশ’। তাই ‘বাজার অর্থনীতি’ জন্ম দিয়েছে ‘বাজার রাজনীতির’। এ কারণে আজ যাকে অনেকেই বলেন ‘হালুয়া-রুটির রাজনীতি’। তা এখন তথাকথিত ‘বড় দলগুলোর’ বদৌলতে পরিণত হয়েছে দেশের মূলধারার রাজনীতিতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জনগণের ভোটাধিকার, শোষণ মুক্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তাকে আজ মার্জিনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত লাভ, পদ-পদবি ও সম্পদ আহরণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
আদর্শের রাজনীতি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোণঠাসা হয়ে গেছে। আর হালুয়া-রুটির রাজনীতি হয়ে উঠেছে মূল স্রোত। রাজনৈতিক শক্তি জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। দেশ চলেছে এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে। এমতাবস্থায় দেশের সর্বক্ষেত্রে আজ মৌলিক ধরনের সংস্কার সাধন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অন্য সব সংস্কারের পাশাপাশি ‘রাজনীতি বাঁচাও’-এর জন্য সংস্কার সাধন অগ্রগণ্য হয়ে উঠেছে।
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। জনগণই ছিল গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত কারিগর ও নায়ক। এই বিজয় শুধু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনই ঘটায়নি, বরং তা ছিল ছাত্র-জনতার দীর্ঘদিনের সংগ্রামের প্রতিফলন। তবে এই বিজয় এখনো অসমাপ্ত। কারণ জনতার মূল দাবি ছিল ভোটাধিকার ও জনগণের ক্ষমতায়ন ও শোষণ-বৈষম্যের অবসান। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের পরেও জনগণের সেসব আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে নতুনভাবে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
দেশ আজ দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। একদিকে রয়েছে ৯৯ শতাংশ মানুষÑ যারা মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক ও নি¤œ আয়ের মানুষ। অন্যদিকে ১ শতাংশ বিত্তবানÑ যারা লুটেরা।
একাত্তরে যে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিলেন, তারা ছিলেন কারখানার শ্রমিক, গ্রামের কৃষক, ক্ষেতমজুর, ছাত্র-যুবক, মেহনতি মানুষ এবং অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধারা। অথচ অল্প কিছু মানুষ আজ ধনী হয়েছে, লুটপাট করছে। তারা দেশের মানুষকে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করছে। মুক্তিযুদ্ধের পর ‘কেউ খাবে তো, কেউ খাবে না’Ñ এ স্লোগানকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে গণমানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ ন্যায়সংগত হয়ে থাকলে আজ ৯৯ শতাংশ মানুষের মুক্তির সংগ্রাম করাও যুক্তিসংগত।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হলো জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এ কথা বুঝতে হবে যে, মুক্তিযুদ্ধ কেবল ৯ মাসের মিলিটারি অপারেশন ছিল না। এটি ছিল দশকের পর দশক ধরে উচ্চারিত জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ধারায় পরিচালিত গণসংগ্রামের নির্যাস। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের পর্বটি ছিল এই সংগ্রামের শীর্ষ অধ্যায়। চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছার জন্য আমাদের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল। ’৪৭-এ প্রতিষ্ঠিত কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভাবধারা ও প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে রক্ত দিয়ে লড়তে হয়েছিল। আর ’৪৭-কে কবর দিয়েই রচিত হয়েছিল ’৭১। সুতরাং আজকাল কেউ কেউ বলছে, ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ’৪৭ এবং ’৭১ উভয়কেই ধারণ করে। তারা হয় রাজনৈতিকভাবে অজ্ঞ কিংবা তাদের দুরভিসন্ধি আছে। কারণ, ’৪৭ আর ’৭১ পরস্পরবিরোধী হওয়ায় এ দুটো একসঙ্গে ধারণ করা সম্ভব নয়।
’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর অনেক স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন দেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। এ জন্য দায়ী মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তি। সেই সঙ্গে যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জনগণের আবেগকে ব্যবহার করে লুটপাট চালিয়েছে পর্যায়ক্রমে একেক সময় সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিস্ট দুঃশাসন পরিচালনা করেছিল, তারাও সমভাবে দায়ী। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী জামায়াত-শিবির প্রভৃতি শক্তি মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের বয়ানকে কেবল দলীয়করণ করাই নয়, সেটাকে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার যুক্তি হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছিল। এই দায় আওয়ামী লীগের। তাদের বয়ান একপেশে-বিকৃত-অসত্যের ওপর দাঁড়ানো। শোষণ ও ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার উদ্দেশ্যে প্রণীত।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন নতুন করে জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু এই অগ্ন্যুৎপাত যদি শেখ হাসিনাকে উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হতো, তা হলেও আজ না হোক কাল সরকারের পতন ঘটতই। কোটা আন্দোলন যে ক্লিক করল, তার মূলেও রয়েছে অর্থনীতি। গোটা বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। যুবসমাজের মধ্যে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য হাহাকার। সেই আকুতি থেকে তারা বারবার পথে নেমেছে। আমি অরাজনৈতিক শব্দটি ব্যবহার করব না, তবে আন্দোলনের অদলীয় চরিত্রটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
একথা ঠিক যে, রাজনীতি সম্পর্কে এক ধরনের বিরূপতা রয়েছে। ছাত্রলীগসহ বুর্জোয়া দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের প্রতি শিক্ষার্থীদের তীব্র বিরূপ মানসিকতা আছে । বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর শক্তি কম। কোটা সংস্কার আন্দোলনে একটা নতুন নেতৃত্ব সামনে এলো। মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গেল, এটা অরাজনৈতিক বা অদলীয় আন্দোলন। এর ফলে প্রচুর সাধারণ মানুষ সহজে অংশ নিতে পারলেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অনেকেও সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু এর থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না যে প্রথাগত রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন। অভ্যুত্থানের পরে আমি তো আরও বেশি করে দেখছি যে মানুষ রাজনৈতিক সরকার চাইছে। যে ছাত্ররা নিজেদের অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি বলে দাবি করছেন তারাও তো একটি রাজনৈতিক দলই তৈরি করলেন। ফলে, বিষয়টির অতি সরলীকরণ করা ঠিক হবে না
এই অভ্যুত্থানের কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছিল না। তবে একটা দক্ষ কেন্দ্র বা কোর অবশ্যই ছিল। অনলাইন নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ছাত্রনেতারা খুব দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। শুধু ঢাকায় নয়, সর্বত্র সমন্বয়ের কাজ খুব ভালো করে হয়েছে। কিন্তু মূল শক্তি ছিল জনগণ। ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীলরাও স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে ছিল। তবে তারা সচেতনভাবেই ব্যানার ব্যবহার করেনি, যাতে দলীয় ছাপ না আসে। যখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ওপর আওয়ামী লীগ হামলা করল, সব হল খালি করে দিল, তখন বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নামল। তারা একটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধ গড়ে তুলল। এক্ষেত্রেও বামপন্থি ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই সঙ্গে আমি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথাও বলতে চাই। উদীচীর একাংশের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে ‘একাংশ’ শব্দটি ব্যবহার করতে হলো আমাকে। উদীচীর একাংশের উদ্যোগে ত্রিশেরও বেশি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থাকে নিয়ে কার্ফিউ ভেঙে গানের মিছিল সংগঠিত করা হয়। এটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কার্ফিউয়ের সময়ে মানুষ একটু থমকে ছিল। সরকার তখন বীভৎস দমনপীড়ন চালাচ্ছিল। তখনো সমন্বয়করা সম্ভবত শেখ হাসিনার সরকারকে উচ্ছেদ করা যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। সমন্বয়কদের একাংশ বলছিলেন এটা হাসিনার পতনের আন্দোলন নয়। আট দফা না ন’ দফা তাই নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু ওই যে বললাম, এই আন্দোলনের নেতা ছিল জনগণ। সরকারি অত্যাচারের মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জনগণ বহু আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল এই আন্দোলনের অন্তিম গন্তব্য এক দফাÑ হাসিনার পতন।
আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত নায়ক মাহফুজ-সারজিসরা নন, প্রকৃত নায়ক দেশের সাধারণ মানুষ যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে বুলেটের মুখে রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের অন্যান্য সময়ের মতো এবারও প্রকৃত নায়কদের আড়ালে রেখে স্বঘোষিত ‘অগ্রবাহিনী’ হিসেবে দাবিদার একটি অংশ আন্দোলনের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করে নিয়েছে। ৫ আগস্টের পর আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে যারা নিজেদের দাঁড় করিয়েছে, তারা দাবি করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু গত ১৬ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতা ও জনগণের ভূমিকাতেই এই গণঅভ্যুত্থান সফলতা অর্জন করেছে। অথচ এখন জনগণকে আবারও প্রান্তে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। এলিট শ্রেণি নিজেদের জনগণের প্রতিনিধি বলে দাবি করছে অথচ বাস্তবে তারা জনগণের চিন্তা বা দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বর্তমান সরকারের অধীনে দেখলাম, বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি কি সঠিক হয়েছে? আমি মনে করি যে, আওয়ামী লীগ কেবল এক ব্যক্তির ছবি টাঙিয়ে যে মিথ্যা ধারণা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল, তা দূর করতে হলে বঙ্গবন্ধুর ছবি সেখানে রেখেই একই সঙ্গে তার পাশে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, মণি সিংহ, এমএজি ওসমানী, শেরবাংলা একে ফজলুল হক সবার ছবি টাঙিয়ে দেওয়াই হতো সঠিক কাজ। আওয়ামী লীগের বিকৃত বয়ানকে কবর দিতে হবে ঠিকই, সে কারণে ইতিহাসকে কবর দেওয়া কিংবা মুক্তিযুদ্ধকে কবর দেওয়া কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। সমাজকে যেমন অপসারণ করা যায় না, জনতার যেমন মৃত্যু নেই, সেই কারণে মুক্তিযুদ্ধও অমর।
বর্তমান সরকারকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন’ হিসেবেই দেখতে হবে। এ সরকার নির্বাচিত নয় বরং একটি অস্থায়ী অন্তর্ববর্তীকালীন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। তাদের মূল কাজ হওয়া উচিত নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। যাতে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্ধারণ করতে পারে।
আমাদের সমাজে ও রাষ্ট্রে যে গভীর ক্ষত এবং রুগ্ণতা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে দেশকে উদ্ধার করা জরুরি কর্তব্য। সে ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অপরিহার্য। আমি এটাও মনে করি, মৌলিক সংস্কার হোক কিংবা ছোটখাটো কোনো সংস্কার হোক, তার বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ, তাদের মতামত ও সম্মতি জরুরি।
সংস্কার কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত হলো, সংস্কারের আগেই এই উদ্দেশ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেই সঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণের পরিবেশ ও তাদের সম্মতি নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে আনা। সুতরাং সংস্কারের আগেই নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু সে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আমাদের দেশে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। যে কারণে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রয়োজনে নির্বাচনের আগেই এই নির্দিষ্ট বিষয়ে কতিপয় সংস্কার অপরিহার্য।
সে ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ অর্থশক্তি, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতার ব্যবহার ইত্যাদি থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে মুক্ত করা। অন্য সব সংস্কারের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তা হওয়া এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে সেসব মতামত তুলে দিতে পারলে তারা দ্রুত একান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোর বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে পারবে।
নানা দিকে আওয়ামী পুনরাবির্ভাবের ভয় দেখিয়ে জঙ্গি সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াত এবং আরও কিছু কিছু প্লাটফর্মের মাধ্যমে ভয়াবহ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই অপশক্তিকে কিছুতেই মাথা তুলতে দেওয়া যাবে না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসন বা তার আগের-পরের ৫৪ বছরের দুঃশাসনের ‘নব-সংস্করণ’ দ্বারা দেশের সংকট দূর করার যাবে না। এটা ‘ফুটন্ত কড়াই’ থেকে জ¦লন্ত চুলায় নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো ঘটনা। একই সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, চলমান সংকটের সমাধান বা পরিত্রাণের কোনো রাজনীতিবহির্ভূত কিংবা অরাজনৈতিক পথ নেই। এনজিও, সুশীল সমাজ প্রভৃতি দ্বারা অথবা সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়।
সুতরাং দেশকে সংকট-অনিশ্চয়তা, নৈরাজ্যমুক্ত করার পথ একটাই, রাষ্ট্রক্ষমতায় জনগণের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষাকারী শক্তির একত্রিত হয়ে ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের ধারায়, অর্থাৎ সমাজতন্ত্র অভিমুখে গণতন্ত্র, সামাজিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা। ’৭১-এ ঘোষিত নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে জনগণকে সক্রিয়, সচেতনতা ও একতাবদ্ধ করে নতুন বন্দোবস্তের আলোকে রাষ্ট্রব্যবস্থা ঢেলে সাজানো ও রাষ্ট্র্রক্ষমতা পরিচালনা করা।
লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য, সিপিবি

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন