তরুণ প্রজন্মের জাগ্রত বোধের আগুনে ঝলসানো গণতন্ত্রের স্বপ্ন চোখে বৈষম্যহীন সমাজ চেয়ে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের এক দুর্বার গণজাগরণ। তারা রাস্তায় নেমেছিল মেধাভিত্তিক চাকরির সংস্কার ও সমতার দাবিতে। ফলে আন্দোলন খুব দ্রুতই রূপ নেয় বৃহত্তর রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের আহ্বানে। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন দীর্ঘমেয়াদি আওয়ামী লীগ সরকারের তিক্ত ধরনের একতরফা শাসনব্যবস্থার পতন ঘটায়। এখানে দেশি-–বিদেশি ষড়যন্ত্রের গুঞ্জন সত্ত্বেও আন্দোলনটির ভেতর সকল স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামের প্রকাশ ছিল। একারণেই মনে হচ্ছিল এখন থেকে হয়তো সমতা, জ্ঞান বিকাশ ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত বাংলাদেশ।
কিন্তু সে আশাবাদ কী এখন দীপ্যমান? আন্দোলন সফলতার পরপরই যে তরুণ গোষ্ঠী জাতিকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছিল, তারাই যেন আকস্মিকভাবে হারাতে বসেছে তাদের মেধাগত ও সাংস্কৃতিক দৃঢ়তা। শিক্ষাঙ্গনগুলোয় অস্থিরতা বাড়ছেই ক্রম হারে। পরীক্ষা ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণের দাবি একাডেমিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি বলে নিন্দিত হচ্ছে। আরও উদ্বেগজনক হলো, যুক্তির স্থলে ধর্মীয় উগ্রতা তীব্রভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। এটি গণআন্দোলনের মৌলিক ও উদারবাদী ধারার বিপক্ষে মানবিক আদর্শগুলোকে ক্ষয় করতে আঘাত করেছে।
এই সংকটের কেন্দ্রে একটি মৌলিক প্রশ্ন এখন উচ্চারিত, বাকস্বাধীনতার নিয়ন্ত্রণহীন ও ভুল ব্যাখ্যাযুক্ত চর্চা কি আমাদের আজ মেধাগত পতনের পথে ঠেলে দিয়েছে?
গণতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা যে এক মৌলিক অধিকার, এ নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু এর অপব্যবহার সমাজে বিভ্রান্তি, বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং আজকের বাস্তবতায় সেটিই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডিজিটাল যুগে ইচ্ছেমতো ‘মত প্রকাশ’ বিপুলভাবে প্রকাশ্যে দৃশ্যমান। ফলে গঠনমূলক ধারাটি একপ্রকার হুমকিতে। টিকটক, ফেসবুক লাইভ, ইউটিউব শর্টসÑ এসব প্ল্যাটফর্মে যুক্তি বা মননের গভীরতায় মেশানো নান্দনিকতার চেয়ে উসকানি, অতিনাটকীয়তা ও উত্তেজনা সৃষ্টির তৎপরতাই বেশি। জুলাই আন্দোলনে যেসব তরুণ দারুণ করে জনমনে জায়গা করে নিয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন বই, পাঠাগার ও শ্রেণিকক্ষের বদলে এমন ডিজিটাল জগতে বেশি নিমগ্ন। তাদের পরিচিতি মেলে চিন্তার মানে নয়, বরং যা খুশি প্রদর্শনের ক্ষমতায়। আসলে দিনবদলের এখন এই নতুন হাওয়ায় কারো জনপ্রিয়তা মেধা-গভীরতার ওপর নির্ভর করে না; নির্ভর করে নাটকীয়তা ও পলকা উত্তেজনার ওপর। সুচিন্তিত বিতর্ক ও শালীন আলাপ দূরে ঠেলে ‘বাকস্বাধীনতা’র নামে ভাইরাল স্লোগান, রাজনৈতিক ট্রলিং আর আবেগপ্রসূত চটুল বক্তব্যের ভিড়ে সব খিচুড়ি।
এই পরিবর্তন শুধু সমাজে আচরণের রূপান্তর নয়; এটি এমন এক মনস্তাত্বিক রোগ ও দুর্বলতা। আওয়ামী লীগের পতনের পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলো এই নেতিবাচক আচরণ দিয়ে মতাদর্শিক শূন্যতায় ছাত্রনেতাদের নিজেদের স্বার্থে কবজায় নিতে শুরু করেছে। প্রকৃত ধারার নাগরিক চেতনা গড়ে তোলার পরিবর্তে অনেক তরুণ-তরুণী এখন ক্ষমতার পাল্টাপাল্টি খেলায় ‘ঘুঁটি’ হয়ে পড়েছে। এখানে জীবন বোধের অনুসন্ধান ও আত্মসমালোচনার চেয়ে আনুগত্য ও সংঘর্ষকেই বেশি মূল্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনা দলাদলি, ভ্রান্ত তথ্য প্রচার ও প্রভাব দেখানোর নামসর্বস্ব কার্যকলাপে বিকশিত হয়ে সঠিক মেধার বিকাশ, ন্যায়বোধ ও বুদ্ধিবৃত্তিক নবজাগরণ পাওয়ার আকাক্সক্ষা ক্রমশ ম্লান হয়ে পড়ছে।
কিন্তু এই দোষ কী পুরোপুরি তরুণদের ঘাড়ে চাপানো যায়? উচিত নয়। এটা করলে খুব অন্যায় হবে। তাদের চলমান আচরণ কী সমাজের দীর্ঘদিনের ধরে চলা এক গভীর অসুখকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না? এর পেছনে কী বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিকীকরণ ও ক্রমাগত অবক্ষয় ভূমিকা রাখেনি? সত্য তো এটাই, বিগত দশকগুলোয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে কর্তৃত্ব বিস্তার করে এসেছে; যেখানে শিক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রাজনৈতিক আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। এই সংস্কৃতি শুধু শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতাকেই নষ্ট করেনি; শিক্ষার্থীদের মন থেকেও মুছে দিয়েছে জ্ঞান, মনন ও মুক্তবুদ্ধির বিকাশই তাদের প্রধান লক্ষ্য, এমন বিশ^াস।
এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যবহার। সেখানে সহজ যোগাযোগে আলাপচারিতার প্রকৃতি। একসময় যে সুবিধাটিকে দেখা হয়েছিল মুক্ত মতবিনিময় ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সম্ভাবনা, সেই সামাজিক মাধ্যম এখন হয়ে উঠেছে ভ্রান্ত তথ্য, উগ্রতা ও বিষাক্ততার উর্বর ক্ষেত্র। ডিজিটাল প্লাটফর্মে অ্যালগরিদমের লক্ষ্য যখন অংশগ্রহণ বাড়ানো, তখন ক্ষোভ, উত্তেজনা ও আবেগ-প্রবণতার বিস্তারই বেশি পুরস্কৃত হয়; বৈধ প্রতিবাদ আর উত্তেজনামূলক উস্কানির সীমারেখা দ্রুত ঝাপসা হয়ে যায়।
এমন এক বিশৃঙ্খল ডিজিটাল পরিবেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নড়বড়ে শিক্ষাজীবনের বাস্তবতায় তরুণদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে নিঃসন্দেহে। তাদের মন আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ে যখন কর্তৃত্ববাদী কিংবা ধর্মতান্ত্রিক উগ্র স্লোগানগুলোর উল্টোদিকে শুধু বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার লক্ষণ প্রকাশিত। এসব কিছুই আমাদের নেতৃত্বের দুর্বলতাকে নগ্ন করে তোলে। আমাদের সমালোচনার শক্তি, চিন্তাশীলতা, নাগরিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক বিচারবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উর্বরতা কমে আসে।
এই বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক শূন্যতা জাতির পরিচয় সংকটের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যেখানে মুছে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক গভীরতা, হারাচ্ছে ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত হচ্ছে নড়বড়ে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও মানবিক ঐতিহ্যের বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন তরুণ সমাজ স্বভাবতই অতি সহজে মতাদর্শিক প্রভাব, প্রতারণা ও জনতুষ্টিমূলক নেতৃত্বের কাছে শিকারে পরিণত হয়। এ কারণেই আজ জরুরি হয়ে পড়েছে তরুণদের সাংস্কৃতিক পুনরাবিষ্কার। দরকার হলো ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি খাঁটি জাতীয় ভিত্তির পরিচয়বোধে ফিরে যাওয়া, যার ফলে সহনশীলতা ও দৃঢ় যুক্তিবোধ এবং জাতীয় উদ্দেশ্যবোধকে যৌথভবে সুসংহত হওয়ার পথ মসৃণ হবে।
বেদনাদায়ক হলো, জুলাই আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে যাদের একসময় বড় করে দেখা হতো, তাদের মধ্যেও এখন এই ধারার অবক্ষয়ের চিহ্ন যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শিক্ষাগত ন্যায়বিচারের এক আন্তরিক সংগ্রাম, বহু মানুষের চোখে আজ যেন বিশৃঙ্খলা আর সুযোগসন্ধানীর রূপ নিয়েছে। যে কয়েকজন ছাত্রনেতা একসময় সংস্কারমুখী পরিবর্তনের প্রতীক ছিল, তাদের অনেকে এখন ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রচার ও প্রভাব বিস্তারের সংঘর্ষকেন্দ্রিক আলোচনায় জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মাঝে গঠনমূলক সংলাপ বা জাতীয় দায়বদ্ধতার চেয়ে নিজের লাভই মূল উদ্দেশ্য।
তবু পুরো চিত্রপটটি অন্ধকার নয়। চ্যালেঞ্জ যত বড়ই হোক, এই সময়টিই এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে এক ভিন্ন মুহূর্ত। বাংলাদেশের সামাজিক নেতাদের সামনে এখন জরুরি কাজ হলো, তরুণদের ভূমিকা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা, বাকস্বাধীনতার অর্থ ও সীমারেখা পুনর্নির্ধারণ করা, এবং জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক ভিত্তিকে নতুন করে গড়ে তুলতে আহ্বান জানানো। এই তিন ধারার সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া ন্যায়ভিত্তিক, প্রজ্ঞাময় ও সাংস্কৃতিকভাবে দৃঢ় এক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিময় সমাজ গঠন বাস্তব রূপ পাবে না।
প্রথমেই প্রয়োজন সার্বিক ও তাৎক্ষণিক শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার। বিদ্যালয় ও বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে হতে হবে সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র যেখানে শিক্ষার্থীরা মুক্তভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান অনুসন্ধানে অংশ নিতে সক্ষম হবে। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠক্রমে নৈতিকতা, নাগরিক দায়িত্ববোধ, বিতর্কের সৌন্দর্য এবং সমালোচনামূলক চিন্তার চর্চাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিতর্কের মাধ্যমে কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে শিখবে, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করতে পারবে, এবং ভাবনার বৈচিত্র্যের মধ্যে নিজেদের অবস্থান বুঝতে শিখবে কোনো ভয়, তদবির বা রাজনৈতিক দমনের আশঙ্কা ছাড়াই।
বাকস্বাধীনতাকে বুঝতে হবে যে এটি শুধু একটি অধিকার নয়, একটি ন্যায়মানসম্পন্ন দায়িত্বও। প্রকৃত স্বাধীন মতপ্রকাশ, সহনশীলতা ও জবাবদিহিতাকে উৎসাহিত করার কোনো বিকল্প নেই। এমন হলে, কেবল তখনই তা সততা ও বিবেকের সঙ্গে চর্চিত হবে। আজকের বাংলাদেশে এই ভারসাম্য ভীষণভাবে অনুপস্থিত। ঘৃণাবাচক ভাষা, ট্রলিং এবং ভুয়া তথ্যের বন্যা বৈধ অভিব্যক্তি ও অপব্যবহারের সীমানাকে ঘোলাটে করে তুলেছে। তরুণদের শেখাতে হবে, ভাষা মানুষের মতোই জীবন্ত; এর প্রভাবে সৃষ্টি ও ধ্বংস দুটোই সম্ভব। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি তাই জরুরি শোনার বিনয় এবং বিবেচনার ক্ষমতা যা সত্যকে মিথ্যা থেকে আলাদা করতে শেখায় এবং স্বাধীনতাকে পরিণত করে দায়িত্বে।
নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিবিধান একা এই সংকটের সমাধান দিতে পারবে না। প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, বাক-আচরণের নৈতিকতা নিয়ে সমষ্টিগত পুনঃশিক্ষা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে আরও স্বচ্ছ, পক্ষপাতহীন ও জবাবদিহিমূলক মানদ-ে পরিচালিত হতে হবে। একই সঙ্গে মিডিয়া শক্তির ইতিবাচক প্রকাশ দরকার, যার ফলে এমন সক্ষমতা জন্ম নেবে যেখানে সত্য-মিথ্যা যাচাই, খারাপ প্রভাব প্রতিরোধ এবং সুস্থ চর্চায় নবুস শক্তি তৈরি হবে। বিশেষত তরুণদের জন্য এটি অপরিহার্য, কারণ তারাই আজ ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে বড় ভোক্তা এবং সমভাবে নির্মাতা।
রাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে নিষেধাজ্ঞার নয়, বরং চিন্তাশীল নাগরিকতা গড়ে তোলার সহায়ক হতে হবে। সরকারকে এমন আলাপের পরিসর তৈরিতে উৎসাহ দিতে হবে যা সংলাপ, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বৈচিত্র্যকে সমর্থন করবে। যুব সংসদ, একাডেমিক বিতর্ক, সম্প্রদায়ভিত্তিক আলোচনাসভা হতে পারে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র, যেখানে আদর্শের চেয়ে বুদ্ধিমত্তা, শোরগোলের চেয়ে যুক্তি মূল্য পাবে। আইন কাঠামোকে রক্ষা করতে হবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশে এবং অন্যদিকে হয়রানি, বিভ্রান্তি ও জবরদস্তি থেকে মুক্ত থাকার অধিকার বাস্তবায়নে। কারণ, এ দুটোই গণতন্ত্রের অপরিহার্য স্তম্ভ।
এই প্রচেষ্টার একটি মৌলিক স্তম্ভ পরিবারও। যখন অনলাইন প্রভাবকরা শিক্ষক বা অভিভাবকের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে, তখন বাবা-মাকে হতে হবে পথপ্রদর্শক যেন তাদের সন্তানেরা ডিজিটাল জীবনে যুক্ত থাকার পরেও সহানুভূতি শিক্ষা লাভ করে, বই পড়ার তাদের আগ্রহ জন্মে। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরিতে সক্রিয় থাকে। মানবিক মূল্যবোধ কেবল স্কুল বা সামাজিক মাধ্যমে শেখানো যায় না; এগুলোকে দৈনন্দিন জীবনে গড়ে তুলতে হয় পাবিরারিক পরিবেশে।
সমাজের যুক্তিবোধের অভিভাবক হিসেবে সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও মেধাবীরা নতুন করে ভূমিকা গ্রহণ করুক। আসলে সত্য উচ্চারণ করতে হবে শুধু রাষ্ট্রশক্তির সামনে নয়, তরুণদের সামনেও। সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও জনআলোচনার মাধ্যমে তাদের দেখাতে হবে ভাবনার শৃঙ্খলা, নৈতিক সাহস ও মননশীলতার পথ। যখন সরাসরি মতপ্রকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন সৃজনশীল ভাষার কবিতা, গল্প, ব্যঙ্গ ঐতিহাসিকভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। অথচ ওই সকল সাহিত্য ও শিল্পই গভীর শক্তি নিয়ে অতীতে অত্যাচারের সামনে মশাল জ্বালিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে প্রজন্মকে। এই ঐতিহ্যগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে জনতুষ্টিবাদী স্লোগান ও ডিজিটাল বিভ্রান্তিকে শূন্য হারে নিয়ে যাওয়া খুব প্রয়োজন।
পরিশেষে আকাক্সক্ষা করা যেতে পারে, বাংলাদেশের মানুষের মাঝে গণতান্ত্রিক স্পৃহা নিভে যেন না যায়। সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বাংলাদেশের সমাজে যদি গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তির উন্মেষ ঘটে, তবে যেকোনো সংকটে দায়িত্বপূর্ণ ও নৈতিকতানিষ্ঠ বাকস্বাধীনতাই তরুণদের সঠিক পথ দেখাবে। তাদের বিকাশের শক্তি হয়ে উঠবে। সেই শক্তিই আরও ন্যায়সঙ্গত, উদার ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের চালিকাশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়ে একটি নতুন প্রভাত এনে দেবে সকলকে।
লেখক : কবি, কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন