প্রায় তিন বছর আগে বিয়ে হয় রেজাউল করিম ও রেজোয়ানা দিল আফরোজের। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় রেজোয়ানা যৌতুকের জন্য নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুন যৌতুকের জন্য স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা মারধর ও নির্যাতন করে রেজোয়ানাকে।
সেই নির্যাতনের রেশ কাটতে না কাটতেই তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় মেডিকেলে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হেরে যান তিনি।
গত শুক্রবার ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রংপুরের রেজোয়ানা।
নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার যুবক জনি সরকার। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন নিজ বাসায়। ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে তার বাবা প্রথমে রুটি তৈরির কাঠের বেলন দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করেন। এতে জনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করেন।
পরে রাত ২টার দিকে হাত-পা বেঁধে একটি বস্তায় ভরে তার বাবা নিজেই মাথায় করে গলির ড্রেনে ফেলে রেখে আসেন। গত মঙ্গলবার সকালে পুলিশ জনির মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত জনির বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওইদিন মধ্যেরাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে দুই বছরের শিশুপুত্রকে শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর নিজ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাবা নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে।
শুধু রেজোয়ানা, জনি আর ছোট্ট শিশুই নয়, প্রতিদিনই দেশে ঘটছে এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা। সহিংস হয়ে উঠছে আপনজন, অসহিষ্ণ হয়ে উঠছে ভালোবাসার মানুষটি। সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহের কারণে অবলীলায় খুন হচ্ছে মানুষ। আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড।
মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল পরিবার কারো কারো জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। বাবা-মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি সন্তানের হাতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রাণহানিও ঘটছে।
পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এক ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করছে। দেখা যায়, প্রতিটি ঘটনাই মামুলি বা তুচ্ছ কোনো কারণে। একটি ঘটনার নৃশংসতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আরেকটিকে।
এসব কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতির দৃষ্টান্তই নয়, সামাজিক অসুস্থতারও লক্ষণ। এ ছাড়া জমি ভাগাভাগি নিয়ে লাঠালাঠি তো এ দেশে লেগেই আছে। বাড়ি বা জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে খুনোখুনি যেন স্বাভাবিক বিষয়।
সমাজবিজ্ঞানী, অপরাাধ বিশেষজ্ঞ ও মনস্তত্ত্ববিদরা বলেছেন, পারিবারিক বন্ধন দুর্বল ও আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবের কারণেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবেই পারিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে যান্ত্রিক জীবনে বাড়ছে অস্থিরতা ও হতাশা। অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে মানুষ। এ ছাড়া অর্থনৈতিক দুরবস্থা, পরকীয়া সম্পর্ক, মাদকাসক্তি, মানসিক দূরত্ব হত্যার মতো অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন, অসুস্থ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, বিকৃত টিভি সিরিয়াল এবং সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব। এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে সারা দেশে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৯৫৪ জন নারী। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৬ জনকে। যার মধ্যে স্বামী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন ১ হাজার ১৫২ জন। এ ছাড়া নিজ পরিবারের হাতে খুন হয়েছেন ২৮৭ জন নারী।
২০২৪ সালে সারা দেশে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫২৩ জন নারী। যার মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ২৭৮ জন এবং আত্মহত্যা করেন ১৭৪ জন। ২০২৩ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৫০৭ জন নারী। হত্যার শিকার হয়েছেন ২৯২ জন।
২০২২ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৭৯ জন। এদের মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৯২ জন। ২০২১ সালে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৪০ জন নারী এবং চলতি বছরের (২০২৫) মে পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৭২ জন নারী।
পুলিশের পরিসংখ্যানে আলাদাভাবে পারিবারিক সহিংসতায় হত্যাকাণ্ডের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধসংক্রান্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৭ হাজার ৯২১টি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে হত্যা মামলা করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭টি। গত বছরের একই সময়ে হত্যা মামলা হয়েছিল এক হাজার ২৬৫টি। এই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩২২টি বেশি হত্যা মামলা করা হয়েছে। শতকরা হিসাবে তা বেড়েছে ২০ ভাগ। তথ্য বিশ্লেষণ করে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসের হিসাব ধরে দেখা গেছে, দিনে গড়ে ১০ জন খুন হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার কারণে ঘটেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে অপরাধ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে নারী ও শিশু নির্যাতনে মামলা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩১টি। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৯ হাজার ১০০।
রংপুরের রেজোয়ানার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে রেজোয়ানা দিল আফরোজের বিয়ে হয় রংপুর মেট্রোপলিটন মাহিগঞ্জ থানার সরেয়ারতল এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রেজাউল করিমের সঙ্গে।
বিয়ের সময় বরপক্ষকে পাঁচ লাখ টাকার উপহার দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। বিয়ের পর থেকেই রেজোয়ানা যৌতুকের জন্য নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় গত ৮ জুন বিকেলে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালে মারা যান তিনি। নিহত রেজোয়ানার দেড় বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।
নিহতের বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় জামাই পুড়িয়ে হত্যা করেছে। শ্বশুর-শাশুড়িরা আগুন নেভাতে না গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে জানিয়ে দেয়, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি মেয়ের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি চান। তবে এ ঘটনায় নিহতের স্বামী, ননদ ও ননদের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জনি হত্যার বিষয়ে পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে জনি সরকারের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর রাতে নিহতের বাবা করুণা সরকার বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় পরের দিন নিহতের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, জনি সরকার মাদকাসক্ত ও বখাটে স্বভাবের ছিলেন। মাদকের টাকার জন্য প্রতিনিয়ত জনি সরকার তার বাবা-মাকে চাপ দিতেন। এ জন্য জনির বাবা ঘুমন্ত ছেলেকে রুটি তৈরির কাঠের বেলন দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করেন। এতে জনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা নিশ্চিত করেন। পরে হাত-পা বেঁধে মরদেহ একটি বস্তায় ভরে বাবা নিজেই মাথায় করে গলির ড্রেনে ফেলে রেখে আসেন। পুলিশ তদন্তে নেমে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজ দেখে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিহতের বাবা ও মায়ের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, পারিবারিক সহিংসতার একেকটি ঘটনার পেছনের পেক্ষাপটটা একেক রকম। তবে আমাদের এখানে সাধারণ কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো প্রতিটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে। গবেষণায় আমরা এই তথ্যগুলো পাই যে, একটি পরিবার পরিচালনার জন্য যে ধরনের শিক্ষা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় থাকা দরকার, তা আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। ফলে শিক্ষিত-স্বশিক্ষিত উভয়ের মধ্যেই পারিবারিক শিক্ষার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পারিবারিক-সামাজিক সহিংসতার এটা একটা বড় কারণ। দ্বিতীয়ত, উচ্চশিক্ষিত দম্পতিদের ও চাকরিজীবী দম্পতিদের মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর পেছনের কারণগুলো হলো- কে কত বড় চাকরি করে, কার বেতন কত, কার প্রভাব কতটা, কার কথায় ফ্যামিলি চলবে- এসব সহিংসতা বা একটা মানুষকে অসহিষ্ণু হওয়ার পেক্ষাপট হিসেবে কাজ করে।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে অতিমাত্রায় যুক্ত হওয়া। সামাজিক মাধ্যমের অতিবিস্তারের কারণে তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে সংযোগ হচ্ছে। যার থেকে স্বামী-স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সন্দেহ, অবিশ্বাস কিংবা পরস্পর দূরত্বের। এ ধরনের হতাশাগুলো যখন কোনো মানুষ প্রপার ওয়েতে সমাধান করতে না পারে তখনই দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি হয়। যা হত্যা এবং শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত গড়ায়।
এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, সামাজিক অপরাধ রাতারাতি বন্ধ করা যায় না। সমাজভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া পরিবার-সমাজকেন্দ্রিক ব্যবস্থা পরিচালনায় শিক্ষাগুলোকে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে সবাইকে অবগত করা। এ ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা রোধে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হবে। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবার মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এতে অনেক সমস্যারই সামাজিক সমাধান সম্ভব হবে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, মূলত সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ের সংহতি হ্রাস পাওয়ার কারণে এ ধরনের অপরাধ ঘটছে। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, অনৈতিক সম্পর্ক, চাহিদার বৈচিত্র্যতা থেকেই সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজন পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা এবং সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করা।
সম্প্রতি কিছু ঘটনা
গত বৃহস্পতিবার মধ্যেরাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের পশ্চিম ধুরাইলে দুই বছরের শিশুসন্তান আইয়ুব আলীকে শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর নিজ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা নুরুল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত রোববার (১৫ জুন) রাজধানীর হাজারীবাগের ঝাউচর আমলা টাওয়ারের গলিতে বাবার ছুরিকাঘাতে বাহারুল ইসলাম রাসেল নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। স্বজনেরা জানিয়েছেন, বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাবা জুয়েল রানার ছুরিকাঘাতে রাসেল নিহত হন।
গত ১২ জুন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাদক মামলায় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে ছয় দিন পর হযরত আল দেওয়ান (৬০) নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করেন তার ছোট ছেলে মামুন। ১০ জুন সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চরমোহনপুর নুহুপাড়ায় জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছোট ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আব্দুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ জানায়, আব্দুর রশিদের সঙ্গে তার ছোটভাই তৌহিদুল ইসলাম বিকাশের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তৌহিদুল ইসলাম বিকাশ বড় ভাইকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে গুরুতর আহত হন আব্দুর রশিদ। পরে আত্মীয়-স্বজন আব্দুর রশিদকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ৯ জুন কুমিল্লার তিতাসে দুই বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে কীটনাশক খাইয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মনু মিয়া নামের বাকপ্রতিবন্ধী এক বাবা। বিষক্রিয়ায় দুই মেয়ের মৃত্যু হলেও, বেঁচে আছেন বাবা। ৮ জুন ময়মনসিংহের ভালুকায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে সাবিনা আক্তার নামে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার স্বামী পলাতক রয়েছেন। ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
৭ জুন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার মেম্বারপাড়ায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে অ্যামি আক্তার নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। নিহতের ৭ মাস বয়সি একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, বিয়ের প্রায় দুই বছর ধরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে ঈদের নামাজের আগ মুহূর্তে ফাঁকা শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী অ্যামি আক্তারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন হাসিবুল ইসলাম। এর পরে কৌশলে পালিয়ে যান।
গত ৪ জুন বুধবার লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের হাজরানিয়া গ্রামে মোবাইলে কে কল করেছে- জানতে চাওয়ায় স্বামী দুলু মিয়াকে কাঁচির আঘাতে হত্যা করেছেন স্ত্রী মনি বেগম।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় দুলু মিয়া স্ত্রী মনি বেগমকে মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখেন। স্ত্রী কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল, তা জানতে চান দুলু মিয়া। পরে স্ত্রী ফোন নম্বরটি ডিলিট (মুছে ফেলা) করে দিলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে দুলু মিয়া খাটের ওপর পড়ে গেলে স্ত্রী মনি বেগম সেলাই মেশিনের পাশ থেকে কাঁচি নিয়ে স্বামীর বাঁ কাঁধের নিচে ও বুকের সংযোগস্থলে আঘাত করতে থাকেন। এতে দুলু মিয়া মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তাকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা নেওয়ার পথে পরের দিন ৫ জুন সকাল ৬টার দিকে মারা যান দুলু মিয়া।
গত ৩ জুন মঙ্গলবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঠালবাড়ী গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন আপন চাচা। এ ছাড়া নিহত দুই বোনের মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
গত ২৪ মে শনিবার যশোর শহরের মণিহার এলাকায় মাদকের টাকা না পেয়ে রাতভর মা সুলতানা খালেদা খানম সিদ্দিকাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পালিত ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ছেলে শেখ শামসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।