বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

আবু সাঈদের মৃত্যু স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়েছিল আন্দোলন

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

আবু সাঈদের মৃত্যু স্ফুলিঙ্গের  মতো ছড়িয়েছিল আন্দোলন

২০২৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যভাগ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তখন উত্তাল সারা দেশ। দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমেছেন পথে। বাদ যায়নি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ আর আন্দোলন দমাতে হামলা করে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সদস্যরা। প্রশাসনের উপরিমহলের নির্দেশে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতেও দ্বিধা করেনি। গত বছরের আজকের দিনে সারা দেশের মতো রংপুরেও নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলিতে বুক পেতে দেয় বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। পুলিশের গুলির সামনে দু’হাত উঁচিয়ে দাঁড়ানো সাহস আর তারুণ্যের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু সাঈদের মৃত্যু এ অন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। আবু সাঈদ ছাড়াও ওইদিন সারা দেশে অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিরস্ত্র আবু সাঈদের বুকে পুলিশের একের পর এক গুলি নাড়া দেয় বাংলার মানুষের বিবেককে। এসব হত্যাকা- দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত করে।

আজ ১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলো। সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন আবু সাঈদ, তাতে লাখো ছাত্র-জনতা পরিণত হয়েছিল এক-একটি জ্বলন্ত মশালে। আবু সাইদের মৃত্যু কোটাবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে প্রাণসঞ্চার করেছিল, যার সঙ্গে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ‘নূর হোসেন’-এর  মিল পাওয়া যায়। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগানে বুক ও পিঠ ঢাকা নূর হোসেনের বিখ্যাত সেই ছবিটি তার মৃত্যুর পর এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে। তেমনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের উদ্যত রাইফেলের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে আবু সাঈদ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ছবিটিও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতীকরূপে আবির্ভূত হয়েছিল। 

এদিকে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ও ওয়াসিমসহ অন্য শহীদদের কেন জাতীয় বীর ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়াও বর্তমানে আলোচিত এই হত্যার মামলার বিচারকাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান। এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক পুলিশপ্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেক ভিআইপি নেতৃবৃদ্ধ এই মামলার আসামি। 

আবু সাঈদের মৃত্যুর মাধ্যমে গত বছর আজকের দিনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন আবারও দেশব্যাপী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পাশাপাশি পুলিশও সেদিন ছিল মারমুখী। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করে। একইসঙ্গে দেশের সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই বিকেলে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্বে ছিলেন আবু সাঈদ। পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আবু সাঈদ দুই হাত মেলে বুক পেতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন। সেই মুহূর্তে রাস্তার বিপরীত পাশের মাত্র ১৫ মিটার দূর থেকে অন্তত দুই পুলিশ সদস্য শটগান থেকে সরাসরি তার ওপর গুলি চালান। আবু সাঈদের হত্যাকা-ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা দেশজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হন। তাদের একজন হলেন বলাকা সিনেমা হলের সামনে অস্থায়ী দোকানের হকার মো. শাহজাহান (২৪)। আরেকজন নীলফামারী সদরের বাসিন্দা সাবুজ আলী (২৫)।

এদিন শিক্ষার্থীরা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েন্সল্যাব, প্রগতি সরণি, শান্তিনগর, বাড্ডা, মতিঝিল শাপলা চত্বর, তাঁতীবাজার, উত্তরা ও বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। মহাখালীতে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কেও অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথক স্থানে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেন। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চরম সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ঢাকা কলেজ ও সায়েন্সল্যাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নগরীর চানখারপুল, পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, প্রগতি সরণি, ভাটারা, মিরপুর-১০ এবং ফার্মগেট এলাকাতেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। 

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রামেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী। নিহতরা হলেনÑ চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের  নেতা ওয়াসিম আকরাম (২৪), ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ (২৪) এবং ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মো. ফারুক (৩২)।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ওই দিনের দেশব্যাপী সহিংসতাকে ‘রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট দমন-পীড়ন’ হিসেবে আখ্যা দেন। আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ১৭ জুলাই দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৬ জুলাই রাতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও গাজীপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ১৭ জুলাই সকাল থেকে নিজ নিজ ইউনিট অফিসে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দলটি ঘোষণা দেয়, তারা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মোকাবিলা করবে। 

এদিকে, সরকার এদিনই কোটা বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দাখিল করে। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে জমা দেওয়া এ আবেদনে বলা হয়, কোটা রাখা বা না রাখার বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এতে আদালতের হস্তক্ষেপ চলতে পারে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এদিন দেশের সাধারণ মানুষ ও সব রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ছয়জন নিহতের ঘটনায় পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা জানায় পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনগুলো হলোÑ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এবং সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)।

এ ছাড়া দেশের অন্তত ১১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ১৯৯০ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারাও এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
আজ রাষ্ট্রীয় শোক:  ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উপলক্ষে আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় শোক পালন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
এতে বলা হয়, সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উপলক্ষে বুধবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে। এদিন শহিদদের মাগফেরাতের জন্য বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!