গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ, উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে ব্লকড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে জনভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে ব্লকড কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এরপর সারা দেশের বিভিন্ন স্থান অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা।
কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর নেতাকর্মীরা সড়ক ছেড়ে যান। হামলার প্রতিবাদে একই সময়ে রাজধানীর উত্তরা, বরিশালের পৃথক-পৃথক স্থানের মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করা হয়।
রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ছাত্র ও সাধারণ জনতা। উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউজ বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়েন শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এ সময় তাদের গোপালগঞ্জের হামলার বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছেন। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ‘ব্লকড’ কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে পদ্মা সেতু এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য ব্লকড কর্মসূচি পালন করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রবেশকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফেসবুকে পদ্মা সেতু ব্লকড কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য ও সমন্বয়ক ইব্রাহীম নীরব। ৫টা ২০ মিনিটের দিকে শুরু করেন ব্লকড কর্মসূচি। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে পদ্মা সেতু এলাকায় অবস্থান নেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জিয়াউল হায়দার জানান, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ, পদ্মা উত্তর থানা এবং ডিবি পুলিশের সদস্যরা সেতু এলাকায় রয়েছেন।
একই প্রতিবাদে বরিশালের পৃথক স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক স্থানে এই কর্মসূচি পালন করেন। এর ফলে বরিশাল-ঢাকা ও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এ ছাড়া সদর উপজেলার কর্ণকাঠি এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-ভোলা-বরগুনা রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র-জনতা। এ সময় মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে অবস্থান নেন তারা। তখন ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী দুই লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মাদারীপুর শহরের লেকপাড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সব অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকেই হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা।