মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পারভজে খান

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:২০ এএম

এফ-৭ সিরিজের বিমানে আগেও ঘটেছিল দুর্ঘটনা কি এর বৈশিষ্ট্য

পারভজে খান

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:২০ এএম

এফ-৭ সিরিজের বিমানে আগেও ঘটেছিল দুর্ঘটনা কি এর বৈশিষ্ট্য

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জে-৭ সিরিজের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলো। গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। আছড়ে পড়ে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে। ওই সময় ভবনটিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী অবস্থান করছিল। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলটসহ অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী। আরও অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। অনেকে কাতরাচ্ছে দগ্ধ হয়ে। যেসব হাসপাতালে দগ্ধরা চিকিৎসা নিচ্ছেন সেসব হাসপাতালের চারপাশে কান্না আর আহাজারির রোল পড়ে গেছে। সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার উদাহরণ আর নেই। কাকে দায়ী করবেন এই দুর্ঘটনার জন্য?

বাংলাদেশে জে-৭ মডেলের বিমানের দুর্ঘটনা কি এটাই প্রথম? না। চতুর্থ দুর্ঘটনা এটি। এর আগের তিনটির মধ্যে প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল। সেদিন বিমানবাহিনীর এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িপাড়া গ্রামে বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান নিহত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুরে ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন। এরপর ২০১৫ সালের ২৯ জুন চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিহত হন। তবে সেগুলোয় এ ধরনের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, যেটা এবার ঘটল। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, পাকিস্তান, ইরান, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়াতেও এই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের নজির রয়েছে। আরেক হিসাবে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে দেশে অন্তত ছয়বার বিমানবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বিমানও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

গতকাল মাইলস্টোন কলেজে বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই বিমানটি মূলত চীনের তৈরি চেংদু জে-৭ সিরিজের একটি যুদ্ধবিমান। এর প্রস্তুতকারক চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে জে-৭ সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক মডেলের যুদ্ধবিমান সরবরাহের পর চীন এই সিরিজের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কেন তারা এটির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবটাও খুঁজে দেখা দরকার বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে।  

বিমানটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, এফ-৭ বিজিআই (যেখানে আই বলতে ইমপ্রুভড বা আগের ভার্সনের চেয়ে উন্নত বোঝানো হয়) যুদ্ধবিমানটি মূলত এফ-৭ বিজির উন্নত রূপ, যার মূল ভার্সন জে-৭ জি। এই এফ-৭ বিজিআই মূলত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য একটি সাশ্রয়ী এবং বহু ভূমিকার যুদ্ধবিমান হিসেবে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এফ-৭ বিজিআই মূলত একটি তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। তবে কিছু আধুনিক বৈশিষ্ট্য এটিকে চতুর্থ প্রজন্মের বিমানের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। 

এফ-৭ বিজির তুলনায় এফ-৭ বিজিআইয়ের বেশকিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ার মতো। যেমন এফ-৭ বিজিআইতে তিনটি মাল্টি-ফাংশনাল ডিসপ্লে এবং শক্তিশালী ফায়ার কন্ট্রোল রাডার আছে। এটি আকাশ থেকে আকাশে স্বল্পপাল্লার ইনফ্রারড হোমিং মিসাইল এবং লেজার গাইডেড ও জিপিএস গাইডেড বোমা দিয়ে স্থলভাগে আক্রমণে সক্ষম। এই যুদ্ধবিমানটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের বেশির ভাগ সংস্করণের চেয়ে বিশ্লেষকেরা অধিক কৌশলী বলে মনে করলেও তাদের ভাষ্যÑ এটি কয়েক দশক পুরোনো ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তাই আকাশে এ ধরনের যুদ্ধবিমানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি এর কার্যক্ষমতা আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ সীমিত বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে এক স্কোয়াড জোন অর্থাৎ ১৬টি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে, যার সরবরাহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ২০১৩ সালে। এই যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের মোট মূল্য এক হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা বলে জানা যায়। যদিও শুধু এফ-৭ বিজিআই বিমানের নির্দিষ্ট খরচ আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্তমানে জেএফ-৭ থান্ডার বা জে-১০ সি এর মতো নতুন যুদ্ধবিমান কেনার কথা বিবেচনা করছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, এফ-৭ সিরিজকে সম্ভবত সামনের সারির যুদ্ধ ভূমিকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে অদূর ভবিষ্যতে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ৩৬টি এফ-৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই এফ-৭ বিজিআই ভেরিয়েন্ট। তবে এফ-৭ এমবি এবং এফটি-৭ ভেরিয়েন্টও রয়েছে। তবে মোট ফাইটার ভেরিয়েন্ট ৩৬টি।

লাইটওয়েট মাল্টিরোল ফাইটার ধরনের এই যুদ্ধবিমানগুলোর গতি সাধারণত মাক ২ দশমিক ২, বা শব্দের গতির অন্তত ২ দশমিক ২ গুণ। এগুলোয় আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, লেজার-গাইডেড বোমা, জিপিএস-গাইডেড বোমা এবং বাড়তি জ্বালানি ট্যাংক ও অস্ত্র বহনের জন্য পাঁচটি হার্ডপয়েন্ট রয়েছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো ১ হাজার ৫০০ কেজির মতো ভার বহন করতে পারে।

এ ধরনের যুদ্ধবিমানের ককপিটে একজনমাত্র পাইলট বসতে পারেন। ককপিট সম্পূর্ণ কাচের। এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা হয়েছে, কেএলজে-৬ এফ রাডার। এই যুদ্ধবিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মিটার বা ৫৭ হাজার ৪২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, বেশির ভাগ রাশিয়ার বিগ-২১ এবং অন্যান্য সমসাময়িক অনেক যুদ্ধবিমানের চেয়ে এটি বেশি দ্রুত ম্যানুভার বা দিক পরিবর্তনে সক্ষম। এর পাল্লা কম-বেশি ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।

চেংদু এফ-৭ মূলত রাশিয়ার মিগ-২১ বিমানের লাইসেন্সড সংস্করণ। এফ-৭ সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলো পুরোনো হলেও, এটি এখনো বেশকিছু দেশের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি পুরোনো মডেলের হলেও এটিকে ‘ভয়াবহ’ বলা যায় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। 

চেংদু এফ-৭ (এফ-৭) বিমান সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।এর উৎপত্তি: এটি রাশিয়ার মিগ-২১ বিমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এবং চীন এটি নিজেদের লাইসেন্সের অধীনে তৈরি করেছে।
প্রকারভেদ: এফ-৭ এর বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে, যেমন এফ-৭ বিজি, এফ-৭ এম ইত্যাদি।
ব্যবহার: এটি মূলত একটি ইন্টারসেপ্টর বিমান, যার অর্থ হলো এটি দ্রুত শত্রু বিমানকে বাধা দিতে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম।

সীমাবদ্ধতা: এফ-৭ বিমানটি পুরোনো মডেলের হওয়ায় এতে আধুনিক যুদ্ধবিমানের মতো উন্নত প্রযুক্তি এবং বৈশিষ্ট্য নেই। এ ছাড়াও এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নত করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
দুর্ঘটনা: অতীতে এফ-৭ বিমানের কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে, তবে এটি বিমানটির সামগ্রিক নির্ভরযোগ্যতাকে নির্দেশ করে না। যেকোনো বিমান দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। তবে এফ-৭ এর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!