মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত নিহত ২০, আহত দেড় শতাধিক

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত  নিহত ২০, আহত দেড় শতাধিক

রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণকালে বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার দুপুরের মর্মান্তিক এ ঘটনায় রাতে সর্বশেষ খবরে বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭১ জন।

হতাহতের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। বিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এ ঘটনায় এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মর্মান্তিক এ ঘটনায় দেশজুড়ে এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি করেছে। ঘটনাস্থলের ভয়াবহতা, আগুনে দগ্ধ শিশুর কান্না ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ঘটনার সময় মাইলস্টোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একাংশের ক্লাস শেষ হয়। এরপরই বিমান দুঘর্টনার আগুনে তাদের অনেকের জীবন প্রদীপও নিভে যায়। 

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার কারণ জানতে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের মরদেহ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাকিদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করে পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। যদি প্রয়োজন হয়, আহত শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানোর কথাও বলেছেন তিনি।

এদিকে মাইলস্টোন কলেজের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেড ক্রিসেন্ট, উত্তরার বিভিন্ন থানা-পুলিশ। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন। আহতদের কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটাল, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় (যার বিস্তারিত তদন্তসাপেক্ষে জানানো হবে)। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ওই বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এবং কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। 
এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছেন। আহত সবাইকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হয়। এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং আহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর পরই সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চলায় এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করে। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য এরই মধ্যে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ভবনটির প্রধান ফটকে সবসময় স্কুল স্টাফরা বসে থাকেন, সিঁড়ির নিচে স্টাফদের কক্ষ রয়েছে। বিমানটি প্রধান ফটক ভেঙে কক্ষের ভেতরে ঢুকে যায়। আগুনের তীব্রতায় পুরো ভবন কালচে হয়ে গেছে। ভবনের সামনের গাছগুলো পুড়ে গেছে, উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সেনাসদস্য আহতও হয়েছেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম জানান, সে বেলা ১টা ১০ মিনিটের পর বিকট শব্দ শুনতে পায়। এ সময় তারা কলেজটির চার নম্বর ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে ছিল। দৌড়ে এসে দেখতে পায়, হায়দার আলী ভবনে আগুন জ্বলছে।

তিনি জানান, তারা কয়েকজন মিলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল, তারা কাছেও যেতে পারেনি। এ সময় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়ে এলেও কিছু শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে।

এই শিক্ষার্থী বলেন, বিমানটি ভবনের প্রধান ফটকের ভেতর ঢুকে যাওয়ায় ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা (বেশির ভাগ) আর বের হতে পারেনি। কারণ, ভবনটির চারপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো। তাই নিচে যারা ছিল, তারা আর বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস আসার পর আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে ও ছাদে মই দিয়ে উঠে তাদের উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক শিক্ষার্থী ইমাম বলেন, ভবনটিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। স্কুল বেলা ১টার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। আজও ছুটি হয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থী বের হয়ে গিয়েছিল, আর কিছু শিক্ষার্থী বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। অনেকে আবার স্যারদের কাছে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
জানা গেছে, বিমানটি যে ভবনে বিধ্বস্ত হয়, সেটিতে মূলত প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম ছিল। বিমান আছড়ে পড়ার সময় শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই অবস্থান করছিল। স্কুল ছুটি হওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগেই ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা। শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতার বিবরণ।
এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিমানটা মাঠের পাশ দিয়ে নিচু হয়ে উড়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ পেছন দিক থেকে ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয় এবং আগুন লেগে যায়। আমরা পাশেই কাজ করছিলাম। দৌড়ে এসে দেখি আগুন জ্বলছে, শিশুরা জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেকে আগুনের তাপে আর বের হতে পারেনি।’

তিনি আরও জানান, ‘ফায়ার সার্ভিস দ্রুত চলে আসে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এসে উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দেন। অনেকে দগ্ধ শিশুদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।’
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রাইমারি সেকশনের ভবনেই বিমানটা বিধ্বস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের পর আশপাশের দেয়ালও ভেঙে পড়ে গেছে। অনেক প্রাইমারি স্টুডেন্ট আগুনে পুড়ে গেছে। সেখানে ওয়ান থেকে ফাইভ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস চলত। ছুটির সময় থাকায় অনেক শিশু গেটের সামনে ছিল, তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ।’

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার বলেন, ‘একটা ফাইটার প্লেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস- এখানে ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছেলেপেলেরা পড়াশোনা করে, ঠিক সেখানে প্লেনটা পড়ছে ভাই। আমাদের ছোট ভাইয়েরা ছিল, সবাই ছিল ভাই। ওইখানে বলতে গেলে সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে। আমরা ভেতরে গেছিলাম, আগুনের কারণে কাউকে বের করিতে পারি নাই। খুব খারাপ অবস্থা।’ একাদশের শিক্ষার্থী আজমাইন বলেন, ক্লাসে ছিলেন, শব্দ পেয়ে নিচে নেমে দেখেন আগুন।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলেন, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হইছে। আমরা কেউ বুঝতে পারিনি প্রথমে। তারপর হঠাৎ যখন সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল- তারপর স্যার এলেন। ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিমানের কিছু অংশ হয়তো ব্লাস্ট হইছে। বিল্ডিংয়ের সামনে পড়ছে, যার কারণে পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরায়ে গেছে। তারপর আমরা বের হইছি। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস। পাশেই ফায়ার সার্ভিস আর পাশেই আর্মি ক্যাম্পও ছিল। যার কারণে সবাই দ্রুত চলে আসছে। আগুন নিভাইতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদের বের করতে অনেক সময় লাগে।

গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মাইলস্টোনের দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, মাইলস্টোনের দোতলা স্কুল ভবনে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে। এ দোতলা ভবনের প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস। দ্বিতীয়তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। তার সঙ্গে ছিল প্রিন্সিপালের (অধ্যক্ষের) অফিস মিটিং রুম। একটা কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। ক্র্যাশ ল্যান্ডিং যখন হয়, তখন স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় যে জায়গায় টিচার্স রুমের সঙ্গে যে ল্যান্ডিং হয়, আঘাত করে, ওই জায়গায় বাচ্চাকাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিল।’

ফায়ার ফার্ভিস আনুমানিক বেলা ১টা ৮ মিনিটে দুর্ঘটনার খবর পায় জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘দ্রুত আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের মোট ৯টা ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ করে।’ 
হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমরা ১৯ জনের ডেড বডি উদ্ধার করেছি। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে আছে। এখানে সেনাবাহিনী এবং আমাদের ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ অন্য সবাই মিলে আমাদের সহযোগিতা করেছে।’ 
কিছু বোঝার আগেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আগুন: ভয়াবহ আগুন থেকে বেঁচে ফেরা এক শিক্ষক বলেছেন, ঘটনাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে কারোরই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিল না। বিমানটি যে ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে, সেই ভবনে থাকা শিক্ষার্থীরা ছুটির ঘণ্টা পড়ার পর ক্লাস থেকে বের হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল।

ওই শিক্ষক বলেন, এটা ঠিক স্কুল ছুটির সময় ছিল। শিক্ষার্থীরা গেটে অপেক্ষা করছিল। কী ঘটেছে, তা বোঝার আগেই চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ল। মুহূর্তেই দৃষ্টিসীমা কমে এলো। আমি শুধু আগুন দেখতে পাচ্ছিলাম- তারপর ধোঁয়া।’
নিজের আঘাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিক্ষক বলেন, ‘আমার হাত পুড়ে গিয়েছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। আমার মুখ ও কান ঝলসে গেছে।’ এ অবস্থায় ওই শিক্ষক দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে একটি ভেজা কাপড় নিয়ে এসে নিজের নাক ঢাকেন। তিনি বলেন, ‘কাছে থাকা বাচ্চাদেরও আমি একই কাজ করতে বললাম। তাদের অনেকের শার্টে ততক্ষণে আগুন ধরে গিয়েছিল। আমি তাদের নিচু হয়ে থাকতে এবং মুখ ঢাকতে বললাম।’
ওই শিক্ষকের সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থী সেখান থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়। তাদের ভেতর গুরুতর দগ্ধ একজনকে সিএমএইচের বার্ন ইউনিটে রেফার করা হয়।

শনাক্ত মরদেহ দ্রুত পরিবারকে হস্তান্তর: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের মৃতদেহ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাকিদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করে পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসা কাজ নির্বিঘেœ করার স্বার্থে হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হবে: আসিফ নজরুল: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। যদি প্রয়োজন হয়, আহত শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানোর কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল বিকেলে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের খোঁজখবর নিতে এসে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। 

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে জানিয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে যত কিছু দরকার তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তারপরে যদি প্রয়োজন হয় বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনবেন।’ তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা পুনর্বাসনে কোনোরকম আমাদের ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু কোনো কিছুর বিনিময়েও আমরা আজকে যা হারিয়েছি, সেটা শোক পূরণ করার মতো না। প্রধান উপদেষ্টা বারবার খোঁজ নিচ্ছেন। যারা আহত অবস্থায় আছেন, যারা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন তাদের পাশে আমরা সবাই এসে দাঁড়াব। তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এই বিয়োগান্তক ঘটনা, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেন ঘটল অবশ্যই আমরা তদন্ত করে দেখব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।’ এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান ৭০ জনের বেশি আহত শিক্ষার্থী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য দিয়েছেন। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!