ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

বললেন মির্জা ফখরুল

বিদেশ থেকে মানুষ ভাড়া করে এনে দেশ চালানো যায় না

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০১:০৩ এএম

বিদেশ থেকে কয়েকজনকে ভাড়া করে নিয়ে এসে দেশ চালানো যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ভাড়া করা লোকদের দিয়ে দেশ চালানো যায় না। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।

বিএনপির নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, নির্বাচন কেন চাই সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে? কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কী দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ সরল কথা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের (পিআর) নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পিআর পদ্ধতির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ির ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই।
তিনি আরও বলেন, জোর গলায় বলছে যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। আমাদের সাধারণ মানুষ তো বোঝেই না যে, আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যাই হোক, সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি, কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি। 

তিনি বলেন, এ দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায় তাদের কাজগুলো করার জন্য, একজন নেতৃত্ব খুঁজে সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এ কারণেই বলেছি যে, নি¤œ কক্ষের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।
সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন এটা (সংস্কার) রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন, যে কজন লোক, সংস্কার যারা করছেন তারা কয়েকটি বৈঠক করে সংস্কারের কিছু বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন আর সংস্কার হয়ে গেল সেইভাবে সংস্কার হয় না। সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে, যাতে করে সে ঘুষ না খায়।

আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আমাদের যে আমলাতন্ত্র, এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা। এটা একটা নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজিটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার অর্থাৎ, মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সেই বিষয়গুলো করতে হবে।
দেশে ক্রান্তিকাল চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি আমরা। বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ সংকটে উপস্থিত হয়েছে, আমরা যে এখন একটা রাজনৈতিক শূন্যতা এবং অর্থনৈতিক বিরূপ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে তাকে নিরূপণ করার ব্যাপারটা।

জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম, রুহুল আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আগে ঘুষ দিতে হতো ১ লাখ, এখন দিতে হয় ৫ লাখ টাকা স্বৈরাচার পতনের পরেও দেশের দুর্নীতির পরিমাণ বেড়েছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গতকাল এক বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি বলছিলেন, আগে ঘুষ দিতে হতো ১ লাখ টাকা, এখন দিতে হয় ৫ লাখ টাকা। 

গতকাল ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান রচিত ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’ শীর্ষক বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোথাও কোনো সুশাসন নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় লাগবে। এ জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এ জন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।

গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখা দরকার যে, রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।