জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ মোট ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে অনুমোদন পায়নি আলোচিত ‘জুলাই শহিদদের আবাসন প্রকল্প’। ‘৩৬ জুলাই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প’র মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৬১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
জুলাই-২০২৫ থেকে জুন-২০২৭ নাগাদ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। এই প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা অবশ্য এই প্রকল্প বাদ দিতে যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, প্রকল্পটির যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া উচিত। জুলাই যোদ্ধাদের সব প্রকল্প এক জায়গায় এনে সমন্বয় করা উচিত।’
গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সভায় ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সভায় অনুমোদিত ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন, ৪টি সংশোধিত এবং ২টি কেবল মেয়াদ বাড়ানোর প্রকল্প। প্রকল্পগুলোতে সরকারি অর্থায়ন ৮ হাজার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। সভায় বিআরটি প্রকল্পটির ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিআরটি প্রকল্পের সমালোচনা করে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিআরটি প্রকল্পটিতে ভুল নকশার পরিমাণ চিন্তারও বাইরে। যারা এ প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেছিলেন তাদের বাংলাদেশের আঞ্চলিকতা বোঝা উচিত। দানবীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিআরটি প্রকল্পটি দানবীয় ও অপরিকল্পিত। কোথাও ওপর দিয়ে গেছে, কোথাও নিচে গেছে। এতে লিফট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাসাবাড়ির লিফটই তো কিছুদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়। এটি তো পাবলিক চলার লিফট। যারা এর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত, যারা নকশা করেছেন এবং যারা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেনÑ সব বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিআরটি প্রকল্পটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার যৌথ অর্থায়নে কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এ ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। নানা ধাপে ব্যয় বাড়িয়ে এটি এখন ৬ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকায় ব্যয় প্রাক্কলন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল রোববারের একনেকে প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু একনেক সেটি অনুমোদন করেনি।
একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন ও কোস্টগার্ডের জন্য লজিস্টিক সুবিধা গড়ে তোলা। এ ছাড়া গ্রামীণ স্যানিটেশন, বহদ্দারহাট খাল খনন, রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ, মিরপুর সেনানিবাসে অফিসার্স মেস নির্মাণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নও প্রকল্প তালিকায় রয়েছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর সম্প্রসারণ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কন্দাল ফসল গবেষণা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পও এদিন অনুমোদিত হয়। এ ছাড়া সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে অনুমোদিত ১৮টি প্রকল্পের বিস্তারিত একনেক সদস্যদের অবহিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে: গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন, হাতি সংরক্ষণ, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ঢাকা উত্তর ও রাজশাহী নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নসহ আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
সভায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একনেক সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।