ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

ছবিতে ছেলের অস্তিত্ব খোঁজেন মা-বাবা

শেখ মাহদী, গোপালপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:২৯ এএম

বুকে বড় আশা নিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের যুবক হৃদয় হোসেন (২১)। পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারে সহায়তা করতেন।

কিন্তু গত বছর ৫ আগস্ট এক রাজনৈতিক বিজয় মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান এই তরুণ। গুলির পর মরদেহ গুম করে পুলিশ। আজও মেলেনি সেই মরদেহ। এক বছর পেরিয়ে গেলেও ছেলের হাড়-গোড়ও ফেরত পাননি বাবা-মা।

হৃদয়ের মা রেহানা বেগমের হৃদয়বিদারক আহাজারি, ‘আমরা কোনো বিচার চাই না, শুধু ছেলের হাড়-গোড় হলেও ফেরত চাই। এক টুকরো হাড় পেলেও বাড়ির উঠানে কবর দিতে পারতাম।’

জানা যায়, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর পর হৃদয়ের মরদেহ গুম করে ফেলার অভিযোগ ওঠে। হৃদয়ের নাম এখনো জুলাই শহিদদের তালিকায় ওঠেনি। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি তারা। একটি বছর শুধু বুকভরা অপেক্ষা আর অশ্রু ঝরিয়েই পার করেছেন হৃদয়ের পরিবার।

হৃদয়ের বড় বোন জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই শহিদের মর্যাদা পায়নি, কোনো স্বীকৃতি পায়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

এদিকে প্রায় এক বছর পর গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কড্ডা ব্রিজ এলাকার তুরাগ নদীতে হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলে এ তল্লাশি। অভিযানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কমিটির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তে জানা গেছে, ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে এক বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন হৃদয়। সেখান থেকে তাকে আটকের পর মারধর করে পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে তার মরদেহ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তুরাগ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানায়, মামলায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে হৃদয়ের মরদেহ নদীতে ফেলার কাজে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রহিম (২৭) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গাজীপুর ডিবি উত্তর বিভাগের ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রহিম আদালতে বলেছেন, পুলিশের নির্দেশে তিনি হৃদয়ের মরদেহ তুরাগ নদীতে ফেলে দেন। তার দেখানো স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই মরদেহ উদ্ধার সম্ভব হবে।’

হৃদয়ের বাবা মিয়া বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমরা কীভাবে বাঁচব! শুধু এক টুকরো হাড় পেলেও তাকে কবর দিয়ে শান্তি পেতাম।’

হৃদয়ের মা-বাবা, ভাইবোনের একটাই দাবি হৃদয় যেন শহিদের মর্যাদা পায়, হত্যাকারীদের বিচার হোক এবং পরিবার যেন সামান্য হলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সহানুভূতি পায়।