আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে দেশে উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া না দিতে পারে, সে জন্য নারীসমাজকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া দরকার, তেমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যাতে কোনোভাবেই আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এ ব্যাপারে বিশেষ করে নারীসমাজকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। সতর্ক এবং সজাগ থাকার জন্য আমি সমগ্র বাংলাদেশের মা-বোনদের আহ্বান জানাই।
দেশের গণতন্ত্রকামী জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আসুন, নারী-পুরুষ, শিশু, ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্য শহিদদের কাক্সিক্ষত একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। সবার জন্য একটি নিরাপদ, একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান অভিযাত্রায় অতীতের মতো আগামী দিনেও আমরা আমাদের মা-বোনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমর্থন দৃঢভাবে আশা করি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আমার মা-ও তার এক সন্তানকে (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন আপনাদেরই মতো। বহু স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়েছে, বোন তার ভাইকে হারিয়েছেন, অনেক মা বহুভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন। অনেক পরিবারের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
এ সময় নারীদের উন্নয়নে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। বিশ্বায়নের এই সময়ে নারীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরির বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশে নারীদের জন্য শিক্ষা-চাকরি-ব্যবসাসহ সব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। শুধু নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা-দীক্ষায় কমপক্ষে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি, যদি আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, নারীদের শিক্ষা দানে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে নারীর প্রতি বৈষম্য কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক টানাপোড়নকে কেন্দ্র করে পারিবারিক সহিংসতাও রোধ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। সে কারণেই সেই লক্ষ্যেই বিএনপির স্লোগান : ‘ক্ষমতায়িত নারী শক্তি, পরিবারের মুক্তি’।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নারীর অবদান শীর্ষক’ এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে নারীদের অবদানের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং পরে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা মেডেল প্রদান করে আয়োজন কমিটি।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খান রিতার সভাপতিত্বে এবং মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, তাহসিনা রুশদী লুনা, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, শহিদ পরিবারের মধ্যে সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টক শো উপস্থাপক হাসিনা আখতার বক্তব্য দেন।
আপনার মতামত লিখুন :