বিশ্ববাণিজ্যের উত্তাল সময়ে জটিল ও দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের বেড়াজাল থেকে আংশিকভাবে মুক্তি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার গতকাল শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। দীর্ঘ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো, যা রপ্তানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।
এ সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে যে বিভিন্ন দেশ মার্কিন পণ্য আমদানিতে বাধা সৃষ্টি করছে এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার জন্ম দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক হ্রাস আদায় করা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং এক বিরল কূটনৈতিক কৃতিত্ব মনে করছে বাংলাদেশ সরকার। তাই এই ঘোষণাকে বাংলাদেশ সরকার একটি বড় কৌশলগত অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে মূল্যায়ন করছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জন্য আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যভেদে ২ থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক বজায় ছিল। এখন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশসহ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দিতে হবে ২২ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত, যা গতকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে। জুন মাসে তা ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়।
‘ন্যাশনাল ট্রেড রিক্যালিব্রেশন অ্যাক্ট ২০২৫’-এর আওতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে পাল্টা শুল্কনীতি চালু করেন, তাতে ৭০টি উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে উচ্চ হারে শুল্কের মুখে পড়ে। এসব শুল্কের হার ১৯ শতাংশ থেকে শুরু করে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যদি এই হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে না পারত, তবে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ হতো বছরে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ আলোচনার মধ্য দিয়ে কমিয়ে আনতে পারাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল এক বার্তায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে আমরা গর্বের সঙ্গে অভিনন্দন জানাই, যা এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়।
অঙ্গীকারই নির্ধারণ করবে শুল্ক : ট্রাম্প প্রশাসনের বার্তা শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়ে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ঘোষণা করেন, ‘আমাদের বাণিজ্যনীতি হবে পারফরম্যান্স-ভিত্তিক। কোনো দেশ যদি মার্কিন বাজারের সুযোগ নেয়, তাকে মার্কিন কৃষক, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’
এই বার্তারই প্রতিফলন দেখা গেছে শুল্কহারে, যেখানে কোন দেশ কতটা ছাড় পেল, তা নির্ধারিত হয়েছে তাদের প্রতিশ্রুতি ও জিওস্ট্র্যাটেজিক অবস্থানের ভিত্তিতে।
বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে এসেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা গভীর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর অবস্থান একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যান্য প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্যও নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছে। সেখানে দেখা যায়, যেসব দেশ মার্কিন কৃষিপণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে এবং প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় আগ্রহ দেখিয়েছে, তাদের ওপর তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য হয়েছে। যদিও ভারত বড় অর্থনীতির দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র, তবে কৃষি ও প্রযুক্তি আমদানিতে অগ্রগতি না থাকায় তারা ১০ শতাংশ ছাড় পেয়েছে মাত্র।
শ্রীলঙ্কা আগে ৩০ শতাংশ শুল্কের মুখে ছিল, যা কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে বন্দর ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা এবং কৃষি খাতে কিছু মার্কিন বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়। ভিয়েতনামও একইভাবে ২০ শতাংশ হারে ছাড় পেয়েছে।
পাকিস্তান তাদের আগের ২৯ শতাংশ হার থেকে ১৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটি ইনিশিয়েটিভ’ এবং মাইনিং খাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বড় চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা শুল্ক হ্রাসে বড় ভূমিকা রেখেছে।
চীন এখনো চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পায়নি, তবে হোয়াইট হাউস চীনের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনায় রয়েছে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক পণ্য ও টেক্সটাইল খাতে। তবে এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়াও বাংলাদেশের মতো ১৯-২০ শতাংশ হারে শুল্ক পেয়েছে। তবে তাদের রপ্তানি প্রোফাইল অপেক্ষাকৃত ছোট, ফলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে এই রপ্তানি ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসতে পারত। ফলে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ত। ২০ শতাংশ হার বজায় থাকায় আপাতত সেই বিপর্যয় এড়ানো গেছে।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এটিই শেষ নয়। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হলো এসব প্রতিশ্রুতি কীভাবে কার্যকর হবে এবং মার্কিন বাজারের বাইরে নতুন বাজার কতটা দ্রুত তৈরি করা যায়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত প্রস্তুতি নিতে হবে। রপ্তানি কেবল এক বাজারে সীমাবদ্ধ রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান বাজারগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যেন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে ভারসাম্যহীন করে না ফেলে, এটা নিশ্চিত করাও জরুরি। মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানির প্রভাব আমাদের স্থানীয় কৃষি খাতে কতটা পড়বে, তা এখনই বিশ্লেষণ করা দরকার।
নতুন বাস্তবতায় রপ্তানি কৌশলের রূপান্তর প্রয়োজন বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, যেখানে কোনো দেশ একতরফাভাবে বাণিজ্যসুবিধা পাওয়ার আশা করতে পারে না। প্রতিশ্রুতি ও পারস্পরিক স্বার্থ ছাড়া লাভজনক বাণিজ্য সম্পর্ক আর টেকসই নয়। বাংলাদেশকে তাই এখন থেকেই দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি কৌশল রূপান্তরে মনোযোগ দিতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, শুল্ক ছাড় আদায় করা যেমন কৌশল, তেমনি এই ছাড় ধরে রাখা এবং কাজে লাগানো আরও বড় কৌশল। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন সক্ষমতা, গুণগত মান ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে মনোযোগ দিতে হবে, নয়তো এই ছাড়ও যথেষ্ট হবে না।
বড় অর্জনের পাশাপাশি বড় দায়িত্ব পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা নিঃসন্দেহে এক কূটনৈতিক অর্জন। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতা ও আলোচনার প্রস্তুতি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে এই অর্জনের প্রতিদান দিতে হবে স্বচ্ছ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনায়।
রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুললেও এখন আত্মতুষ্টির সময় নয়। বরং এই সংকট ও সমঝোতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি টেকসই, বহুমুখী ও অভিযোজনক্ষম অর্থনীতির পথে বাংলাদেশকে এগোতে হবে। তবেই এই অর্জন সত্যিকার অর্থে ফলপ্রসূ হবে।
নেপথ্য কূটনীতির যে পথে এলো অর্জন শুল্ক আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শুরুতে বিষয়টি গোপনীয় থাকলেও মার্চ মাসে প্রথম আলোচনার কথা সামনে আসে। এরপর মে ও জুনে দুটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পর চূড়ান্ত দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৩১ জুলাই ওয়াশিংটনে, যেখানে রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলে নীতিনির্ধারণী আলোচনা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনা দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন ইউএসটিআরের সিনিয়র বাণিজ্য প্রতিনিধি ড্যানিয়েল ব্রুকস, কৃষি বিভাগের উপসচিব লুইস মোরিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিশেষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অ্যানাবেল জেমস।
বাংলাদেশ আলোচনায় প্রধানত তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয় শুল্কহার কমানো, তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিশ্রুতি প্রদান।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের জন্য পর্যাপ্ত বাজার সৃষ্টি করছে না, নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতায় অনাগ্রহী এবং বাণিজ্যেও ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। আলোচনায় এই তিন ইস্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মধ্যে ছিলÑ বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার অঙ্গীকার। ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানি। মার্কিন কৃষিপণ্যে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ১১০টি পণ্যে। সন্ত্রাসবাদ ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশি দূতাবাসে একটি বাণিজ্য ডেস্ক খোলা।
শুল্ক আসলে কী?
শুল্ক হচ্ছে একটি সরকারি ফি বা কর, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বসানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই শুল্ক পরিশোধ করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থাৎ বিদেশি কোম্পানি নয়, যারা পণ্য আমদানি করছে, তাদেরই এ অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। এই অর্থ জমা পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে (অর্থ মন্ত্রণালয়ে)।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, খুচরা বিক্রেতা একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে ১০০ ডলারের পোশাক আমদানি করল। যদি ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আদেশ অনুযায়ী পোশাকের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসে, তবে আমদানিকারককে ওই পোশাকের জন্য ২০ ডলার শুল্ক দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে।
তারপর আমদানিকারক এই বাড়তি খরচ সামাল দিতে কয়েকটি পথ নিতে পারে। যেমনÑ বাংলাদেশি প্রস্তুতকারককে কম দামে পণ্য দিতে বাধ্য করতে পারে, নিজের লাভ কমিয়ে শুল্কের বোঝা নিজেই নিতে পারে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে খরচের বোঝা গ্রাহকের ওপর চাপাতে পারে কিংবা একাধিক উপায় একসঙ্গে নিতে পারে।
আসিফ নজরুল ও ফাওজুল কবির খানের ভূয়সী প্রশংসা বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যমূল্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনায় তিনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন সমালোচকদের হতাশ করে। তিনি বলেন, আল্লাহ তাকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন, যাতে তিনি দেশকে সেবা দিতে পারেন, হোক তা সরকারি বা বেসরকারি খাতে।
৩৫ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা হিসেবে দেখছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আসিফ নজরুল ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ। অ্যানাদার সাকসেস অব ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট।
চুক্তি সফল, আলাদা শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র: প্রেস সচিব যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ বর্ধিত শুল্কহার নির্ধারিত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সফল হয়েছে। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভালো। বাংলাদেশের জন্য আলাদা কোনো শর্ত আরোপ করেনি যুক্তরাষ্ট্র, বাকি দেশগুলোর মতো একই শর্ত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে।
প্রথম দিনেই ক্ষতির মুখে ভারতের পোশাকবাজার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাশং থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন। এর পরই ১ আগস্ট ভারতীয় টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর শেয়ার-মূল্য বড় ধরনের পতনের মুখে পড়েছে। গার্মেন্টস খাতে ভারতের প্রধান প্রতিযোগী বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে চলে গেল।
বাংলাদেশ আগে থেকেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানির অন্যতম বড় দেশ। নতুন এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় পোশাক প্রস্তুতকারকদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ঘোষণার পরপরই ভারতীয় টেক্সটাইল খাতের একাধিক কোম্পানির শেয়ারের দামে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটে। আপস্টকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের কেপিআর মিলসের শেয়ার ৫ শতাংশ, ওয়েলসপুন লিভিংয়ের শেয়ার ২ শতাংশ, অলোক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, পিয়ার্ল গ্লোবালের শেয়ার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, গোকূলদাস এক্সপোর্টের শেয়ার ২ দশমিক ৬ শতাংশ, কিটেক্স গার্মেন্টসের শেয়ার ৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বর্ধমান টেক্সটাইলের শেয়ার ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতের মুদ্রা ও শেয়ারবাজার কিছুটা পড়ে যায়, যদিও পতনটা বেশি ছিল না। রুপি সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ পড়ে ৮৭ দশমিক ৭৩৭৫ হয়ে যায়, পরে কিছুটা ফিরে আসে। এনএসই নিফটি ৫০ সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমে যায়।
ভারত মার্কিন পণ্য কেনা বাড়ানোর কথা ভাবলেও ট্রাম্পের অন্যতম দাবি অনুযায়ী অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনায় আগ্রহী নয়। ফেব্রুয়ারিতে মোদি যখন হোয়াইট হাউস সফরে যান, তখন ট্রাম্প ওই যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দেন। তবে মোদি সরকার ভারতেই যৌথভাবে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি তৈরি ও নকশা করতে বেশি আগ্রহী।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ করে দিতে পারে। ট্রাম্প আগেও দাবি করেছিলেন, তার বাণিজ্য চুক্তির চাপের কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মে মাসে চার দিনের সংঘাত থেমেছিল। ভারত ট্রাম্পের এই বক্তব্য অস্বীকার করে আসছে।
আপনার মতামত লিখুন :